ওড়িশা এফ সি–৩ ইস্ট বেঙ্গল–১
(দিয়েগো মরিসিও–২, নন্দ কুমার) (ক্লেটন সিলভা)
আট মিনিটের মধ্যে ক্লেটন সিলভা গোল করে যখন এগিয়ে দিলেন ইস্ট বেঙ্গলকে, তখন মনে হচ্ছিল কলকাতায় ওড়িশার কাছে হারের শোধ তুলবে ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু কোথায় কী? বিরতির আগেই দুই গোল খেয়ে এবং তার কিছুক্ষণ পরেই আরও একটা গোল হজম করে লাল হলুদ তো সেই হারের গোলকধাঁধাতেই ঢুকে পড়ল। কদিন আগে সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্ট বেঙ্গল অধিনায়ক ক্লেটন আশা প্রকাশ করেছিলেন, বাকি নয়টা ম্যাচে সাতাশ পয়েন্টই লক্ষ্য। আশা করা ভাল। কিন্তু দুরাশা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইস্ট বেঙ্গলের এই টিমটার মধ্যে অনেক কিছুই নেই। যেটার সবচেয়ে বেশি অভাব তা হল ধারাবাহিকতার। তাই আজ আকাশ ভাল, তো কাল মেঘলা। শনিবারের ভুবনেশ্বর কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে এ রকমই একটা মেঘলা দিন গেল স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের টিমের। ওড়িশার বিরুদ্ধে কলকাতায় বিরতির আগে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ইস্ট বেঙ্গল হেরেছিল ২-৪ গোলে। সে প্রায় মাসখানেক আগেকার কথা। তারপরে গঙ্গা এবং মহানদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল পড়ে আছে ইস্ট বেঙ্গলেই।
ব্রিটিশ মিডফিল্ডার জাক জার্ভিস এসে গেছেন ব্রাজিলিয়ান এলিয়ান্দ্রোর বদলে। হয়তো পরের ম্যাচ থেকে খেলবেন। কিন্তু তার আগে এই ক্লেটন সিলভা, ইভান গঞ্জালেস, জর্ডন ডোহার্টি এবং অ্যালেক্স লিমাকে নিয়েই চলতে হবে স্টিভনকে। শেষ দিকে চোট সারিয়ে ওঠা কিরিয়াকুকে নামানো হল। এই হচ্ছে পাঁচ বিদেশি। তার মধ্যে জঘন্য খেললেন ইভান। মরসুমের শুরুটা খারাপ খেলেননি। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ইভান ততই দলের বোঝা হয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পাশে চিঙ্গুনলাল যতই ভাল খেলুন ইভানের দোষত্রুটি ঢেকে দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাঁর হয়নি। বিশেষ করে ৫৩ মিনিটে তাঁকে স্রেফ গতিতে হারিয়ে মরিসিও যে গোলটা করে গেলেন তা দেখা যে কোনও লাল হলুদ সমর্থকের পক্ষে হৃদয়বিদারক। ইভানের পাশে বাকি তিন ভারতীয় ডিফেন্ডার মন্দ নন। কিন্তু সেন্টার ব্যাকই যদি নড়বড়ে হন টিম জিতবে কী করে? আগের ম্যাচে গোলকিপার শুভম সেন বেশ ভাল খেলেছিলেন। কিন্তু ওড়িশার বিরুদ্ধে এদিন তিনি খুবই খারাপ। প্রায় তিরিশ গজ দূর থেকে নেওয়া নন্দ কুমারের গোলমুখী শটটা বেশ উঁচু ছিল। কিন্তু শুভম একতূ এগিয়ে থাকায় তাঁর নাগাল এড়িয়ে বলটা গোলে চলে গেল। ডিফেন্সের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারই যদি এত নড়বড়ে হন, তাহলে টিমের যা দশা হওয়ার তাই হল।
ইস্ট বেঙ্গলের মাঝ মাঠ এবং ফরোয়ার্ড লাইনের মধ্যে সেই ভেদশক্তি নেই যা ম্যাচের পর ম্যাচ তাদের জেতাতে পারবে। ওড়িশা তো গত চারটে ম্যাচের মধ্যে তিনটেতে হেরেছে। একটা ড্র করেছে। চার ম্যাচে যারা এগারো পয়েন্ট নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলা উচিত ছিল ক্লেটনদের। আট মিনিটের মধ্যে অ্যালেক্স লিমার ফরোয়ার্ড পাস ধরে বক্সে ঢোকার মুখে ক্লেটন দেখলেন গোলকিপার অমরিন্দর অনেকটা এগিয়ে এসেছেন। বুদ্ধি করে সুন্দর একটা টোকায় গোলটা করে গেলেন ক্লেটন। এবারের আই এস এল-এ তাঁর গোল হয়ে গেল ৯। তবু টিমের পয়েন্ট মাত্র ১২। টিম পড়ে আছে নয় নম্বরে। ক্লেটনের গোলটা ২৫ মিনিটেই শোধ করে দিলেন দিয়েগো মরিসিও। রেনিয়ার ফার্নান্ডেজের কর্নার থেকে ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের উপর নিয়েও ডান পায়ের টোকায় গোল করে গেলেন মরিসিও। ম্যাচে জোড়া গোল করে টিমকে জেতানোর পর তাঁকে ছাড়া আর কাউকে সেরা বাছার উপায় ছিল না। তেরো ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে ওড়িশা উঠে এল পাঁচে। নয়ে থাকা ইস্ট বেঙ্গলের পক্ষে নক আউটে যাওয়া অসম্ভব নয়, তবে কঠিন, খুব কঠিন।