লন্ডন: ভারতে কী চলছে আর কী চলছে না, সেটা তিনি ভালো করে জানেন। জর্জ সোরোসের (George Soros) মতো কোনও ব্যক্তিকে তা বলে দিতে লাগবে না। আর বিবিসি (BBC)-র সঙ্গে সম্প্রতি যা হয়েছে, সেটা শুধুমাত্র একটা উদাহরণ (Just an Example)। বর্তমান কেন্দ্র সরকারের আমলে ভারতে কণ্ঠস্বর দমন করা হচ্ছে (Suppression of Voice in India)। এরকম অনেক ঘটনা ঘটেছে বিগত নয় বছরে। শনিবার লন্ডনে (London) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাচক্রে এই কথা বলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Congress Leader Rahul Gandhi)। গৌতম আদানি ও আদানি গোষ্ঠী (Gautam Adani and Adani Group) সম্পর্কে তিনি বলেছেন, বিষয়টা অনেকটা “কলোনিয়াল হ্যাংওভারের (Colonial Hangover) মতো।”
গত জানুয়ারিতে ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চন (India: The Modi Question) শীর্ষক দুই পর্বের একটি ডকুসিরিজ (Docuseries) দেখিয়েছে ব্রিটিশ ব্রডাকাস্টিং কর্পোরেশন (British Broadcasting Corporation – BBC)। এই তথ্যচিত্র ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে তৈরি। তা নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। বিজেপি সরকার (BJP Government) সেই ডকুমেন্টারির বিভিন্ন ক্লিপিংস সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) থেকে তুলে নিতে বাধ্য করেছে। এমনকি বিবিসির সম্প্রচার বন্ধ করার জন্যও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। যদিও তা খারিজ করে দেয় আদালত। এই ঘটনার পরপরই ফেব্রুয়ারি মাসে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বই অফিসে আইটি হানা (IT Raids) হয় আইটি সমীক্ষার (IT Surveys) নামে। এপ্রসঙ্গে রাহুলের বক্তব্য, “যেখানে বিরোধিতা থাকে, সেখানে অজুহাতও থাকে।” গোটা দেশ জুড়ে কংগ্রেস যে ভারত জোড়ো যাত্রা (Bharat Jodo Yatra) কর্মসূচি নিয়েছিল, তার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, আওয়াজ তোলা। কারণ, দেশজুড়ে কণ্ঠস্বর দমন করা হচ্ছে। বিবিসি তার একটা উদাহরণ মাত্র। ভারতে বিগত ৯ বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: Sneha Gharami: স্বপ্ন উত্তোলনে স্নেহার দরকার ৮০ হাজার টাকা
রাহুল আরও বলেছেন, সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা একটা প্যাটার্নের অংশ। তিনি এখানে অন্য কিছু আশাও করেন না। তাঁর সাফ কথা, বিবিসি যদি কেন্দ্র সরকারের বিপক্ষে লেখা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আবার সবকিছু স্বাভাবিক (Normal) হয়ে যাবে। বিজেপি চায়, ভারত নীরব থাকুক। রাহুলের অভিযোগ, কেন্দ্র ক্ষমতাসীন দলের লক্ষ্য হল, তারা তাদের বন্ধুদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দেবে, কিন্তু দেশের জনতা নীরব থাকবে। কোনওরকম প্রতিবাদ করবে না।
কিন্তু মিডিয়াকে চুপ করানোর ঘটনা কী নতুন? এর উত্তরে রাহুলের বক্তব্য, “অবশ্যই। যে মাত্রায় এখন চলছে, এর আগে এরকম হয়নি। অনেক সময় বিপর্যয় ঘটেছে, কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের উপর পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ, যা আধুনিক ভারতে (Modern India) আগে কখনও দেখা যায়নি।”
কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা কেন আলাদা?
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, বিজেপি রথযাত্রা করেছিল। রথ (Rath) নামিয়েছিল, ওটা রাজার প্রতীক (Symbol of King)। আমাদের যাত্রা পুরোপুরি আলাদা। কোনও রথ ছিল, কারও সঙ্গে কথা বলা হয়নি, বরং মানুষ একে অপরকে আপন করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, দেশে এটা দরকার ছিল। কারণ, গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর নৃশংস আক্রমণ চলছে। মত প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষের আওয়াজকে তুলে ধরার মাধ্যম ছিল ভারত জোড়ো যাত্রা।
জর্জ সোরোস প্রসঙ্গে…
বিলিয়নিয়ার জর্জ সোরোস ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে যা হল সম্প্রতি, তা মোদির মুঠো আলগা করে দিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের চাপ তৈরি হবে এবার। এপ্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, “জর্জ সোরোসের মতামত থাকতে পারে। আমি সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে আগ্রহী নই। আমি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি, ভারতে কী হচ্ছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, শ্রী আদানি তিন বছরের মধ্যে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ৬০৯ নম্বর থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি, তাঁকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, তাঁকে শিল্পে আধিপত্য করার জায়গা দেওয়া হয়েছে। সেটা বলার জন্য, আমাদের কোনও জর্জ সোরোসের প্রয়োজন নেই। যা ঘটছে, তা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর (আদানির) খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে।”