কিয়োটো: সাধারণত মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার জন্য যেসব স্যাটেলাইট বা শাটল তৈরি হয়, সেগুলিতে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এবার কাঠের তৈরি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল জাপান। মঙ্গলবার সেই দেশের মহাকাশ গবেষকদের দ্বারা নির্মিত বিশ্বের প্রথম কাঠের স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই স্যাটেলাইটটিকে আগামী দিনে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন অভিযানে পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে। ‘লিগনোস্যাট’ নামের এই স্যাটেলাইটটি কিয়োটো ইউনিভার্সিটি এবং সুমিতোমো ফরেস্ট্রির গবেষকরা যৌথভাবে তৈরি করেছেন। আপাতত সেটিকে প্রথমে একটি স্পেসএক্স মিশনের কাজে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাঠানো হবে এবং তারপর পৃথিবীর প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত একটি ভার্চুয়াল কক্ষপথে ছেড়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: সারাদিনে ১৬ বার সূর্যোদয় দেখছেন সুনীতা উইলিয়ামস, কেন জানেন?
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক তাকাও দোই এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “কাঠ হল এমন একটি উপাদান যা থেকে আমরা যেমন বাড়িঘর তৈরি করে তাতে বসবাস করতে পারি, সেই একইভাবে মহাকাশে স্থায়ী কোনকিছু পাঠানোর জন্য কাঠকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ, কাঠের তৈরি মহাকাশযান বহু বছর ধরে কাজ করতে সক্ষম হবে”। উল্লেখ্য, নাসা যেভাবে চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে গাছ লাগানো এবং কাঠের ঘর তৈরির যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেইভাবে জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এই ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। সেই কারণেই কিয়োটো ইউনিভার্সিটির বন বিজ্ঞানের অধ্যাপক কোজি মুরাতা বলেন, “উনবিংশ শতকের প্রথম দিকের বিমানগুলি কাঠের তৈরি ছিল। সেই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, কাঠের উপগ্রহও তৈরি করা সম্ভব এবং পরিবেশের কথা ভেবে আমাদের এমন ব্যাতিক্রমী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত”।
প্রসঙ্গত, কাঠ পৃথিবীর তুলনায় মহাকাশে বেশি টেকসই। কারণ সেখানে জল বা অক্সিজেনের অস্তিত্ব নেই। মূলত এই দুই উপাদানের কারণে কাঠ পচে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও, কাঠের স্যাটেলাইট ধ্বংসের পরেও সেভাবে পরিবেশের ক্ষতি করেনা। কারণ, মহাকাশের আবর্জনা কমানোর জন্য অকেজো স্যাটেলাইটগুলিকে পৃথিবীতে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হয়। আর এক্ষেত্রে, প্রচলিত ধাতব স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা তৈরি করে, যা পরিবেশকে দুষিত করে। তবে কাঠের স্যাটেলাইটগুলি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে পুড়ে যাবে। তাই এটি প্রকৃতির জন্য কম ক্ষতিকারক হবে।
দেখুন আরও খবর: