Monday, June 2, 2025
HomeScrollআমি যে রিশকাওয়ালা...
Kolkata Rickshaw

আমি যে রিশকাওয়ালা…

১৩৪ বছরের ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে শহরে

Follow Us :

শ্রেয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা

‘আমি যে রিশকাওয়ালা/ দিন কি এমন যাবে?… কী ভাবছেন হঠাৎ এই গান কেন? তাহলে বলি রোজনাচনার জীবনে জড়িয়ে থাকা রিকশা নিয়ে কথা লিখছি…কল্লোলিনী কলকাতার বুকে কত ঐতিহ্য চাপা পড়েছে তা বোধহয় এই শহরবাসীও ভুলতে বসেছে। এটাকে ঠিক অপরাধ বলা যায় না। দ্রুত গতির জীবন অন্যকে টপকে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তায় মাথা ভার। ব্যক্তিগত থেকে পেশাদারির জীবনে মাঝে চিষে চলেছি। আমাদের গতির জীবনে ছোট অংশে জায়গা করে নিয়েছে রিকশা। প্রায় ১৩৪ বছরের ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। অনেকের মনে হবে এ আর এমনকী, এ তো রোজ দেখি পাড়ার মোড়ে গেলেই দেখা যাবে লাইন করে দাঁড় করানো রিকশার। হেক্সা, বিএমডব্লু, মতো আধুনিক অ্যাডভান্স গাড়ির যুগে রিকশা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্ত কেন করব না। এর সঙ্গেই কলকাতার সম্পর্ক আজকে নয়। কলকাতার নিজস্ব দুই ঐতিহ্যের নাম—হাতেটানা রিকশা (Kolkata Rickshaw) আর ট্রাম। শহরের বুক থেকে ট্রাম তো হারিয়ে যেতে বসেছে। আর কোন রকম নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে রিকশা।

ভারতে অবশ্য এই হাতেটানা রিকশা প্রথম এসেছিল ১৮৮০ সালে। তবে কলকাতায় রাস্তায় নয়। প্রথম চলেছিল হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলায়। লোহা দিয়ে তৈরি এই রিকশা চালাতে ৪ জন মানুষের প্রয়োজন হত। এরপর ১৮৯০ সালে জাপান থেকে কলকাতায় প্রথম আসে কাঠের তৈরি হাতেটানা রিকশা। সেই থেকে কলকাতায় আজও চলছে রিকশা। যা দেশের অন্য কোনও রাজ্যে আর নেই।কলকাতার ঐতিহ্য ট্রাম আর হাতেটানা রিকশা যার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে বিদেশি পর্যটকদের। আমাদের দেখুন নিজেদের ঐতিহ্যকে অবহেলা করে চলেছি। তবু শহরটির রাস্তায় এখনও টিকে আছে রিকশা। অন্য কারও কথা বলতে পারব না। আমরা নিত্যদিনের সঙ্গী রিকশা। রোজ অফিস যাওয়ার সময় অটো ধরে যেতে আমরা সঙ্গী রিকশা। রাতে অফিস ফেরত শুনসান গলিতে আমরা ভরসা সেই রিকশা। একে ছাড়া এক প্রকার আমার চলে না।

আরও পড়ুন: ও ‘ট্রাম’ সামলে রাখো ইতিহাসকে

দেশের মধ্যে প্রথম কলকাতায় গড়িয়েছিল মেট্রো রেলের চাকা। এটি এখন বিশ্বের একমাত্র শহর যেটি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে একটি মাধ্যম হিসাবে লাইসেন্সকৃত হাতে টানা রিকশা চলে। অল বেঙ্গল রিকশা ইউনিয়নের মতে, অনুমান করা হয় যে বর্তমানে কলকাতায় ১৪০০০ বেশি লাইসেন্স এবং ৫০০০ বেশি লাইসেন্সবিহীন রিকশা চালু রয়েছে। কলকাতার অদ্ভুত আর্থ-সামাজিক কারণে হাতে-টানা রিকশা টিকে আছে। একসময় কলকাতার ট্যাক্সিচালকদের অধিকাংশ ছিলেন পাঞ্জাবি, ঠিক তেমনি হাতেটানা রিকশাচালকের বেশির ভাগ ছিল বিহারি। বেশির ভাগ হাতেটানা রিকশাচালক হলেন অবাঙালি এবং বিহারের মানুষ। সাইকেল রিকশায় বাঙালিরা বেশির ভাগ চালায়। এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের অনেকে একে জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতায় হাতে টানা না চলেও, উত্তর কলকাতার অলিগলিতে এখনও হাতে টানা রিকশা চলে।বর্তমানে যে রিকশাওয়ালা রয়েছেন, অধিকাংশেরই বয়স ষাটের বেশি কি তার কাছাকাছি। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় আসছে না। ফলে হাতে টানা রিকশা কমে আসছে কলকাতায়। সে শত বছরের ঘাম, পরিশ্রম দিয়ে জনসেবা করে চলেছে এরা। আমরা অনেক সময় ভারা নিয়ে ঝামেলা করি। কখনও ভেবে দেখেছি সারা দিনে কতই বা রোজগার হয়। একজন রিকশাওয়ালার বারো মাস ভোর ৫টায় রিকশা নিয়ে লাইনে দাঁড়ায়। পাচ্ছে সকালে আপনার ছেলে মেয়ের স্কুলে দেরি না হয়। আপনার আমরা অফিসে যাতে দেরি না হয়। দিনের বেলা কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সন্ধ্যায়। তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ক্লান্তিহীন ভাবে ছুটে চলেছে। বিকেলে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরে, তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তর ও মধ্য কলকাতার রাস্তায় এবং গলিতে চলতে থাকে। গ্রীষ্মের দুপুরে একবার তাদের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন। রোদে পোড়া শরীরটা নিয়েও হাসি মুখে বসে থাকে রাস্তার ধারে। রাতে যখন অফিসের গাড়ি ছাড়তে বাড়ি আসে সেই পথে সেন্ট্রাল, ধর্মতলার ফুটে দিকে তাকালে দেখতে পাই। ক্লান্ত শরীরটাকে ফুটপাতে এলিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুম দিচ্ছেন। শুধু কি তাই, বর্ষায় সবাই জানি কলকাতার হালহকিকত। বাড়ির থেকে বেড়ানো দায় হয়ে পড়ে। কোথাও হাঁটু জল তো কোথাও কোমর সমান জল। জলাবদ্ধতার কারণে শহরের বেশির ভাগ অলি-গলিতে ট্যাক্সি, গাড়ি ও অটো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে মুশকিল আসান হাতে টানা রিকশা।

 

কলকাতার প্লাবিত রাস্তায় রিকশাগুলি যাত্রীদের নিয়ে ছুটে চলে। আমরা ইদানিং খুব বলি বিশ্বকর্মা পুজো অটো-রিকশা ওলাদের। রাজনীতির যাঁতাকলে রাজ্যে একের পর এক কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। ফলে জৌলুস
হারিয়ে বিশ্বকর্মা পুজো। এখন এদের দৌলতে বেঁচে আছে এই পুজো। বারো মাসের দুঃখ যন্ত্রাকে সরিয়ে রেখে। ফ্যাকাশে হওয়া চোখ গুলো পুজোর কটা দিন জ্বলে ওঠে। এটাই ওদের প্রাপ্তি। এরা লাভের মুখ দেখা তো দূর, দুবেলা দুমুঠো ঠিক করে খেতে পায় না। রোজকার জীবনের লড়াই লড়তে তারা অভ্যস্ত।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | 'সিঁদুর' বনাম 'লক্ষ্মী', 'অর্ধেক আকাশ', ভোটের টার্গেট ২৬-শে কী হবে?
00:00
Video thumbnail
Bangladesh Money | এক দেশ, ২ রকম টাকা, জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে বিরাট মুশকিলে বাংলাদেশের মানুষ
00:00
Video thumbnail
Russia | Ukraine | হা/ম/লা, পাল্টা হা/ম/লা, রাশিয়া-ইউক্রেনের ইস্তানবুলে বৈঠক, আদৌ থামবে যু/দ্ধ?
00:00
Video thumbnail
Covid 19 | ভয় ধরাচ্ছে করোনা, আ/ক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল ১৩০০%, এবার কী হবে? আবার কী লকডাউন?
00:00
Video thumbnail
OBC List|বহু প্রতীক্ষিত OBC তালিকায় ২৫ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব,অনুমোদন মন্ত্রিসভার বৈঠকে
00:00
Video thumbnail
Chirag Paswan | কী খেলা চলছে বিহারের বিজেপি জোটে? চিরাগের এই কথায় কীসের ঈঙ্গিত?
00:00
Video thumbnail
Bangla Bolche | ছাব্বিশে ভাইপো মুখ্যমন্ত্রী হবে
00:50
Video thumbnail
Bangla Bolche | নামকরনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে
01:41
Video thumbnail
Fourth Pillar | যু/দ্ধ জয়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা, সৈন্যের পোষাকে কেউ সাজেননি তারা
01:01
Video thumbnail
Fourth Pillar | বিজেপি ব্যর্থ সরকার, তাই করে মিথ্যে প্রচার
00:59