শিলিগুড়ি: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা (Kanchanjunga Express Accident) নিয়ে পদে পদে বিভ্রান্তি রেলের। এবার মালগাড়ির মৃত চালক অনিল কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেই দুর্ঘটনার তদন্তে নামল রেল। চৈতালি মজুমদার নামে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের (Kanchanjunga Express) জখম এক যাত্রীর বয়ানের ভিত্তিতেই রেল ওই এফআইআর করেছে। অথচ চৈতালি দাবি করছেন, তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই করেননি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছি। টিভিতে দেখলাম, আমার অভিযোগের ভিত্তিতেই এফআইআর হয়েছে মৃত চালকের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার থেকে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার (Rail Accident) তদন্ত শুরু করেছেন। রেলওয়ে বোর্ড প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, মৃত মালগাড়ির চালক ও আহত সহকারী চালকের গাফিলতির জেরেই ঘটেছে দুর্ঘটনা। অনেকের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরই মালগাড়ির চালকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলতে চায় রেল। অভিযোগ, সোমবার সকাল থেকে অটোমেটিক সিগন্যাল খারাপ ছিল। কাজ করছিল না ট্র্যাকিং সিস্টেম। সেটাও কী ভাবে নজর এড়িয়ে গেল রেলের, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে রেলের এক যাত্রীর বয়ানের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছে রেল। সোমবার দুর্ঘটনার কবলে পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ছিলেন চৈতালি ও সেই ট্রেন দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পান তিনি। পরবর্তীতে তাঁকে নিউ জলপাইগুড়ি এলাকায় অবস্থিত রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবারই তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। চৈতালি জানান, রেল পুলিশের পরিচয় দিয়ে কয়েকজন তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন এবং তাঁর বয়ান লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর দাবি, তিনি কেবল ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। কে কোন গাড়ির চালক, তা তিনি জানবেন কী করে। একটি সাদা কাগজে তাঁর সই নিয়ে ওই লোকজন চলে যান।
আরও পড়ুন: অন্ততকে নিজের অবস্থান স্পষ্টের পরামর্শ সুকান্তর
সত্যিই কি সিগন্যাল ভেঙেছিলেন মালগাড়ির চালক (Loco Pilot Goods Train)? না এর পিছনেও রয়েছে রেলের গাফিলতি, সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে কেন ছিল না LHB কোচ, সেই প্রশ্নও উঠেছে। অত্যাধুনিক ওই কোচ থাকলে কামরা উলটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত না বলে রেলের অনেকে মনে করেন। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই অনুসন্ধান শুরু করেছেন কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি। এসবের মধ্যেই রেল দুর্ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করেছে জিআরপিও।
রাঙাপানি এবং চটেরহাটের মধ্যেকার স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল খারাপ ছিল। এই পরিস্থিতিতে চালকদের ভরসা ম্যানুয়াল মেমো। রেলের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার আগে রাঙাপানির স্টেশনমাস্টার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালগাড়ির চালক দু’জনকেই ‘টিএ-৯১২ ফর্ম’ দেন। ফর্ম দু’টিতে একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই ফর্মে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা ছিল, কোন কোন সিগন্যাল লাল থাকা সত্ত্বেও তা ‘ভাঙতে’ পারবেন চালক। যার ভিত্তিতে সিগন্যাল না থাকলেও নির্দিষ্ট গতিতে ট্রেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন চালক। জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার আগে ৮.১০ মিনিটে মালগাড়িটি রাঙাপানি স্টেশন থেকে কাগজের সিগন্যাল নেয়। ৮:৩৭ মিনিটে তা চটেরহাট স্টেশন পেরিয়ে যায়। এত বড় পথ ২ ঘন্টায় অতিক্রম করার কথা সেই পথ ২৭ মিনিটে পার করেছে মালগাড়ি। প্রশ্ন রয়েছে সেটা নিয়েও।বিষয়টি কন্ট্রোল রুমের নজর এড়াল কীভাবে? কার ভুলে এই দুর্ঘটনা ঘটল? এ সবই আসবে তদন্তের আওতায়।
অন্য খবর দেখুন