দিল্লি ও মুম্বই: একটানা ৫৬ ঘণ্টা আয়কর হানা (IT Raid)। মঙ্গলবার দুপুর ১১টা ২০ মিনিটে আয়কর দফতরের আধিকারিকদের টিম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (British Broadcasting Corporation – BBC)-এর দিল্লি ও মুম্বই অফিসে (Delhi and Mumbai Offices) আচমকাই হানা দেয়। সেই আয়কর হানা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। সূত্রের খবর, আয়কর দফতরের আধিকারিকদের দল হানা শেষ করার মুহূর্তে জানানো যায়, ৩০ মিনিটের মধ্যে আইটি টিম বিবিসির দিল্লির অফিস থেকে বের হতে চলেছে। যে সমস্ত নথিপত্র (Documents) আয়কর আধিকারিকরা সংগ্রহ করেছেন, তা গোছগাছের কাজ চলছে।
গত মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির দিল্লি ও মুম্বই অফিসে হানা দেয় আয়কর দল। আয়কর দফতর (Income Tax Departments) সূত্রে প্রাথমিক অবস্থায় একে আয়কর হানা (IT Raid) নয়, আয়কর সমীক্ষা (IT Survey) বলা হচ্ছিল। যদিও সরকারিভাবে এই আয়কর হানা বা আয়কর সমীক্ষা নিয়ে মঙ্গল ও বুধবার কোনও বিবৃতি জারি করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সবকিছুই গোপন রাখা হয়েছে। কোনও বিরতি না নিয়ে একটানা আয়কর হানা। আইটি হানার প্রথম দিন বিবিসির দিল্লির অফিসের কর্মীদের মোবাইল বাজেয়াপ্ত (Confiscate) করেছিলেন আয়কর অফিসাররা। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বিবিসির সাংবাদিক ও কর্মীদের। মঙ্গবার জানা গিয়েছিল, দিল্লি অফিসের যে সমস্ত সাংবাদিক কর্মীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ডেস্কটপ কম্পিউটার স্ক্যান (Desktop Computer Scan) করার পাশাপাশি দুই অফিস থেকেই ডিজিটাল ডেটা এবং কাগজে থাকা নথি (Digital Data and Paper Informations), সবকিছুই কপি করেছে দুই আইটি টিম। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে সেই আয়কর হানায় যবনিকা পড়ে ৫৬ ঘণ্টা পর।
আরও পড়ুন: NSA Ajit Doval: অজিত দোভালকে সাম্মানিক ডিলিট দিল উত্তরাখণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়
এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বিবিসির দিল্লি অফিসের বাইরে আয়কর অফিসারদের বেরিয়ে আসতেও দেখা গিয়েছিল। সূত্রের খবর, বিবিসি দিল্লি অফিসে আসা টিমে ১০ জন মতো শীর্ষ আধিকারিক (Top IT Officials) ছিলেন।
বিবিসির বিরুদ্ধে আয়কর দফতরের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রান্সফার মূল্যের নিয়ম মানা হয়নি এবং মুনাফা ঘুরপথে চালান (Deliberate Non-Compliance With The Transfer Pricing Rules And Vast Diversion Of Profits) করা হয়েছে। আয়কর সমীক্ষার নামে চালানো এই আইটি টিমের হানার মূল লক্ষ্য ছিল, কর সুবিধা সহ অননুমোদিত লাভের মূল্যের হেরফের (Manipulation of Prices for Unauthorised Benefits)-এর তদন্ত অনুসন্ধান। এই নিয়ে সংস্থার উভয় অফিসের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আয়কর আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন (India: The Modi Question)’ নামে দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্রের সিরিজ দেখিয়েছে বিবিসি। সেখানে ব্রিটেনের একটি রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে ২১ বছর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় ট্রেনে আগুন ধরানোর ঘটনা পরিকল্পিত ছিল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সেই পরিকল্পনা করেছিল। গোধরায় ওই ঘটনা না ঘটলেও, অন্য কোথাও ঘটত। এই তথ্যচিত্র গোটা বিশ্বে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। ভারত সরকার এই তথ্যচিত্রে ভিডিয়ো ক্লিপস (Video Clips) ইউটিউব সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া (Social Medias Including YouTube) থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এমনকি ভারতে বিবিসির সম্প্রচার বন্ধ করা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্র (Central Government)। তবে তা খারিজ করে দেয় আদালত। ঘরে-বাইরে এই নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে মোদি সরকার (Modi Government)। তারই মধ্যে বিবিসির দুই অফিসে আয়কর হানার ঘটনা। বিরোধী ও সমালোচক মহলের বক্তব্য, আগামী বছর লোকসভা নির্বিবাচন (General Election 2024) রয়েছে। বিবিসি তথ্যচিত্রে যে তথ্য তুলে ধরেছে, তাতে কেন্দ্রের মোদি সরকার (Modi Government) চাপে পড়েছে। সেই কারণে আয়কর দফতরের দল পাঠিয়ে আয়কর সমীক্ষার নামে হেনস্তা (Harassment) করা হল বিবিসিকে।