কলকাতা: জঙ্গিরা পালাচ্ছে, পুলিশ ছুটছে…
কখনও দৌড়ে একের পর এক জঙ্গিকে ধরপাকড়, আবার কখনও গোপন ডেরার সন্ধান পেয়ে সেখান থেকে গ্রেফতার।
এই কথাগুলো শুনে মনে হতেই পারে এটা কোনও সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের স্ক্রিপ্ট, কিন্তু না…এটাই এখন কলকাতা তথা বাংলায় জঙ্গি ধরার কয়েকটি ঘটনার বিবরণ মাত্র।
আল কায়দা, লস্কর-ই তইবা, ইসলামিক স্টেট, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, জামাত-উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ কিংবা আনসারুল বাংলা, গত দু-দশকে বঙ্গের মাটিতে এই সমস্ত জঙ্গি সংগঠনের উপস্থিতি বারবার সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন: Crime Against Women: নারীদের উপর অত্যাচার বেড়েছে ৩০ শতাংশ, পড়ুন হাড়হিম করা তথ্য
পড়লে আপাত ভাবে মনে হতেই পারে কলকাতা বা বাংলা যেন জঙ্গিদের ডেরায় পরিণত হয়েছে। হয়ত হতেই পারে। কিন্তু এই জঙ্গিরা আসছে কোন জায়গা থেকে?
বাংলাতে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা পাকড়াও করার পর জঙ্গি কার্যকলাপের তথ্য উঠে আসছে সাধারণ মানুষের সামনে। তাহলে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের জীবনও কি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে না?
এবার কতগুলো ঘটনার দিকে তাকানো যাক –
* ২০০২-এর ২২ জানুয়ারি, আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গি হামলার ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছিল কলকাতাকে! যে কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজা খাটছে আফতাব আনসারি
* ২০১৪-র ২ অক্টোবর, অষ্টমীর সকালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দু’জনের। প্রকাশ্যে আসে বাংলাদেশের ‘জামাত-উল-মুজাহিদিনে’র সক্রিয়তা! সেই সঙ্গে উঠে আসে জঙ্গিদের ‘দম্পতি মডিউল’-এর কথা
* ২০১৬-র মার্চে ISIS-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আশিক আহমেদ নামে দুর্গাপুরের কাঁকসার বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রকে গ্রেফতার করে NIA
* ২০২০-র মার্চে লস্কর-ই তইবা যোগসূত্রে, উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে তানিয়া পরভিন নামে আর এক কলেজ ছাত্রীকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ
এরপর কখনও বর্ধমান, কখনও হাওড়ার বাঁকড়া, কখনও উত্তর ২৪ পরগনার শাসন, তো কখনও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ডায়মন্ডহারবার থেকে বিভিন্ন জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আর এবার ফের হাওড়া থেকে এসটিএফের জালে ধরা পড়ল সন্দেহভাজন ২ ISIS জঙ্গি।
এবার কতগুলো প্রশ্ন উঠে আসছে সেগুলো কী কী দেখে নেওয়া যাক –
১) বর্ডার পেরিয়ে জঙ্গিরা কীভাবে রাজ্যে প্রবেশ করছে?
২) কীভাবে নকল পরিচয়পত্র বানাচ্ছে, কারা জড়িত?
৩) জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ কীভাবে হচ্ছে শুধুই কি সোশ্যাল মিডিয়া নাকি কাঁটাতার পেরিয়ে কেউ বা কারা রাজ্যে প্রবেশ করছে?
৪) বর্ডার এরিয়াতে পাহারায় কী তাহলে ফাঁক আছে?
৫) বর্ডার এরিয়াতে কি তাহলে অন্য অসাধু চক্র সক্রিয় ?
তবে এটা ভুলে গেলে হবে না, দেশের জওয়ানদের জন্যই আমরা সুরক্ষিত। প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের কেউ বিভ্রান্ত করছে না তো! কিংবা ২-১ জন বা কয়েকজনের জন্য দেশের নিরাপত্তা বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ছে না তো? কারণ, রাজ্যের পুলিশ খুঁজে খুঁজে জঙ্গি দমনের কাজ করছে। সেখানে বর্ডারে গাফিলতি থাকলে ফল ভুগতে হবে সারা দেশকে।
অভিযোগ, বর্ডার এলাকায় নজরদারিতে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী, তারপরেও কেন জঙ্গির প্রবেশের ঘটনা রোখা যাচ্ছে না? সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কোথাও সিআইএসএফ, কোথাও বিএসএফ। কিন্তু তাদের নজরদারি এড়িয়ে কীভাবে ঢুকছে? আর বিএসএফ-সিআইএসএফের দায়িত্বে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যাঁর মাথায় বসে রয়েছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তারপরেও এই ধরনের ঘটনা কেন রোখা যাচ্ছে না?