নয়াদিল্লি: খারাপ ব্যবহার, মানুষের সামনে প্রতিনিয়ত, নিত্যদিন অপমান, গঞ্জনা যে মানুষকে কত হিংস্রতার দিকে ঠেলে দিতে পারে, তার সাক্ষী থাকল দিল্লির নারকীয় হত্যাকাণ্ড। নিজের বাবা-মা দিদিকে গলাকেটে কুপিয়ে খুন করতে একবারের জন্যও হাত কাঁপল না ২০ বছরের যুবক অর্জুনের। এমনকি খুনের পরেও সে নিত্যদিনের মতো মর্ণিওয়াকে গেল, তার পর সেখান থেকে ফিরে এসে জিমেও যান অর্জুন।
নিখুঁত পরিকল্পনা। খুব জেনে বুঝে গল্পের প্লট সাজিয়েছিলেন দিল্লির তরুণ। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে সাধারণ মানুষের মনে হতে পারে, কেউ বা কারা চুরি বা কোনও ছিদ্রান্বেষী কাজের উদ্দেশে তিনজনকে একসঙ্গে খুন করেছে। কিন্তু দিল্লি কাণ্ডে তদন্তে যে তথ্য সামনে এল তাতে হতবাক পুলিশ থেকে পাড়া প্রতিবেশীরাও।
আরও পড়ুন: ‘মোদি আদানি এক হ্যায়’ লেখা জ্যাকেট পরে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ ইন্ডিয়া ব্লকের, নেই তৃণমূল
গতকাল বাবা-মা দিদির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। মর্নিওয়াক থেকে ফিরে এসে এই ঘটনা দেখে চিৎকার করেছিল ওই যুবক। আর ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে এই খুনের ঘটনায় ওই যুবককের গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম অর্জুন তনওয়ার। বাবা রাজেশ (৫৩), তাঁর স্ত্রী কোমল (৪৭) এবং তাঁদের ২৩ বছরের দিদি কবিতাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে অর্জুনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত অর্জুন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান।
জানা গেছে, পরিবারের সঙ্গে বনিবনা ছিল না অর্জুনের। প্রায় তাঁদের মধ্যে অশান্তি লাগত বিষয়। ছোট থেকে বক্সার হতে চেয়েছিলেন অর্জুন। কোনওদিন বাবা তাঁর সেই ইচ্ছেকে মেনে নেননি। সব সময় লোকের সামনে এই নিয়ে কথা শোনাতেন বাবা মা। এমনকি নিত্যদিন পড়াশোনা থেকে শুরু করে নিত্যনৈমিত্তিক কাজের জন্য ছেলেকে তিরস্কার করতেন বাবা। সম্প্রতি সম্পত্তির ভাগ নিয়েও ছেলের ঝামেলা শুরু হয়। অর্জুনের মনে হত দিদিকেই বেশি ভালোবাসে বাবা-মা। দিদি কবিতার নামেই সম্পত্তি লিখে দিতে চেয়েছিল তারা।
বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশের (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার এসকে জৈন বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে প্রথম থেকেই অর্জুনের উপর সন্দেহ ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। জেরায় জানায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাঁর চেয়ে দিদি কবিতাকে বেশি ভালবাসতেন বাবা-মা। বক্সার হতে চেয়েছিল, কিন্তু বাবা মেনে নেননি। এই নিয়ে বললেই সকলের সামনে অপমান করা হত। সম্প্রতি সব সম্পত্তিও দিদি কবিতার নামেই লিখে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। প্রথমে দিদি তার পর ঘুমন্ত অবস্থায় বাবাকে গলা কেটে খুন। মা বাথরুমে ছিলেন, কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করেন অর্জুন। তার পরে মাকেও একই কায়দায় খুন করে সে।‘
পুলিশকে অর্জুন প্রথমে জানান, ভোর পাঁচটা নাগাদ মর্নিওয়াকে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর তিনি দেখেন বাবা মায়ের দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চিৎকার চেঁচামেচিতে পুলিশ এসে দেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। আর অর্জুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়।
পুলিশের দাবি, ক্ষোভ থেকেই পরিবারকে খুন করেছেন অর্জুন।
দেখুন অন্য খবর: