নদিয়া: নদিয়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাঁধনা ও সহরাই পরবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হল গোয়াল ও গরুকে ঘিরে আয়োজিত পুজো এবং দেওয়ালে ঐতিহ্যবাহী ছবি আঁকা। আদিবাসীদের এই বাঁধনা পরবে গ্রাম বাংলার ঘর-বাড়ি ও গোয়াল নানা রঙে সেজে ওঠে। চলতি বছর নদিয়ার দিশারী পরিবারের উদ্যোগে একটি দেওয়াল চিত্র অঙ্কনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঝুমুরিয়া গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের চিত্র অঙ্কনের বিষয়ে সহায়তা করেন। গ্রামের মানুষদের চিত্র সম্পর্কে সজাগ করার পাশাপাশি তারা নতুন প্রজন্মকে এই ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করানোর চেষ্টা করেন।
উল্লেখ্য, এই বাঁধনা পরবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন তাঁদের ঘরের দেওয়ালে পশু-পাখি, ফুল, লতাপাতা, এবং ত্রিভূজ ও অর্ধবৃত্ত আকারের বিভিন্ন নকশা অঙ্কন করে। মাটির দেওয়ালে লাল, সাদা, কালো ও অন্যান্য রঙের প্রলেপ দিয়ে চিত্র অঙ্কন করা হয়। গোয়াল ও রান্নাঘরের দেওয়াল থেকে শুরু করে দরজা ও জানালার চারপাশেও এই চিত্র অঙ্কন করা হয়। দেওয়াল চিত্রের প্রাচীন কৌশল হিসেবে আদিবাসীরা প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করতেন। তবে, বর্তমান সময়ে বাজার থেকে কেনা রঙের ব্যবহারও বাড়ছে। দেওয়াল চিত্রের ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহৃত দেওয়ালগুলোকে তৈরি করতে লালমাটি, চিটা মাটি, এবং করাচ মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়। কখনও কখনও চালের গুঁড়ো দিয়েও চিত্র অঙ্কন করা হয়। এছাড়াও ফ্রেসকো ও রিলিফ পদ্ধতিতে মাটির কাজকে প্রাধান্য দিয়েও চিত্র অঙ্কন করা হয়।
আরও পড়ুন: প্রশাসনিক পদে বাম আমলের মন্ত্রী! তোষণ ইস্যুতে রাজ্যকে তুলোধোনা সুকান্ত মজুমদারের
নদিয়ার শান্তিপুরে এই পরবে চার দিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আদিবাসী নাচ, গান, এবং বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে উৎসবে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। নৃত্যের ছন্দে, গানের সুরে এবং গল্পে আদিবাসী সমাজের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। এছাড়া আলপনা প্রতিযোগিতার আয়োজনও ছিল, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা আলপনা অঙ্কনের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষতা ও শিল্পীসত্তার প্রকাশ ঘটান।
এই পরব শুধুমাত্র আনন্দের নয়; এটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতীক। গ্রামীণ আদিবাসী মানুষদের একত্রিত করে তাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রজন্মের পর প্রজন্মে সংক্রমিত করার একটি মাধ্যম হল এই উৎসব। এই ধরনের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের আগ্রহও বেড়ে চলেছে, যা ঐতিহ্যের সংরক্ষণে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
দেখুন অন্য খবর: