বেইজিং: আন্তর্জাতিক স্তরে চীনের সঙ্গে ভারতের সংঘাত আরও বাড়ল। চীনে কর্মরত শেষ ভারতীয় সাংবাদিককে চলতি মাসের শেষের দিকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। বেইজিং ভিসার মেয়াদ বাড়ায় না বলে জুনের শেষের দিকে শেষ ভারতীয় সাংবাদিক চীন ছাড়বেন। গত সপ্তাহে চীন বলেছে, ভারতের ‘অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের’ কারণে সেখানে তাদের মাত্র একজন সাংবাদিক কাজ করছেন। এমনকি, তার ভিসার মেয়াদ এখনও বাড়ানো হয়নি। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে ভারতের শূন্য মিডিয়া উপস্থিতি থাকবে। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত-চীন। সাংবাদিকদের ‘বহিষ্কার’ নিয়ে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠছে।
চীনে কর্মরত শেষ ভারতীয় সাংবাদিক সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এই মাসে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হলে চলে যাচ্ছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২৩ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে চীনে চারজন সাংবাদিক কাজ করেছিলেন,চলতি মাসের শুরুতেও চীনে কর্মরত চারজন ভারতীয় সাংবাদিকের মধ্যে দুজনের ভিসা স্থগিত করে গত এপ্রিলেই দেশটিতে তাদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। আর গত সপ্তাহেই আরেকজন সাংবাদিককে চীন ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়-সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদক ছিলেন চীনে কর্মরত ভারতীয় সর্বশেষ সাংবাদিক। এটা স্পষ্ট চীনে আর ভারতের কোনও সাংবাদিকও থাকবেন না।
সম্প্রতি ভারতে সাংবাদিকেরা চীনে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছিল বেইজিং। তবে এ ধরনের অভিযোগকে অস্বীকার করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি দাবি করেন-শুধু চীনা সাংবাদিকরাই নন, সব বিদেশি সাংবাদিকই বাধাহীন এবং স্বাধীনভাবে ভারতে অবস্থান করে মিডিয়া কাভারেজ দিচ্ছেন। তবে ভারতীয় সাংবাদিকেরা চীনে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করে অরিন্দম বাগচি। চীনে কোনও ভারতীয় গণমাধ্যমের ব্যুরো অফিস চালাতে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়োগে চীনা কর্তৃপক্ষ বাধা দেয় বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া ভারতীয় সাংবাদিকেরা দেশটিতে নির্বিঘ্নে চলা-ফেরা করতে পারেন না বলেও তিনি দাবি করেন।
আরও পড়ুন: ভানুয়াতু ৮১ মিনিট পর্যন্ত আটকে রেখেছিল ভারতকে
এদিকে, চীনও চুপ করে থাকার নয়, ভারতীয় সাংবাদিককে বের করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত মাসেই দিল্লিতে অবস্থান করা চীনা রাষ্ট্রীয় দুটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বহিষ্কার করেছে ভারত।চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানান, বর্তমানে ভারতে তাঁর দেশের একজন মাত্র সাংবাদিক অবস্থান করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, শুধু ভারতই নয়-যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও গণমাধ্যম নিয়ে দৌরাত্ম্য চলেছ চীনের।
আন্তর্জাতিক স্তরে দুদেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এর আগেও চীন লাইন ওফ কন্ট্রোল পেরিয়ে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করেছিল। সীমান্ত বিরোধ দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বেইজিং সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করার পরে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ‘খুব কঠিন পর্যায়ের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।মন্তব্য করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘সীমান্তের অবস্থা পারস্পরিক সম্পর্কের গতি নির্ধারণ করবে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে ভারত হয়ত চায় না তাদের দেশে চীনা সাংবাদিক থাকুক এবং চীনও চায় না সেখানে ভারতীয় কোনো সাংবাদিক থাকুক। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।