ওয়েব ডেস্ক: রাশিয়ায় (Russia) ফের এক শিল্পীর রহস্যমৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য। দশতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে পুতিন-বিরোধী রুশ গায়ক ভেদিম স্ট্রয়কিনের। আপাতদৃষ্টিতে এটি দুর্ঘটনা মনে হলেও, এর নেপথ্যে গভীর রহস্য রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। সূত্রের খবর, সেন্ট পিটার্সবার্গে তাঁর আবাসনে হানা দিয়েছিল পুলিশ। তারপরই রান্নাঘরের জানলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় গায়কের। সত্যিই কি এটি দুর্ঘটনা, নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে? বিশেষত, তিনি যখন দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার পুতিন ও ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে আসছিলেন, তখন এই মৃত্যু স্বাভাবিক বলে মানতে নারাজ বিশ্লেষকদের একাংশ।
ভেদিম স্ট্রয়কিন শুধুমাত্র একজন গায়কই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক ও সঞ্চালক হিসেবেও জনপ্রিয়। তবে তাঁর পুতিন-বিরোধী অবস্থানের কারণে রুশ প্রশাসনের চোখে তিনি ছিলেন একজন ‘বিপজ্জনক’ ব্যক্তি। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় তিনি ক্রেমলিনের নীতির তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। ২০২২ সালে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘নির্বোধ’ বলে উল্লেখ করে লেখেন, ‘‘আমি ওর মৃত্যু চাই না, কিন্তু চাই ওকে জেলে দেওয়া হোক।’’ তাঁর এমন সাহসী বক্তব্যই কি শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াল? মৃত্যুর নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের গুঞ্জন আরও জোরালো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলা বেড়েই চলেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে!
যুদ্ধের সময় ইউক্রেনীয় সেনাকে সাহায্য করার অভিযোগে স্ট্রয়কিনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন দীর্ঘদিন। সংবাদমাধ্যমের দাবি, বুধবার তাঁর খোঁজে পুলিশ পৌঁছয় তাঁর সেন্ট পিটার্সবার্গের ফ্ল্যাটে। সেসময় রান্নাঘরে গিয়ে জল খাচ্ছিলেন গায়ক। এরপরই আচমকা তিনি দশতলার জানলা দিয়ে পড়ে যান। এ মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যা—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সমালোচকদের মতে, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, এবং এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এটাই প্রথম নয়, এর আগেও রাশিয়ায় পুতিন-বিরোধীদের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। গত নভেম্বরেই পাঁচতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল পুতিন-বিরোধী ব্যালে নৃত্যশিল্পী ভ্লাদিমির শ্লাইরভের। তখনও তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, তিনি পিঠে ব্যথার জন্য পেনকিলার খেয়েছিলেন, যার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেকেই সেই ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করেননি। এবার একইভাবে মৃত্যু হল গায়ক ভেদিম স্ট্রয়কিনের। ফলে রাশিয়ায় পুতিন-বিরোধীদের পরিণতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ায় যাঁরা প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁদের পরিণতি প্রায় একরকমই হচ্ছে। ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই তাঁদের উপর নেমে আসছে রহস্যজনক মৃত্যু। স্ট্রয়কিনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে—এটি কি শুধুই দুর্ঘটনা, নাকি সরকার-নিয়ন্ত্রিত হত্যার আরেকটি উদাহরণ? তবে একদিকে রাশিয়ার প্রশাসন এই ঘটনাকে গুরুত্বহীন বলে দেখাতে চাইছে, অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতি বিশেষভাবে নজর রাখছে এই মৃত্যু নিয়ে।
দেখুন আরও খবর: