তমলুক: “আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে!” মেদিনীপুর মেডিক্যালে (Midnapore Medical College and Hospital) দেহ নিতে এসে দাবি করলেন জেলে অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া যুবকের মা। গত ৫ জুলাই মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হওয়া, বছর পঁচিশের শেখ হোসেন আলির মৃতদেহ নিতে এসে, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে এমনই আর্তনাদ করেন তাঁর মা হাসনা বেগম।
গত ৫ জুলাই মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার (Midnapore Central Correctional Home) বা সেন্ট্রাল জেল থেকে নাবালিকা অপহরণের অভিযোগে ধৃত, পেশায় গৃহ শিক্ষক শেখ হোসেন আলির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। ৬ জুলাই পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার (Tamluk PS) অধীন দক্ষিণ বাগুয়ান এলাকার বাসিন্দা, বছর ২৫-র হোসেন আলির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ করা হয়। তাই দেহ নেওয়া হয়নি। উল্টে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। গতকাল অর্থাৎ সোমবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চে শুনানিও হয়।
সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর, বিচারাধীন বন্দির মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে তমলুক থানা, তমলুক সংশোধনাগার (তমলুক সাব কারেকশনাল হোম) এবং মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের (মেদিনীপুর সেন্ট্রাল কারেকশনাল হোম) সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। একইসঙ্গে, আগামী ১৫ জুলাই (সোমবার) মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এরপরই, মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরে ছেলের দেহ নিতে পৌঁছন পরিবারের সদস্যরা।
সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা যান মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালী থানায়। এরপর, বেলা ২টো নাগাদ পৌঁছন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বেলা আড়াইটা নাগাদ মৃতের মা হাসনা বিবি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর দাবি, “আমার ছেলে শিক্ষিত, টিউশন করত। ওই মেয়েটির সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। মেয়েটির বাড়ির লোক একথা জানতে পারার পরই মেয়েটির উপর অত্যাচার শুরু করে। এরপর মেয়েটির চাপেই আমার ছেলে ওকে নিয়ে চলে যায়। পরে জানতে পারি হিমাচল প্রদেশে গেছে। পুলিশ সেখান থেকে নিয়ে আসার পর থেকেই আমার ছেলের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করে। এরপর শুনি তমলুক থেকে ওকে মেদিনীপুরের জেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারপর শুনি ও নাকি আত্মহত্যা করেছে। এটা কিছুতেই আত্মহত্যা হতে পারে না। আমার ছেলেকে ওরা খুন করেছে। আমি এর সঙ্গে জড়িত সকলের শাস্তি চাই।”
আরও পড়ুন: সাতদিন আগে কুণাল বিজেপিতে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন, পাল্টা দাবি কল্যাণের
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার অধীন দক্ষিণ বাগুয়ান এলাকার বাসিন্দা শেখ হোসেন আলি নামে ওই যুবক গৃহ শিক্ষকতা করতেন। নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। মেয়েটির বাড়ির লোক এর প্রতিবাদ করে এবং মেয়েটিকে মারধর করে বলে অভিযোগ। এরপরই, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ ১৪ বছরের ওই নাবালিকা ছাত্রীকে নিয়ে হোসেন আলি নামে ওই যুবক হিমাচল প্রদেশ চলে যায় বলেই অভিযোগ। হোসেনের বিরুদ্ধে ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে হেনস্থা এবং অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তমলুক থানায়। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর গত ২৭ জুন হিমাচল প্রদেশের সোলান জেলা থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করে তমলুক থানার পুলিশ।
এরপর সেখানকার আদালতে পেশ করে তাঁকে সাতদিনের ট্রানজিট রিমান্ডে এ রাজ্যে নিয়ে আসা হয়। জুলাই তাঁকে তমলুক আদালতে পেশ করা হলে ১২ জুলাই পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পরিবারের অভিযোগ, এরপর ৩ জুলাই পর্যন্ত ওই যুবককে তমলুক উপ সংশোধনাগারে (সাব কারেকশনাল হোমে) রাখা হয়। এরপর হঠাৎই পরিবারকে কিছু না জানিয়ে ৪ জুলাই তাঁকে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে স্থানান্তর করা হয়। ৫ জুলাই সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় জেলের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে।
পুলিশের দাবি, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। কিন্তু, মৃতের মায়ের অভিযোগ, খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর ছেলেকে। মঙ্গলবার বন্ধুর দেহ নিতে এসে তমলুক আদালতের ল-ক্লার্ক শেখ সানাউল বলেন, “জেল, পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই সবটা এড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়ির লোককে না জানিয়ে ময়নাতদন্ত করেছে। মঙ্গলবারও আমরা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও সাহায্য পাইনি। আমাদের চার ঘন্টা বসিয়ে রেখে দেহ দেওয়া হয়েছে। গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। আমরা নিজেরাই গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছি।”
আরও খবর দেখুন