ভারত–২ মঙ্গোলিয়া–০
(সাহাল আব্দুল সামাদ, ছাংতে)
আন্তঃ মহাদেশীয় কাপের প্রথম ম্যাচে ভারত অনায়াসে মঙ্গোলিয়াকে হারালেও একটা বড় অতৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ল। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ভারত দুই মিনিটের মধ্যে প্রথম গোল এবং পনেরো মিনিটে দ্বিতীয় গোল করার পর মনে হয়েছিল গোলের মালা পরবে মঙ্গোলিয়া। ১০১ নম্বরের বিরুদ্ধে ১৮১ নম্বরের খেলায় সেটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ইগর স্টিমাকের ছেলেরা সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বে সেই আগ্রাসন দেখাতে পারল না, যা দেখতে মাঠে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক সহ প্রায় হাজার কুড়ি দর্শক হাজির ছিলেন। এই ধরনের ম্যাচে জয়টা বড় কথা নয়< বড় কথা হল জয়ের ব্যবধান। ভারত সেই ব্যবধানটা দুয়ের বেশি বাড়াতে পারল না। এই কাঁটাটা কিন্তু সুনীলদের মনে খচ খচ করবেই।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে স্টিমাক এই দলটাকে কোচিং করছেন। হাতের তালুর মতো চেনেন ছেলেদের। কার কী ক্ষমতা, কার কী সীমাবদ্ধতা ভাল করেই জানেন ক্রোয়েশীয় কোচ। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এদিন একটু অন্যভাবে টিমটাকে সাজিয়েছিলেন। গোলে গুরপ্রীতের বদলে অমরিন্দর। চার ব্যাক হলেন নিখিল পূজারী, সন্দেশ ঝিঙ্গন, আনোয়ার আলি এবং আকাশ মিশ্র। তিন মিডিও ছিলেন অনিরুদ্ধ থাপা, আপুইয়া এবং ছাংতে। সামনের তিনজন সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিং এবং সাহাল আব্দুল সামাদ। ভাল টিম বলাই যায়। এবং শুরুতেই উদান্ত সিং একটি কর্নার আদায় করে নিলেও গোল হয়নি। তবে গোল হল একটু পরে্ই। দু মিনিটের মাথায়। ডান দিক থেকে অনিরুদ্ধ থাপার মাটি ঘেঁষা সেন্টার মঙ্গোলিয়ার গোলকিপার শুয়ে পড়ে বাঁচালেও বল চলে গেল সাহাল আন্দুল সামাদের পায়ে। আট গজের মধ্যে বল পেয়ে বাঁ পায়ে গোলে বল রাখতে তাঁর ভুল হয়নি। মঙ্গোলিয়ার ছেলেদের তেমন স্কিল নেই। উচ্চতাও বেশ কম। শুধু গোলকিপারের উচ্চতা বেশ ভাল। ছয় ফুটের কাছাকাছি। প্রথম দিকে তাঁকে একটু নড়বড়ে লাগলেও পরের দিকে মানিয়ে নিয়েছেন। বেশ কয়েকবার ভারতের মুখের গ্রাসও কেড়ে নিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর সতীর্থরা কিন্তু নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও ভারতকে তেমন ভাবে জমি ছাড়েনি। প্রাণপন দিয়ে লড়অই করেছে। ১৫ মিনিটের মাথায় অনিরুদ্ধের কর্নারে সন্দেশ ঝিঙ্গন হেড করলে বল ক্লিয়ার করেন গোলকিপার। সেই বল এসে পড়ে ছাংতের পায়ে। এবারও আট গজের মধ্য থেকে গোল করতে অসুবিধে হয়নি ছাংতের। এই সময় মনে হয়েছিল ভারত বুঝি টুঁটি চেপে ধরবে মঙ্গোলিয়ার। কিন্তু সেটা হল কোথায়? বরং আস্তে আস্তে খেলায় ফিরতে লাগল পূর্ব এশিয়ার দেশের ছেলেরা। এবং তাদের ডিফেন্সিভ সংগঠন বেশ ভাল হতে শুরু করল। এবং তাতেই খেই হারিয়ে ফেলল ভারত। সুনীল ছেত্রীকে এদিন একেবারেই ভয়ঙ্কর লাগেনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৮৪ গোলের মালিক নেহাতই সাদামাটা। সাহাল শুরুতে গোল পেয়ে গেলেও বাকি সময়টা বেশ নিষ্প্রভ। তবে বিরতির পর তাঁর একটা চমৎকার ব্যাক হিল থেকে উদান্ত গোল করার জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু বারের উপর বল উড়িয়ে দেন। পরে নেমে রোশন কুমার গোল পেয়ে যেতেন, যদি না অনিরুদ্ধ থাপার ফ্রি কিকে তাঁর হেড বারে না লাগত। পরের দিকে পরিবর্ত হিসেবে নেমে জিকসন সিং, রহিম আলি কিংবা মহেশ নাওরম সিংরা তেমন ভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারলেন না।
দিনের প্রথম ম্যাচে লেবানন ৩-১ গোলে হারাল ভানুয়াতিকে, যাদের বিরুদ্ধে ভারত খেলবে ১২ জুন। প্রথম দিনের খেলা দেখে বলা যায় ফাইনাল হবে ভারত আর লেবাননের মধ্যে। মঙ্গোলিয়াকে হারালেও ভারত মন ভরাতে পারেনি। ভানুয়াতির বিরুদ্ধে তারা কী করে তাই এখন দেখার।