নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় এপিসোড সম্প্রচার করল বিবিসি। যেখানে মোদিকে ‘ভয়ানক বিভেদ সৃষ্টিকারী’ বলে দেখানো হয়েছে। মোদির ‘নতুন ভারত ধর্মীয় অশান্তিতে’ রয়েছে বলেও প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া: দি মোদি কোয়েশ্চন’ নামের এই তথ্যচিত্রের প্রথম এপিসোড নিয়েই হইচই পড়ে যায়।
গুজরাত দাঙ্গায় বিজেপি নেতাদের একপ্রকার কাঠগড়ায় দাঁড় করানোয় কংগ্রেস ও বামেরা তীব্র আক্রমণ শুরু করে। চাপে পড়ে কেন্দ্র ওই তথ্যচিত্রের ইউটিউব সম্প্রচার ও ইউটিউব লিঙ্ক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারপরেও হায়দরাবাদ, জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ওই তথ্যচিত্র দেখায়। কেরলেও বহু জায়গায় তথ্যচিত্রটি দেখানো হয়েছে।
এই আবহের মধ্যেই গতকাল রাতে দ্বিতীয় তথা শেষ এপিসোডটি সম্প্রচার করে বিবিসি ২। এতে বলা হয়েছে, নির্মাতারা অনুসন্ধান করে দেখেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের সম্পর্ক ভালো নয়। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালে বিপুল ভোটে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে।
আরও পড়ুন:Joshimath Crisis: ধসের জন্যই জোশীমঠের এই বিপর্যয়, অন্য কোনও কারণে নয়, বলেছে সমীক্ষা
তথ্যচিত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, আচমকা ৩৭০ ধারার বিলোপ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং যার ফলে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দৃষ্টান্ত টানা হয়েছে। চূড়ান্ত এপিসোডে বিবিসি ব্যক্তিগত অনেকের সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন দলের সাক্ষ্য এবং মন্তব্য নিয়েছে। তার মধ্যে যেমন শিক্ষাবিদ রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন সাংবাদিক ও সমাজকর্মীরাও। প্রতিটি বিষয়ে সরকার ও পুলিশের বক্তব্যও গ্রহণ করেছে বিবিসি। সাংবাদিক এবং প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তসহ তিন বিজেপি নেতার মতামতও তথ্যচিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মোদি নতুন ভারত এবং সমৃদ্ধির নয়া প্রজন্মের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ধর্মীয় অশান্তিতে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও গুজরাত নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল, সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে ক্লিনচিট দিয়ে দিয়েছে। তথ্যচিত্রে আরও দেখানো হয়েছে, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর দেশজুড়ে গণপিটুনিতে মুসলিম খুনের ঘটনা বাড়তে থাকে। গরুপাচার প্রবল বিতর্কিত জায়গায় পৌঁছে যায়। ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে গোমাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে গো-কাণ্ডে আলিমুদ্দিন আনসারির খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর স্ত্রী তথ্যচিত্রে বলেছেন, ওরা হল গোটা দেশের শাসক। আর যখন শাসকরা এইসব খুনিদের পক্ষে যায়, আমাদের মতো গরিব মানুষের কিছুই করার থাকে না। ঘটনার চার বছর পরেও অভিযুক্তরা খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই উপসংহারে তথ্যচিত্রে ইতি টানা হয়েছে।