দেবাশিস দাশগুপ্ত
আগামিকাল শনিবার অন্তিম পর্বে দক্ষিণবঙ্গের যে নটি লোকসভা (LokSabha Election 2024) কেন্দ্রে ভোট, তার সব কটিই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। বর্তমানে এই নটি আসনই তৃণমূলের দখলে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে একমাত্র যাদবপুরের (Jadavpur Lok Sabha) অধীনে ভাঙড় ছাড়া নটি লোকসভা কেন্দ্রের সব বিধানসভা আসনই তৃণমূলের হাতে আসে। এই আসনগুলির মধ্যে কোনও আসন বিরোধীরা শাসকদলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
দক্ষিণবঙ্গের এই শক্ত মাটিতে বিরোধীদের দাঁত ফোটানো খুব সহজ নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সিপিএম তথা বামেরা দাবি করছে, এই নটি কেন্দ্রের মধ্যে তাদের অবস্থা ভালো দমদম, যাদবপুরের মতো গোটা তিনেক কেন্দ্রে। বিজেপির দাবি, উত্তর কলকাতা, দমদম, মথুরাপুর এবং যাদবপুর তাদের পাখির চোখ।
গত কয়েক মাসে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সন্দেশখালি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। সেখানে জেলবন্দি তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান বাহিনীর তাণ্ডবে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। চাষের জমি দখল করে ভেড়ি বানানো, জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া, মহিলাদের উপর নির্যাতন সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে। রেশন দুর্নীতি-কাণ্ডে নাম উঠে আসায় শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হন ইডি অফিসাররা। তারপরই সন্দেশখালিতে মুখ খুলতে শুরু করেন স্থানীয়রা। তখন থেকে শাহজাহান বেপাত্তা ছিলেন। প্রায় ৫৫দিন পর পুলিশ তাঁকে ভাঙড় থেকে গ্রেফতার করে। তাঁর এক ভাই, ঘনিষ্ঠ শিবু, উত্তমরা গ্রেফতার হন। সন্দেশখালির ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্য সরকার তা আটকাতে সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে। সন্দেশখালি নিয়ে শাসকদল বেশ বেকায়দায় ছিল। পরবর্তীকালে্ স্থানীয় কিছু বিজেপি নেতার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে ওই বিজেপি নেতাদের বলতে শোনা যায়, সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। মহিলাদের দিয়ে দুহাজার টাকার বিনিময়ে মিথ্যে অভিযোগ করানো হয়েছে। একের পর এক এ ধরনের ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির মিথ্যে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। জেলা তৃণমূলের নেতারা বলছেন, সন্দেশখালি নিয়ে আর চিন্তা নেই। যেটুকু ক্ষত ছিল, তা মেরামত হয়ে গিয়েছে। বসিরহাটে বিজেপি প্রা্র্থী করেছে সন্দেশখালির আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্রকে। তৃণমূলের প্রার্থী হলেন ২০১৪ সালের সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। সিপিএম দাঁড় করিয়েছে সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে। তিন পক্ষই দাবি করছে, লড়াই হবে জমজমাট।
আরও পড়ুন: শেষ দফার ভোটে কাল ৯ কেন্দ্রে ৯৬৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় দক্ষিণ কলকাতায় সিপিএমের প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। তৃণমূলের প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ মালা রায়, বিজেপির প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী। উত্তর কলকাতায় হাড্ডাহাড্ডি ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে তৃণমূল ছেড়ে আসা বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়, বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের মধ্যে। তৃণমূল এই আসন নিয়ে খানিক চাপে আছে নিজেদের গোলমালের কারণে। মমতা এই কেন্দ্রে্ পদযাত্রা করেছেন। দুবার সভা করেছেন কিছুটা আশঙ্কা থেকেই। দমদমে লড়াই তিনবারের প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা শীলভদ্র দত্ত এবং সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তীর মধ্যে। তিন পক্ষই জেতার ব্যাপারে আশাবাদী। সুজন কেন্দ্রের প্রায় সব বুথ একেবারে চষে ফেলেছেন। যাদবপুরে তৃণমূলের সায়নী ঘোষ, সিপিএমের সৃজন ভট্টাচার্য এবং বিজেপির অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় আছেন লড়াইয়ের ময়দানে। এখানেও লড়াই জমজমাট।
ডায়মন্ড হারবারে এবারও প্রার্থী তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম প্রার্থী দলের যুব নেতা প্রতীক উর রহমান, বিজেপির প্রার্থী হলেন অভিজিত দাস। এখানে অভিষেকের লক্ষ্য জয়ের ব্যবধান ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের থেকে আরও বাড়ানো।
এছাড়াও নজর থাকবে বারাসত, জয়নগর, মথুরাপুরের দিকে। মমতা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিটব্যুরো-সহ সকলেই প্রচার করেছেন এই নয় কেন্দ্রে। কাল চূড়ান্ত পরীক্ষা প্রার্থীদের। তারই অপেক্ষায় সকলে। বিরোধীরা বলছেন, তৃণমূলকে ভোট লুঠ করতে দেব না। শাসকদল বলছে, তৃণমূলকে ভোট লুঠ করতে হয় না। মানুষই তৃণমূলকে ভোট দিয়ে জেতায়।
অন্য খবর দেখুন