বহরমপুর: শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো গুলোর মধ্যে অন্যতম কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (Kasimbazar Chhota Rajbari Durga Puja)। ঐতিহ্য মেনে আজও কাশিমবাজার রাজবাড়িতে পূজিত হন মা দুর্গা। মহালয়ার পর প্রতিপদ থেকেই দুর্গাপুজো আরাধনা শুরু হয়ে গিয়েছে ছোট রাজবাড়িতে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চণ্ডীপাঠ শুরু করেছেন চারজন পুরোহিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজবাড়ীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করতে চলেছেন কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2024)।
মারাঠা দস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার ফিরোজপুর থেকে বহরমপুরের কাশিমবাজারে চলে আসেন অযোধ্যারাম চট্টোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদে আলিবর্দী খার রাজত্বকালে সেই সময় ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে রেশমের ব্যাবসা করেন অয্যোধ্যারাম বাবুর পুত্র দীনবন্ধু চট্টোপাধ্যায়। ব্রিটিশ সরকার দীনবন্ধু রায়কে রেশম কুটিরের প্রধান হিসাবে ঘোষণা করে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে ‘রায়’ উপাধি পেয়ে ১৭৪০খ্রীঃ কাশিমবাজারে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মান করেন দীনবন্ধু বাবু। তিনিই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। সেদিন থেকে কাশিমবাজারে ছোট রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। একসময় পুজোর জৌলুস থাকলেও কালক্রমে সেই জৌলুস কমে গিয়েছে। রাজবাড়ির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে কাজের সন্ধানে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: এই রাজবাড়ির পুজোতে ভক্তদের কাঁধে চেপে দেবী যান
বছর কয়েক পরে সেই ছোট রাজবাড়ি পুরোনো চেহারায় ফিরে আসে বর্তমান সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় । এদিকে রাজবাড়ির পুরোনো ঐতিহ্য তুলে ধরে খোলা হয়েছে মিউজিয়াম। যে মিউজিয়ামে পর্যটকেরা এসে ভিড় করেন। তৃপ্ত হন রাজবাড়ি দেখে, রাজবাড়ির ঐতিহ্য দেখে। পুজোর সময় অনেকে আসতেও চান। অনেকে আবার রাজবাড়ির হোটেল ভাড়া করেও পুজোর কদিন থেকে আনন্দ উপভোগ করেন। এদিকে ছোট রাজবাড়ির আরতি দেখার জন্য মন্দির প্রাঙ্গন ভর্তি হয়ে যায়। দূর দুরান্তের মানুষও ছুটে আসেন রাজবাড়ির পুজো দেখতে। তিনটি পুরান সংযুক্ত করে রাজবাড়ীর নিজস্ব পুঁথি দেখে শুরু হয় দুর্গাপুজোর আরাধনা বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ীর বর্ষীয়ান পুরোহিত।
পুরোহিতরা জানাচ্ছেন, মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয় মাতৃ বন্দনা। প্রথা মেনে অপরাজিতা পূজো হলেও নীলকন্ঠ পাখি আর ছাড়া হয় না। এবার নবমী পুজোর দিন কুমারী পুজো হবে। একসময় দুর্গা পুজো প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় মাছ উঠত। তবে একসময় বলি হলেও এখন আর হয় না। বরং মাছ দিয়ে বলির সংকল্প করা হয় বলে জানাচ্ছেন রাজবাড়ি প্রধান পুরোহিত সোমেশ্বর চট্টোপাধ্যায়। রাজবাড়ীর আর একজন পুরোহিত প্রণব গাঙ্গুলী জানাচ্ছেন, প্রতিপদ থেকেই নিয়ম মেনে কাশিবাজারের রাজবাড়ির দুর্গাপূজা শুরু হয়ে যায় । বাইরের কোন পুঁথির সঙ্গে রাজবাড়ীর পুঁথির মিল নেই। ফলে অন্যান্য বাড়ির পুজোর চেয়ে অনেক বেশি আলাদা রাজবাড়ির পুজো। পুজোর সময় সারাদিন খোলা থাকে রাজবাড়ীর মন্দির। যে বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে জমিদারীর বিভিন্ন নিদর্শন ফুটে উঠেছে।
অন্য খবর দেখুন