জয়জ্যোতি ঘোষ
২০১৮ সালের নভেম্বর মাস। ভারতে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ। বিসিসিআই-এর অফিশিয়াল অডিও ব্রডকাস্টারের হয়ে কাজ করছি তখন। ম্যাচ শুরুর আগে নভেম্বরে হাল্কা শীতের ইডেন গার্ডেন্সে কমেন্ট্রি বক্সে কার্ল হুপার, রিকার্ডো পাওয়েল, মহম্মদ কাইফ, দীপ দাশগুপ্ত ও চারু শর্মারা নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপ সারছেন। ২০০২ সালের পর প্রায় ১৬ বছর বাদে এই প্রথম রেডিও কমেন্টেটর হিসেবে ভারতে এসেছেন প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কার্ল হুপার।
সেদিন ইডেনের কমেন্ট্রি বক্সের এক কোণায় একান্তে কিছুটা সময় কাটিয়েছিলাম কার্ল হুপারের সঙ্গে। প্রথমেই জানতে চাইলাম তাঁর ভারত-প্রীতি সম্পর্কে। কার্ল হুপার অকপটে বললেন, “আমি যেখানে বড় হয়ে উঠেছি সেই গায়ানাতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাই প্রথম থেকেই আমি ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে ভীষণভাবে ওয়াকিবহল। গায়ানাতে আমরাও ভারতীয় ফেস্টিভ্যাল দিওয়ালি পালন করে থাকি। ভারত হচ্ছে ‘ক্রিকেট-ক্রেজি ন্যাশন’। ১৯৮৭ থেকে যতবার ভারতে খেলতে এসেছি মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত প্যাশন লক্ষ্য করেছি। ভারতে আমার প্রথম শতরানের সময়ও এখানকার ক্রিকেট অনুরাগীরা অভিবাদন জানাতে কার্পণ্য করেননি। হিরো কাপের রাতও কখনও ভুলব না। মশালে মোড়া ইডেন গার্ডেন্স সেই প্রথম চাক্ষুষ করেছিলাম। আরও একটা কথা বলতে চাই। ভারতীয় ফুড আমার ভীষণ ফেবারিট। ১৯৮৭ –তে আমার প্রথম ভারত সফরের একদম শুরুতে আমি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তাই ভারতীয় ডিশ সেভাবে চেখে দেখা হয়নি। তার উপর ছিল দলের ফিজিও ড্যানিশ ওয়েইটের কড়া নজর। তবে এরপর থেকে যতবার এসেছি ভারতীয় খাবার চেখে দেখতে ভুল করিনি।”(হাসি)
কার্ল হুপারের চোখে সেরা ভারতীয় ক্রিকেটার কে প্রশ্ন করাতে হুপার বলেন-“নিঃসন্দেহে শচীন তেন্ডুলকর।দুর্দান্ত ক্রিকেটার হওয়ার পাশাপাশি খুব ভালো মনের মানুষ তিনি। একবার আমার এক শচীন ভক্ত বন্ধুকে ৫ মিনিটের কথা বলে তাঁর সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাই। পরে আড্ডা এতটাই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে সেই ৫ মিনিটটা দেড় ঘন্টার রূপ নেয়।”(হাসি)
এরপর এক ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ শেয়ার করলেন কার্ল হুপার, “জানেন এক ভারতীয় মহিলার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কেও জড়াই আমি। যার সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হই তিনি ছিলেন বিশাখাপত্তনমের মেয়ে। পেশায় ছিলেন ডাক্তার। তাঁর সঙ্গে বেশ অনেকটা সময় আমি কাটাই বিশাখাপত্তনম বিচে। আমার বয়স তখন মাত্র ২১। পরবর্তীতে বেশ কিছু বছর আমরা রিলেশনশিপে থাকি। কিন্তু ঘটনাচক্রে পরে সেটা কেটে যায়। কিন্তু স্মৃতিগুলো আজও অক্ষত! ধন্যবাদ ‘ভারত’-কে এত সুন্দর মুহূর্ত আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য(বেশ আবেগবিহ্বল কার্ল হুপার)।”
ইডেন গার্ডেনসের পড়ন্ত বিকেলে কার্ল হুপারের সঙ্গে এই আলাপচারিতা ক্রমশঃ যেন অন্তরঙ্গতা এবং মাদকতা পাচ্ছিল। একটা জিনিস ভীষণভাবে উপলব্ধি করলাম। সাংবাদিক এবং ব্রডকাস্টিং টিমের সদস্য হওয়ার মধ্যে পার্থক্য। দুটি ক্ষেত্রেই আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর তাই বলছি ক্রিকেটারদের স্টান্স কিন্তু দুটি ক্ষেত্রে দু-রকম হয়। তারকা ক্রিকেটারদের এতটা অন্তরঙ্গ রূপ বোধহয় প্রকাশ পায় না বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে। নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিলে কিন্তু এতটা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অন্যতম তারকা কার্ল হুপার। শক্ত হাতে লেগ স্টাম্প গার্ড নিয়ে প্রতিটি ডেলিভারিতে ‘রকসলিড ডিফেন্স’ করতেন মিস্টার হুপার!
অন্য খবর দেখতে ক্লিক করুন: