বাড়মের: ভোর পাঁচটা বাজতেই ২৭ বছরের হনুমান রামের (Hanuman Ram) আচমকাই ঘুম ভেঙে যায়। উঠেই দেখেন, ঘরে নেই তাঁর ২০ বছরের স্ত্রী, মমতা (Mamta) নিখোঁজ। ভোরের আলো ফুটতেই গ্রামবাসীদের নিয়ে স্ত্রীর পায়ের ছাপ (Foot Steps) ধরে ছুঁটলেন বন্ধ কুয়োর (Sealed Wells) উদ্দেশে। হনুমান জানতেন, ঠিক কোথায় যেতে পারেন তাঁর স্ত্রী (Wife)। কুয়োর কাছে এসেই তাঁর স্ত্রীর পায়ের ছাপ শেষ হনুমান বুঝতে পারলেন কী ঘটে গিয়েছে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে। মমতা আর বেঁচে নেই।
রাজস্থানের বাড়মের জেলা (Barmer District, Rajasthan)। অপরিশোধিত তেল, কয়লা এবং গ্যাসের (Oil, Coal, and Gas) জন্য বিখ্যাত, আবার রাজস্থানের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মরুভূমি জেলা (Second Largest Desert District)। ভারত-পাক সীমান্তে (India-Pakistan Border) অবস্থিত এই জেলার বাসিন্দারা এক অদ্ভূত প্রাদুর্ভাবের (Epidemic) সঙ্গে লড়ছেন। যুবতী বিবাহিত মহিলারা (Young Married Women) আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। কুয়ো, স্থানীয় ভাষা যাকে টঙ্কা (Wells or Tankas) বলা হয়, তাতে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যার করার প্রবণতা রয়েছে এখানকার মহিলাদের মধ্যে। শুধু তাই নয় শিশুসন্তানকে (Child) সঙ্গে নিয়ে কুয়োতে ঝাঁপ মারার ঘটনাও ঘটেছে। জেলা আধিকারিকদের (District Officials) বক্তব্য, গত পাঁচ বছরে এধরনের ৫০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: HealthTips | Tongue Color | জিভের রঙ দেখে বুঝুন শরীরে কোন কোন রোগ বাস বেঁধেছে
শুধু মহিলারাই (Females) নয়, পুরুষরাও (Males) আত্মহত্যা করেন। বরং মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের আত্মহত্যার ঘটনাই বেশি ঘটে। পরিসংখ্যান বলছে, বারমার জেলায় এই অনুপাত ৩৭ – ৬৩। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গোটা দেশে মহিলা ও পুরুষদের আত্মহত্যার অনুপাত ২৭.৪ – ৭২.৫। অর্থাৎ রাজস্থানের বারমার জেলায় মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার অনুপাত গোটা দেশের অনুপাতের তুলনার থেকেও বেশি।
জেলা আধিকারিকরা বলছেন, মহিলারা কুয়োতে যান। পুলিশ (Police) নজর রাখছে। কিন্তু বিষয় হলো, তাও আটকানো যাচ্ছে না কোনওভাবেই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আত্মহত্যা করতে কুয়োতে ঝাঁপ মারাকেই বেছে নিচ্ছেন মহিলারা। হনুমান রামের স্ত্রী মমতা যে কুঁয়ো ঝাঁপ মেরেছিলেন, সেটা ১২ বাই ১০ ফুট। ৯ এপ্রিল যে কুয়োতে ঝাঁপ মেরে মমতা আত্মহত্যা করেছিলেন, তা বছর দুই বছর আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন থেকে। কিন্তু তাতে একটা ছোট গর্ত ছিল। সেখান দিয়ে গলেই কুয়োতে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যা করেন মমতা। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় অনেক কসরৎ করে তাঁর মৃতদেহ তোলা হয়।
কেন এই আত্মহত্যা?
২০১৯ সাল থেকে এই ধরনের আত্মঘাতী সংক্রমণ অর্থাৎ আত্মহত্যার রোগে বাড়বাড়ন্ত বাড়মের জেলায়। এনিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত জেলা প্রশাসন সহ গোটা রাজস্থান। ২০১৯ সালে ৪৮ জন মহিলা, ২০২০ সালে ৫৪ জন মহিলা এবং ২০২১ সালে ৬৪ জন মহিলা আত্মহত্যা করেছেন, তার মধ্যে ৬০ শতাংশ কুয়োতে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, ভিন জাতে বিয়ে (Inter-Cast Marriage), বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক (Extra-Marital Affairs), বাল্য বিবাহ (Child Marriage), শ্বশুর বাড়িতে হয়রানির শিকার হওয়া (Harassment by the in-Laws) এবং গার্হস্থ্য হিংসার (Domestic Violence) জেরেই এই সমস্ত ঘটনা ঘটছে।