কলকাতা: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হচ্ছে সেমেস্টার পদ্ধতি, যার ক্লাস শুরু হয়েছে ২ এপ্রিল থেকে। নতুন ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি হিসাবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কর্মশালাও আয়োজন করেছিল। কিন্তু ক্লাস শুরুর পরই রাজ্যের স্কুলগুলির উপর নেমে এলো কঠিন সংকট। সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের জেরে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়ে গেছে, ফলে স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণিতে সেমেস্টার পদ্ধতি চালু হওয়ায় এই সংকট আরও গভীর হয়ে উঠেছে।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের পরিস্থিতি বিশেষ উদ্বেগজনক। কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষকই সেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ডেটা সায়েন্স পড়াতেন, কিন্তু তিনি চাকরি হারানোয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য দিশেহারা। তিনি বলেন, “আমার স্কুলে এই বিষয়গুলির শিক্ষকই নেই! একাদশ শ্রেণিতে যখন নতুন ভর্তি হবে, তখন পড়ানোর দায়িত্ব নেবেন কে? এই শূন্যতা পূরণ করব কীভাবে, সত্যিই বুঝতে পারছি না।”
আরও পড়ুন: চাকরিহারা প্রার্থীদের কত টাকা ফেরত দিতে হবে? দেখুন হিসেব
এই সংকট সম্পর্কে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রক্রিয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হবে, তাই তিনি শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি আরও বলেন, “কিছু কিছু বিভাগে আমরা আংশিক শিক্ষকের অনুমতি দিতাম না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই নিয়ম শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে স্কুলগুলি অন্তত চালু রাখা যায়।”
শুধু যাদবপুর বিদ্যাপীঠ নয়, শহর ও জেলার বহু স্কুলে এই সমস্যার দেখা দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের নিজের স্কুল, নারায়ণ দাস বাঙ্গুর মাল্টিপারপাস স্কুলেও তিনজনের চাকরি বাতিল হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন নবম-দশমের বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক, রসায়নের একজন শিক্ষক ও একজন গ্রুপ-ডি কর্মী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “আমার বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস করাব কীভাবে? আংশিক শিক্ষকদের নিয়োগ করলেও তাদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা কোথা থেকে আসবে?”
একই অবস্থা দমদমের অরবিন্দ বিদ্যামন্দির স্কুলেও। প্রধান শিক্ষক অসীম নন্দ জানান, “আমাদের স্কুলেও তিনজন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তারা সকলেই সংসদের আয়োজিত কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন। এখন শিক্ষক ঘাটতিতে স্কুল চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে।”
এই আকস্মিক সংকটে রাজ্যের অসংখ্য স্কুলে শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা দফতরের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
দেখুন আরও খবর: