দমবন্ধ করা ১০১৯ টি রাত টপকে তিনি আবার তিন অঙ্কের রানে ফিরলেন। তিনি – বিরাট কোহলি। হতে পারে তাঁর একার করা ৬১ বলে ১২২ রানের চেয়ে আরও কম রান তুলে (১১১ রান) ম্যাচে হেরে গেল আফগানিস্তান। এমন এক ম্যাচ , এমন এক সময় জিতল – যা দিয়ে কোনও লাভ হল না টিম ইন্ডিয়ার। এবারের এশিয়া কাপে ভারতের বিদায় হয়ে গিয়েছিল। একইভাবে ছিটকে গিয়েছিল আফগানরাও। ভারত এশিয়া কাপ শেষ করল বড় জয় দিয়ে।
৭০ তম সেঞ্চুরি ছিল গোলাপি বলে। ৭১ তম এল সাদা বলে। মাঝের সময় নিয়ে গেল তিনটি বছর! সেই ইডেনে শেষবার, আর মরু শহরে এবার! তিন ফর্ম্যাটে খেলে গেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। রান – ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টায় তিনি একমাস স্বেচ্ছা বিশ্রামে ছিলেন মেয়ে ভামিকা আর বউ অনুষ্কার সঙ্গে। সেই একমাস ব্যাট ছুঁয়েও দেখেননি। তাই এই সেঞ্চুরি উৎসর্গ করে দিলেন – মেয়ে আর মেয়ের মাকে!
নেতা রোহিত না খেলায় বিরাট – রাহুল ওপেন করতে নেমেছিলেন। রাহুলেরও দরকার ছিল রানের ছন্দে ফেরা। কোহলির ৬১ বলে ১২২ রানের ইনিংসটির পাশে রাহুলের ৪১ বলে ৬২ ( ৬টি চার আর ২টি ছক্কা) হয়তো ছিল ফিকে, কিন্তু দলের কাছে ছিল স্বস্তির। দুই ওপেনার ১১৯ রান এনে দেন। এমন ওপেনিং কালেকশনই তো চাই।
এশিয়া কাপে একটাই প্রাপ্তি টিম ইন্ডিয়ার। তাও শেষবেলায়। কোহলির শত – কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার তিনি শতরানের ছন্দে ফিরলেন। হোক না , সেই ” শত – কথা”য় ২৮ রানের মাথায় ক্যাচ দিয়ে রেহাই পেলেন। ভাগ্যও যে সাহসীদের সঙ্গে পা ফেলে। ছ’ ওভার থেকে তাঁর ব্যাট রূপী অসি ঝনঝন করে বাজতে শুরু করেছিল। আফগান স্পিনার মুজিব-উর- রহমান দিয়ে শুরু। সেই ওভারে ২ টি চার আর একটি ছক্কায় জানান দেন, তিনি আজ অন্য মেজাজে। ক্রিজ ছেড়ে স্টেপ আউট এসে লং অফের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে মাঠের বাইরে ফেলা – ম্যাচে বিরাট আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়।
কী দাপট! ৯০ থেকে ১০০’ র গণ্ডি টপকে যেতে লাগলো মাত্র ২ টি বল! এতদিন পর সেই শতরানের দোরগোড়ায়! কোথায় অতি সতর্ক হয়ে খেলবেন, তা নয় – পেসার ফরিদ আহমেদের বলে প্রথমে স্ট্রেট ড্রাইভে চার। আর পরের বলেই ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা! সেই ডিপ মিড উইকেট, যেখানে তিনি ইনিংসের শুরুতে ক্যাচ দিয়েও জীবন ফিরে পান। তিনি কোহলি। ভয়ডরহীন এক প্রতিভা – সেটা গোটা ইনিংসে সাজিয়ে দিলেন। তাঁর এমন একটা সেঞ্চুরী এন্তার নয়া রেকর্ড গড়ে দিল। তিনি এখন টি টোয়েন্টিতে প্রথম ভারতীয় ব্যাটার যিনি ১২২ রান করে ফেললেন। পিছনে ফেললেন এই দলের নেতা রোহিতকে ( ১১৮ রান, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭১ টি সেঞ্চুরি করে ছুঁলেন রিকি পন্টিংকে। সচিনের পর তাঁরা দুই নম্বরে।
সঙ্গী ওপেনার রাহুল আউট হয়ে গেলেও কোহলির ব্যাট কিন্তু সাবধানী ক্রিকেট খেলেনি। বরঞ্চ বোলারদের উপর শাসন চালিয়ে যেতে থাকেন। আবার সূর্যকুমার যাদব ব্যর্থ হন। ঋষভ পন্থ অপরাজিত থেকে যান ১৬ বলে ২০ রানে। তাতেও ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। মুজিব সে সুযোগ দেন। কিন্তু দিনটি তো ছিল কোহলির। শেষপর্যন্ত ১২২ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। ভারত করে ২ উইকেটে ২১২ রান।
ভারতের পাহাড়প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট খোয়াতে থাকে আফগানিস্তান। যে ভুবনেশ্বর কুমার সুপার ফোরে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বেলাগাম ছিলেন রান দেওয়ার দৌড়ে , এদিন তাঁর পেস বোলিং সামল দিতে পারেননি আফগান ব্যাটাররা। প্রথম চার উইকেট নিয়ে নিলেন শুরুর ৩ ওভারে। আফগানরা ধরাশায়ী ৬ উইকেটে ২১ রানে।
আরও একটি পাঁচ উইকেট দখল করা ম্যাচ পেলেন ভুবি। টি টোয়েন্টিতে সেরা বোলিং করলেন ( ৪ রানে ৫ উইকেট)।
এই ম্যাচটি সুপার ফোরের শুরুতে ভারত পেলে কত ভালো হত! সকলের জানি, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রশিদ খানরা মোটেও এলেবেলে দল নয়। যে কোনও প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিতে পারে তারা। যেমন গ্রুপ লিগে শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশকে ফেলেছিল। কিন্তু এই ম্যাচে ভারতের রান তাড়া করতে নেমে আফগানিস্তানের ইনিংস হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ২০ ওভারে আফগানরা করে ৮ উইকেটে ১১১ রান। একটা সময় অবশ্য মনে হয়েছিল একশো রানের গণ্ডিও টপকাতে পারবে না আফগানিস্তান। কিন্তু ইব্রাহিম জারদানের (৬৪*) জন্য আফগানিস্তান একশো রানের গণ্ডি টপকে যায় ।
এই ম্যাচ ভারত প্রথম একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনেছিল। দীনেশ কার্তিক, অক্ষর প্যাটেল আর দীপক চাহার খেলেন – রোহিত, হার্দিক, চাহালরা।
মরু অভিযান শেষ। এবার দেশের মাঠে টি টোয়েন্টি দুই দলের সিরিজ। আবার হয়তো সেই তারকা ভঞ্জনা চলবে। ঘরের বাঘ হয়ে গর্জন তুলবে টিম ইন্ডিয়া। তবে সামনে সুযোগ আসছে। তাই টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের সূচী ভারতের জন্য মন্দ হয়নি। ১৭ অক্টোবর বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন। এবারের টুর্নামেন্ট আয়োজক। আর ১৯ অক্টোবর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। শক্ত দলের বিপক্ষে শক্তি পরীক্ষা করে টুর্নামেন্ট শুরু করা। কোহলির সেঞ্চুরি, কুমারের ৫ উইকেট, রাহুলের বহুদিন পর ৫০ রানের গণ্ডি টপকে যাওয়া – এশিয়া কাপের শেষে প্রাপ্তি কোচ দ্রাবিড় দলের। কিন্তু বিশ্বকাপের সেরা একাদশ এখনও বেছে উঠতে পারেননি হেড কোচ। চিন্তা এটাই।
ছবি: সৌ টুইটার।