সুন্দরবন: উমা, মহামায়া, দুর্গা ও গৌরীর মতো একাধিক রূপ রয়েছে মা দুর্গার। কখনও তিনি চন্ডী রূপে দেখা দেন আবার কখনও শান্তির বার্তা নিয়ে আনন্দময়ী হয়ে অবতীর্ণ হন। কিন্তু একটু অন্য আঙ্গিকে অন্য রূপে তাকে দেখে সুন্দরবনের ভেবিয়া গ্রামের মানুষ। সেখানে তিনি অবতীর্ণ হন এক অলৌকিক রূপে। বসিরহাটের সুন্দরবনের হাসনাবাদ ব্লকের ভেবিয়া গ্রামের দে বাড়ির পুজো। এবার ১১৬ তম বর্ষে পদার্পণ করল।
১৩১৪ বঙ্গাব্দে ভেবিয়ার তৎকালীন জমিদার দীননাথ দে স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের পুজো শুরু করেন। তারপর থেকে একে একে বহু বছর কেটে গিয়েছে শতাব্দী পেরিয়েছে এই পুজোর বয়স। অথচ এখনো অমলিন সেখানকার ঐতিহ্য। প্রথা অনুযায়ী মহালয়ার পরদিন প্রতিপদ থেকে দে বাড়ির চন্ডি ঘরে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পুজো শুরু হয়ে যায়। দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী ও পঞ্চমী একইভাবে পুজো হওয়ার পর ষষ্ঠীতে বাড়ির বেল গাছের নিচে বোধনতলায় মায়ের বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মৃন্ময়ী আরাধনা। অষ্টমীতে চলে মিষ্টি ভোগ বিতরণ। পুজোর সময় দে বাড়ির যে সমস্ত সদস্য যারা দেশ-বিদেশে থাকেন তারা বাড়িতে ফেরেন। এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। নদীতে নয় বাড়ির পুকুরেই বিসর্জিত হন এই দে বাড়ির দুর্গা।
আরও পড়ুন: সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে কে কী বললেন?
আগে দেবীকে ঠাকুর দালান থেকে পুকুরঘাট অবধি নিয়ে যেতেন পার্শ্ববর্তী গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। আজ সেই প্রথায় একটু ব্যাঘাত ঘটেছে। কারণ কর্মসূত্রে আদিবাসীরা এই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে কিছু আদিবাসী মানুষ আজও আসেন বিসর্জনের দিন। তাঁরাই মাকে ট্রলিতে তোলেন। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটে। অভিনব সেই যাত্রা দেখতে আশপাশের গ্রামের প্রচুর মানুষ। আর বিসর্জনের পর্ব মিটতেই রাত হলেই গ্রামের মানুষ দেখতে পান এক অদ্ভুত অবতার। ভেবিয়া গ্রামের মানুষ দে বাড়ির ঐ পুকুরেই মাকে অন্যরূপে সাদা থান পরে জলের উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে দেখেন। তাদের ধারণা মা যেন তাদেরকে ছেড়ে যেতে চান না। তাই বিসর্জনের পরেও তিনি গ্রামের মানুষকে দেখা দেন। সেই বিশ্বাস যেন আজও স্বহমহিমায় বিরাজ করছে সুন্দরবনের এই গ্রামে।
দেখুন আরও খবর: