ওয়েব ডেস্ক: আসছে পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh 2025)। চরম গ্রীষ্মের মাঝেও বাংলা নববর্ষ (Bangla New Year) প্রতিটি বাঙালির কাছে বয়ে আনে এক অনাবিল আনন্দ। গ্রাম থেকে শহর- বাংলার প্রতিটা প্রান্ত হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। আসলে পয়লা বৈশাখ হল বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন। তবে এই ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা, রহস্য, আর মতভেদ। মোঘল সম্রাট আকবর (Mughal Emperor Akbar) এবং রাজা শশাঙ্ক (King Shashanka)—দু’জনের নামই জড়িয়ে আছে বঙ্গাব্দের সূত্রপাত। তাহলে কৃতিত্ব কাকে দেওয়া হবে? কে আদতে এই ক্যালেন্ডারের জনক? চলুন সেটা একটু বিশ্লেষণ করা দেখা যাক।
একদল ঐতিহাসিকের মতে, বাংলার খাজনা ব্যবস্থাকে সুচারুভাবে চালাতে গিয়ে সম্রাট আকবরের আমলে বঙ্গাব্দের সূচনা হয়। সেই সময় চালু থাকা ইসলামিক হিজরি ক্যালেন্ডার চাঁদের অবস্থানের উপর নির্ভর করত। তাই হিজরি গণনায় তারিখগুলি বারবার পরিবর্তিত হত এবং খাজনা আদায়ে অসুবিধা হত। এই সমস্যা এড়াতেই বঙ্গের জন্য হিজরি ও হিন্দু শকাব্দের সংমিশ্রণে একটি নতুন সৌর ক্যালেন্ডার চালু করা হয়। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, এই ক্যালেন্ডারের সংষ্করণ কাজ করেছিলেন আকবরের সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজি।
আরও পড়ুন: কেন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি? ইতিহাস জানলে চোখ কপালে উঠবে
আবার ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, মোঘল সম্রাট আকবরেরও বহু আগেই বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল। তাঁদের মতে, ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিকে, রাজা শশাঙ্কের আমলে শুরু হয়েছিল বঙ্গাব্দের গণনা। কর্ণসুবর্ণের এই শাসক বঙ্গভূমিকে প্রথম স্বাধীনভাবে শাসন করেন এবং সম্ভবত সেই সময় থেকেই বঙ্গের নিজস্ব সাল শুরু হয়। হিসেব অনুযায়ী, বঙ্গাব্দের সূচনা যদি হয় ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে। সেক্ষেত্রে ইংরেজি বছরের সঙ্গে ৫৯৩ বছরের ব্যবধানটিও সঠিকভাবে মিলে যায়। তবে সমালোচকরা বলেন, শশাঙ্কের সময় বাংলা ভাষার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা বাংলা ক্যালেন্ডার চালু হওয়ার কোনও বাস্তবতাই ছিল না। তাছাড়া, প্রামাণ্য কোনও দলিলও নেই যা তাঁর আমলে বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের কথা নিশ্চিত করে।
এই বিষয়ে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন একবার বলেছিলেন, আকবর গোটা ভারতবর্ষের জন্য ‘তারিখ-ই ইলাহি’ নামের একটি ক্যালেন্ডার চালু করতে চেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, আজ তা হারিয়ে গেলেও, দুই বাংলায় তার ছায়া এখনও টিকে আছে বঙ্গাব্দের রূপে। বঙ্গাব্দের প্রবর্তক কে—আকবর না শশাঙ্ক—এই প্রশ্ন যতই বিতর্ক জন্মাক না কেন, পয়লা বৈশাখ আজ বাঙালির জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। ইতিহাসের আঙিনায় হয়তো আরও অনেক সন্ধান বাকি, কিন্তু উৎসবের আনন্দে সে বিতর্ক গৌণই থেকে যায়।
দেখুন আরও খবর: