কলকাতা: ভগবত গীতার (Bhagavad Gita) পূণ্যভূমিতে হিন্দুত্বের বিজয়। হরিয়াণায় বিজেপির নির্বাচনী জয়কে এভাবেই বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। ভাগ্যের কী পরিহাস, মহাভারতের কুরুক্ষেত্রে কিন্তু বিজেপি বড়সড় ধাক্কা খেতে হয়েছে। হরিয়াণার কুরুক্ষেত্রের চারটি বিধানসভা আসনের মধ্যে একটি বাদে সবকটি গিয়েছে কংগ্রেসের দখলে। একেই বলে অনৃত ভাষণ। যে কুরুক্ষেত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গেরুয়া বাহিনীকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তা বেমালুম ভুলিয়ে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। তবে শুধু মহাভারতের কুরুক্ষেত্র একা নয় রামায়ণের পূণ্যভূমি উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার অন্তর্গত ফৈজাবাদ লোকসভা কেন্দ্রেও গত ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। ঘটা করে রামলালা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পরেও সেখানে বিজেপি পরাজিত সমাজবাদী পার্টির কাছে।
হিন্দুত্বের বড়াই করে দেশ জুড়ে ধর্মীয় বিভাজনকেই তাদের রাজনৈতিক মোক্ষ বলে মনে করে বিজেপি। তাদের প্রাণ ভোমরা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সেই এজেন্ডা মেনেই নরেন্দ্র মোদি জমানায় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা বারে বারে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে চলেছে বস্তত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সর্বশেষ লেকসভা ভোটে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি। সদ্যহওয়া দুই বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে হরিয়ানার তৃতীয়দফায় ক্ষমতা দখল করতে পারলেও ভোট প্রাপ্তির নিরিখে বিজেপির সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়েছে কংগ্রেস। এক শতাংশেরও কম ভোট পেলেও আসন সংখ্যার বিচারে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। যা বহুদলীয় ব্যবস্থার স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেই স্বাভাবিকতার আড়ালে ডবল ইন্ঞ্জিন সরকাররে প্রতি নির্বাচক মণ্ডলীর অনাস্থা যে আর নিরঙ্কুশ নয়, যা ভোট প্রাপ্তির তুল্যমুল্য বিচারেই প্রকট হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি কমাতে পারবে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক: গভর্নর
কিন্তু বিজেপির তথা নরেন্দ্র মোদি ভাঙলেও মচকাবেন না। তাই অর্ধসত্য ও অসত্যের মিশ্রণে সেই ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িয়েছেন। পাছে যাতে নিজদের দুর্বলতা প্রকাশ না পায়। দিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে হরিযাণার নির্বাচনী বিজয় সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে কুরুক্ষেত্রের অনুষঙ্গে টেনে এনেছেন ভগবত গীতা প্রসঙ্গ। নিজেকে হিন্দু হৃদয় সম্রাট বলে জাহির করতে চাওয়া প্রধানমন্ত্রী তথ্যের বিভ্রাট ঘটিয়েছেন। হরিয়াণার কুরুক্ষেত্রের অন্তর্গত রয়েছে লাডওয়া, শাহবাদ, থানেসর ও পেহোয়া এই চারটি বিধানসভা। একমাত্র লাডওয়া কেন্দ্র বিজেপি দখলে রাখলেও বাকি তিনটি হাতছাড়া হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। এই নির্ভেজাল সত্যটা হজম করা বিজপির পক্ষে মোটেই স্বস্তির নয়। কুরুক্ষেত্রবাসীর প্রত্যাখ্যান আড়াল করতেই কি ধর্মের মোড়কে এই অনৃত ভাষণ মোদির ?
অন্য খবর দেখুন