কলকাতা: এ বছর সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে (Valentines Day) নাকি ঘটনাচক্রে একই দিনে। বলা বাহুল্য বাংলা বর্ণমালায় ‘V’ বলে কিছু নেই কিন্তু সরকারি মতে খাতায়-কলমে ভ্যালেন্টাইন্স ডের প্রেম দিবস হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্ড পাওয়া হয়ে গিয়েছে। বঙ্গসমাজ কিন্তু কোনও দিনই একে প্রাধান্য দেয়নি কারণ Happy New Year হলেও যেমন শুভ নববর্ষ থেকেই যায়, ভ্যালেন্টাইন্সের দৌরাত্ম্যকে জাস্ট পাত্তা না দিয়ে সরস্বতী পুজো তাই আমাদের কাছে স্বঘোষিত প্রেম দিবস। তবে ‘প্রেম’ আর ‘পূজা’ দুই পর্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাঙালি জাতি বরাবরই সমানভাবে আকৃষ্ট এ বিষয়ে দ্বিমত নেই।
আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও যখন ভ্যালেন্টাইন্স ডে নামক বস্তুটি জনপ্রিয়তা পায়নি, কাছের মানুষের জন্য স্কুলের গেটের বাইরে অপেক্ষা ছিল। প্রেম বা ভালোবাসার নির্দিষ্ট দিন ঘিরে কোনও পুঁজিপতির প্রফিট অ্যান্ড লসের মার্জিন তৈরি হয়নি, তখন কাছের মানুষের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোই ক্যাপিটাল ছিল। সেই দিনগুলোতে সরস্বতী পুজোর বড্ড প্রয়োজন ছিল। পশ্চিমবঙ্গে কো-এড স্কুলের অভিজ্ঞান তৈরি হয়েছে অনেক পরে, তখনও গার্লস স্কুল আর বয়েজ স্কুলের একটা অনুশাসন ছিল। কিন্তু এই একদিন সবার জন্য সব স্কুলের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যেত। চিঠি চালাচলির যুগে সাক্ষাৎ দর্শন সে এক অভাবনীয় ব্যাপার। গুরুজনদের চোখরাঙানি ওই একটা দিনই উপেক্ষা করার লাইসেন্স পাওয়া যেত।
আরও পড়ুন: প্রেম দিবসে ঘুরে আসুন কলকাতার এই জায়গাগুলোয়
মনে পড়ে যাচ্ছে বসন্ত বিলাপের সেই জনপ্রিয় দৃশ্য। একদিকে লেডিজ হোস্টেলে বাগদেবীর আরাধনা অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে পাড়ার ছেলে-ছোকরাদের মাইক্রোফোনে চিৎকার করে কবিতা পাঠ। রণে ভঙ্গ না দিয়ে নায়ক সৌমিত্র ও নায়িকা অপর্ণার প্রথম সাক্ষাৎ, তারপরের গল্প সবার জানা, ঝগড়া বিবাদ থেকেই শেষে প্রেমের হাতছানি। বাঙালির পপ কালচার তো এই দৃশ্যগুলি। হ্যাঁ, তার মাঝখানে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। আমাদের মনে, জীবনদর্শনে ঢুকে গিয়েছে শাহরুখ নামক প্রেমের জোয়ার, যে জোয়ারে রাহুল রাজের নাম করে কত প্রেমিক প্রেমিকা যুগল তাদের ভালোবাসার ডিঙা ভাসিয়ে চলেছে!
অন্যদিকে, আজকের দিনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে তার শাখাপ্রশাখা অচিরেই বিস্তার করে ফেলেছে। বিজ্ঞাপন থেকে বিপণন, প্রেমের যাবতীয় অঙ্গীকার ৩০ সেকেন্ডের রিলেই করে ফেলতে হবে। ঠিক কতটা? ঠিক কতটা টাকা এবং সময় ইনভেস্ট করলে ভালোবাসা নামক ইনসিওরেন্সের সিকিউরিটি পাওয়া যাবে তা জানতে চাওয়া হচ্ছে অচিরেই।
তাই সরস্বতী পুজো বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে কাউকেই দেওয়া যাবে না ‘ভালোবাসা’ নামক পরশপাথরের নিঃশর্ত মালিকানা। হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবি দিয়েই হোক না বসন্তের আমন্ত্রণ। প্রকৃতি তো কখনও নিজের রূপবৈচিত্রের হিসেব নিকেশ কাউকে করতে দেয়নি তাই ভালোবাসারও অঙ্গীকার হোক কোনও সন তারিখ না মেনেই। কারণ যাদের ‘ভালোবাসা এখনও গোলাপে ফোটে’ তাদের জন্য প্রেমের সংজ্ঞা বদলে যাবে প্রতিদিন কিন্তু অনুভূতি থাকবে চিরন্তন!
দেখুন অন্য খবর: