কোনও স্বাধীন স্বর, ভিন্ন মতামত থাকতে দেবে না এই নরেন্দ্র মোদির সরকার। আজ এই সরকারের যে স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক চেহারা মানুষের সামনে এসেছে, তা নতুন কিছু নয়। ভারতবর্ষের আত্মার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই অসাম্প্রদায়িক, ভাইচারা, গণতান্ত্রিক, বহুস্বরের প্রতীক ছিলেন জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী, আরএসএস–বিজেপি সেই ভিন্নস্বরের জবাব দিয়েছে ইতালিয়ান বেরেত্তা পিস্তলের গুলি দিয়ে। সেদিন তাদের কাছে ছিল এক উগ্র হিন্দু, জঙ্গি জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক সংগঠন, আজ হাতে এসেছে এক সরকার। তাই যে কোনও বিরুদ্ধ মত আজ হয় জেলে, নাহলে ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্সের চোরাগোপ্তা আক্রমণের সামনে অসহায়। সেই কর্মকাণ্ডের সবথেকে বড় কর্মসূচি হল সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা। যে শিল্পপতিরা এই জমানাতেই বিলিওনেয়ার, ট্রিলিওনেয়ার হয়ে উঠেছে, বিশ্বের ধনী তালিকায় অনায়াসে নিজেদের নিয়ে গেছে, তাদের সাহায্যেই একে একে কিনে নেওয়া হচ্ছে সংবাদমাধ্যম। সাংবাদিক মাথা ঝোঁকাবে না? সংবাদপত্রের মালিককেই কিনে নাও, চ্যানেলটাই কিনে নাও। এই ফ্যাসিস্ট চেহারা আজ সবার সামনে। ৯০ শতাংশ পঙ্গু অধ্যাপক জেলে, অতি বৃদ্ধ জেসুইট ফাদার জেলেই পচে মরেছে, সাংবাদিক জেলে, সমাজকর্মী জেলে, প্যারোলে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ধর্ষক রাম রহিম বাবা, খালাস পেয়ে যাচ্ছে গণধর্ষণে অভিযুক্ত অপরাধীরা। এবং এ খবর প্রকাশ করলে, এই দুরাচারী রাজত্বের সমালোচনা করলে রাজরোষ নেমে আসছে, এবার সেই রোষ আবার নেমে এসেছে কলকাতা টিভির ওপর। এর আগে একবার নয়, বহুবার একইভাবে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে, চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে, হয় মাথা নত করো, হাত মেলাও, হয়ে ওঠো হিজ মাস্টারস ভয়েজ, নাহলে জেলে পাঠাব, সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স দেব না, চ্যানেলেই পৌঁছে যাবে রাষ্ট্রীয় ডালকুত্তার দল। আমাদের সঙ্গেও এ জিনিস বারবার হয়েছে, সে কেবল সংবাদ পাঠিকা, খবর পাঠ করে, অ্যাঙ্কর সুচন্দ্রিমার ঘরে ৪৮ ঘণ্টা সিআরপিএফ, ইনকাম ট্যাক্সের রেড চলছে। বক্তব্য একটাই, বশ্যতা স্বীকার করো, মাথাটা নামাও। আমরা সাফ জানিয়েছি, শিরদাঁড়া বিক্রি নেই, মাথা নোয়াব না, বলে দিয়েছি ভয় পাচ্ছি না, কারণ আমরা জানি এই দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকরা আসলে ভয় দেখাতে চায়, এরা কাগুজে বাঘ। তাই আবার নতুন কায়দা, কলকাতা টিভি বন্ধ করার নতুন কায়দা শুরু হয়েছে, আমাদের জানানো হয়ছে, সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স না থাকার জন্যই আমাদের চ্যানেল আপলোড করা যাবে না, সোজা বাংলায় মানুষকে এই চ্যানেল দেখতে দেব না, তাদের হুকুম। ১৩ অক্টোবর, মিনিস্ট্রি অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং এক বেআইনি হুকুমনামায় জানিয়েছে, আমাদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেই, অতএব চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হবে। আদালতের রায় আছে, তাতে সাফ জানানো হয়েছে, আজ নয় এক বছর আগে, সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কেন সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে না তা জানাতে, এখনও তাঁরা একটা কথাও বলেননি, আজ হঠাৎ আবার নতুন প্রেমপত্র, হুকুমজারি, বন্ধ করে দেওয়া হবে আমাদের চ্যানেল, কলকাতা টিভি। এক বিচারাধীন, সাবজুডিস বিষয়ে এভাবে নাক গলানো যায় না, কিন্তু ওই যে জাতির পিতার হত্যাকারীদের সংবিধান আদালত ইত্যাদিতে বিশ্বাস থাকার কথা তো নয়। কিন্তু আমরাও আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছি, নো পাসারন, পার পাবে না, আমরা লড়ব, শেষতক লড়ব। সঙ্গে চাইছি গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষজনকে, সঙ্গে পেতে চাই এখনও বেঁচে থাকা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, সংবাদকর্মীদের সঙ্গে নিতে চাই সে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মী, দলকে যাঁরা এখনও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস রাখেন, দেশের সংবিধানের প্রতি যাঁদের আস্থা আছে। ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের কবিতার সঙ্গে গলা মিলিয়েই বলছি, হাম দেখেঙ্গে, হাম দেখেঙ্গে।
আমরা দেখব, মনে রেখো, আমরা দেখেই ছাড়ব,
আমরা সব দেখব
অনিবার্য সেই আগামী ভবিষ্যৎ, যা আমাদের,
সেই দিনও আমরা দেখব
আমরা দেখব, মনে রেখো আমরা দেখেই ছাড়ব,
আমরা সব দেখব
যখন তোমাদের সব অত্যাচার সব ফতোয়া তুলোর মতো উড়ে যাবে
আম আদমির পায়ের চাপে এই পৃথিবী থর থর করে কাঁপবে
আকাশের থেকে বাজ পড়বে তোমাদের মাথায় ওহে শাসকের দল
আমরা দেখব, মনে রেখো আমরা দেখেই ছাড়ব,
আমরা সব দেখব
যখন মহাকালের সেই দুনিয়া থেকে
নিজেদের ভগবান মনে করা মানুষগুলো উবে যাবে কর্পূরের মতো
যখন মানুষ দখল নেবে তার হৃতসাম্রাজ্য কলকারখানা জলজমিন
সব মুকুট ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে
সব সিংহাসন ভেঙে দেওয়া হবে
আমরা দেখব, মনে রেখো আমরা দেখেই ছাড়ব,
আমরা সব দেখব
নাম থাকবে কেবল তাঁর, যিনি আছেন অথবা নেই
যিনি দ্রষ্টা এবং দৃষ্টি,
আমিই সত্য এই আওয়াজ উঠবে দিকে দিগন্তরে
যে সত্য তুমি, যে সত্য আমি
ক্ষমতা দখল করবেই অমৃতের পুত্ররা
সেই আমি সেই তুমি, আমরা।
আমরা দেখব, মনে রেখো আমরা দেখেই ছাড়ব,
আমরা সব দেখব।