সুদীপ্ত সেন: বেড়ে ওঠা জলপাইগুড়িতে, তিস্তায় বয়ে গিয়েছে বালকের ছেলেবেলা। ছোটবেলা থেকেই দেশের বিভিন্ন আইডিওলজি ও ফিলোজফিক্যাল বইপত্র পড়ার অভ্যাস জন্মেছে তাঁর। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জন্মেছে মতামত রাখার সাহস। দাদারা রাজনীতিতে নামলেন, ছেলেটি রাজনীতিতে পা না মেলালেও সদ্য ক্লাস টুয়েলভের পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এমন কিছু করতে হবে যা দিয়ে তিনি তাঁর কথা বলতে পারবেন, সেখান থেকেই শুরু। জলপাইগুড়ি ছেড়ে কলকাতা এলেন, আরও বেশি করে আকৃষ্ট হলেন সিনেমায়। তারপর একদিন পরিচালনায় হাতেখড়ি। যাঁর সম্পর্কে কথা হচ্ছে তিনি এই মুহূর্তে আলোড়ন তৈরি করেছেন। সাম্প্রতিক বিতর্কের এক দিকে যদি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ থাকে তাহলে আরেক দিকে আছেন তিনি তথা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র পরিচালক সুদীপ্ত সেন। কলকাতা টিভির সঙ্গে একান্ত ফোনালাপে জানালেন সিনেমার বিষয়-সহ আরও অনেক কথা।
প্রশ্ন: পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন নাকি আপনিও ‘রামিজের’ মতোই পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন না?
সুদীপ্ত: না, আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি না।
প্রশ্ন: আপনি অনেকগুলি ফিচার ফিল্ম করেছেন। ওটাই কি আপনার নেশা ?
সুদীপ্ত: হ্যাঁ, ক্লাস টুয়েলভের পর আমি নিজেকে ছবি বানানোর জন্যই নিয়োজিত করেছি,তারপর যতই সমস্যা আসুক না কেন আমি আর পিছন ফিরে তাকাইনি। শুরুতে আমি ডকুমেন্টারি ফিল্ম, অ্যাড ফ্লিম,কর্পোরেট ফিল্ম বানাতাম। তারপর ২০০৪ থেকে মনে হল, না আমাকে ফিচার ফিল্ম বানাতে হবে, তারপরই আমি স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করি। তারপর আমি ২০০৬-২০০৭ সালে বানালাম ‘দ্য লাস্ট মঙ্ক’। তারপর মুম্বই পাড়ি দিলাম, শুরু হল আমার যাত্রা।
প্রশ্ন: তথ্যভিত্তিক ছবিতে একটা বার্তা থাকে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ থেকে একজন পরিচালক হিসেবে কী বার্তা দিতে চাইলেন বা আপনি কেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ বানালেন ?
সুদীপ্ত: এটা এমন একটা বিষয় যেটা গোটা পৃথিবীকে আমার জানানো দরকার বলে মনে হয়েছে। এই মেয়েগুলোকে আমি নিজের চোখে দেখেছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হচ্ছিল এদের কথা আমাকে বলতেই হবে। তারপর ২০১৮ থেকেই কাজ শুরু করি, কোভিডের কারণে দু’বছর পিছিয়ে যায়। তারপর অবশেষে মুক্তি পেল ছবিটি।
প্রশ্ন: পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকের পর মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। এই পরিবর্তনটা কেন ?
সুদীপ্ত: না, পরিবর্তন নয়। আমি মনে করি, পদার্থবিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের মা। পদার্থবিজ্ঞান মানুষকে যুক্তিবাদী করে তোলে আর সেখান থেকেই আবর্তিত হয়েছে মনোবিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানের থিয়োরি ভীষণভাবে ম্যাথ এবং ফিজিক্সের ওপর নির্ভরশীল। তাই আমার কাছে এই দুটোর মধ্যে বিশেষ কিছু তফাৎ ছিল না। ফিজিক্স এবং সাইকোলজি দুটোই পড়তে আমার একইরকম মজা লাগত।
প্রশ্ন: উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কর মুক্ত করা হয়েছে। কেন কর মুক্ত করা হল বলে আপনার মনে হয় ?
সুদীপ্ত: সারা ভারতবর্ষেই ছবিটি কর মুক্ত হওয়া উচিত। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কর মুক্ত হওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ, এখন জিএসটি চলে আশায় করটা অনেক কমে গিয়েছে। আগে বিনোদনের কর ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। আগে যদি কোনও ছবিতে কর মুক্ত হত তাহলে সেটা ৪০ শতাংশ কমে যেত। এখন ১৮ শতাংশ (৯% কেন্দ্রীয় সরকারের / ৯% রাজ্য সরকারের) কর মুক্ত হয়। তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই কর মুক্ত হওয়ার ব্যাপারটাকে আমি বেশি বড় করে ভাবতে নারাজ। তবে এটা ঠিক যে সমস্ত রাজ্য কর মুক্ত করেছে তারা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে সমর্থন করেছে বলেই আমার মনে হয়।
প্রশ্ন: বাংলা ছবি তৈরি করার কথা ভাবছেন না ?
সুদীপ্ত: খুব ইচ্ছে করে বাংলায় ছবি বানাতে। বাংলা তো আমার নিজের ভাষা। এখনও আমি ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বললে আগে বাংলায় ভাবি তারপর সেটা ট্রান্সলেট করি। আসলে অনেকরকম লজিস্টিক্যাল সমস্যা বানাব তো নিশ্চয়ই।
প্রশ্ন: সুপ্রিম কোর্টের রায় এবার বাংলায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখানো হবে। এটা শুনে নিশ্চয়ই আনন্দ পেয়েছেন?
সুদীপ্ত: শুধু রায়টাই বেরোল, দেখানো তো হচ্ছে না।
প্রশ্ন: আক্ষেপ হচ্ছে নিশ্চয়ই?
সুদীপ্ত: অবশ্যই আক্ষেপ আছে। কতগুলি তুঘলকি মনোভাবাপন্নের লোকের জন্য এটা হল। ছবিটা না দেখেই বলা হল দেখানো যাবে না । এটা তিনটে পরিবারের গল্প, যাঁরা নিজেরাই এই সিনেমাতে নিজেদের কথা বলছেন, সেখানে সমস্যা থাকার তো কথা নেই। শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করতে দেশের এতো বড় একটা ঘটনা কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়। প্রথম দিকে দুঃখ হচ্ছিল, এখন শুনছি পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা অসমে বা সিকিমে গিয়ে ছবিটা দেখছেন। এরপর ওটিটিতে এলে সবাই ছবিটা দেখে ফেলবে। তাহলে ব্যান করে কী প্রমাণ করতে চাওয়া হল সেটা আমি আজও বুঝতে পারলাম না। শুধুমাত্র কিছু টাকার ক্ষতি হল আমাদের। তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের এই ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত করা একটা ক্রাইম বলেই আমি মনে করি।
প্রশ্ন: বিতর্ক কি ছবির বাজার দর বাড়িয়ে দেয়?
সুদীপ্ত: অবশ্যই বাড়িয়ে দেয়। আমি অস্বীকার করব না যে বিতর্কের জন্য আমার ছবির বাজার দর বেড়েছে। বিতর্কটা দরকার ছিল। লোকেদের বোঝার দরকার ছিল যে ইসলাম আর ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ এক নয়। যারা এটাকে এক করছে তারা দেশের শত্রু আবার ইসলামেরও শত্রু। আমরা ছবিতে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের কথা বলেছি, আমরা বলিনি যে ইসলাম মানেই সন্ত্রাস। এতে যদি কারওর সমস্যা থাকে তাহলে তারা সন্ত্রাসবাদের পক্ষেই বলে আমার মনে হয়।
প্রশ্ন: আপনি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী?
সুদীপ্ত: আমি ডান ঘেঁষাও নই আবার বাম ঘেঁষাও নই। আমি আসলে মধ্যপন্থী।
প্রশ্ন: পরবর্তী নতুন ছবির কথা ভাবছেন?
সুদীপ্ত: না এখনও ভাবিনি। মাত্র ১৫ দিন হল এই ছবিটা মুক্তি পেয়েছে, এখন একটু মজা করি, তারপর পরের ছবির কথা ভাবব।
| র্যাপিড ফায়ার |
প্রশ্ন: সত্যজিৎ রায় নাকি ঋত্বিক ঘটক ?
সুদীপ্ত: ঋত্বিক ঘটক
প্রশ্ন: কলকাতা নাকি মুম্বই?
সুদীপ্ত: কলকাতা
প্রশ্ন: ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নাকি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’?
সুদীপ্ত: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’