অনিকেত চট্টোপাধ্যায়
সেই নেকড়ে আর হরিণছানার গল্প। নদীর ধারে জল খাচ্ছিল, জঙ্গলের নতুন আইন অনুযায়ী জল খেতে আসা কোনও প্রাণীকে বিনা দোষে মারা যাবে না, খাওয়াও যাবে না, জঙ্গলের সংবিধান। তো ছোট্ট হরিণছানা জল খাচ্ছিল, নেকড়ে ওধার থেকে বলল, অ্যাইও, আমার জল খাবার সময় তুই জল খাচ্ছিস কেন?
হরিণ বলল, নেকড়ে মশাই জল তো প্রচুর আর আমার চেষ্টা পেয়েছে তাই এটটু জল খাচ্ছি। নেকড়ে খানিক ভেবে বলল, তুই মনে হচ্ছে আমার থেকেও বেশি জল খাচ্ছিস। হরিণ বলল, তা কী করে হয়, আপনার শরীর তো আমার তিনগুণ। নেকড়ে আবার খানিক ভেবে বলল, কিন্তু এটা তো ঠিক যে তুই আমার জল এঁটো করে দিয়েছিস। এই অপরাধের শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।
হরিণছানা বলল, এবারও আপনি ঠিক বললেন না। আপনি জল খাচ্ছেন নদীর উপরে, আমি খাচ্ছি নীচে, আর নদীর জল এঁটো হয় নাকি। নেকড়ে এবার লাফ দিল, গর্জন করল, দাঁত বের করল, বলল, এইবারে মনে পড়েছে, তুই নয়, তোর বাবা আমার জল ঘুলিয়ে দিয়েছিল কাল, সেই দোষেই তোকে আমি মারবো, তোর মাংস খাবো।
এই এতটা পড়িয়ে মাস্টারমশাই বলতেন, এই গল্পের মূল শিক্ষা, দুরাত্মার, দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। হ্যাঁ, সেই দুর্জনরা আবার কলকাতা টিভির সামনে, কলকাতা টিভি বন্ধ করতে চায়। সিবিআই পাঠাল, কিছু হল না, কলকাতা টিভির মুখ্য সম্পাদক আর পি টেকভিশনের চেয়ারম্যান কৌস্তুভ রায়কে কদিনের জন্য জেলে পাঠাল, কিছু করা গেল না।
আমরা আমাদের চতুর্থ স্তম্ভে যথারীতি সাম্প্রদায়িক, দাঙ্গাবাজ, সংবিধান বিরোধী, সংখ্যালঘু বিরোধী, স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতক আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে লাগাতারভাবে বলেছি। এরপর পরপর ইনকাম ট্যাক্স হানা, কলকাতা টিভি দফতরে বেআইনিভাবে হানা, খবর করতে বাধা দেওয়া, সংবাদ উপস্থাপিকাকে, সাংবাদিকদের, অসাংবাদিক কর্মচারীদের হেনস্থা করে চলেছে। বক্তব্য একটাই বশ্যতা স্বীকার করো, মাথাটা নামাও।
আমরা সাফ জানিয়েছি, শিরদাঁড়া বিক্রি নেই, মাথা নোয়াবো না। বলে দিয়েছি, ভয় পাচ্ছি না, কারণ আমরা জানি এই দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকরা আসলে ভয় দেখাতে চায়, এরা কাগুজে বাঘ। তাই আবার নতুন কায়দা, কলকাতা টিভি বন্ধ করার নতুন কায়দা শুরু হয়েছে। আমাদের জানানো হয়েছে, সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স না থাকার জন্যই আমাদের চ্যানেল আপলোড করা যাবে না। সোজা বাংলায় মানুষকে এই চ্যানেল দেখতে দেব না, তাদের হুকুম। ১৩ অক্টোবর মিনিস্ট্রি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং এক বেআইনি হুকুমনামায় জানিয়েছে, আমাদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেই, অতএব চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ওহে রাজা, শুনে রাখো, শিরদাঁড়া বিক্রি নেই, নো কম্প্রোমাইজ
আমরা লড়ব, আমাদের পক্ষে আদালতের রায় আছে। আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ আছেন, যাঁরা এখনও মাথা নোয়াননি। কলকাতা টিভির লক্ষ লক্ষ দর্শক আছেন যাঁরা প্রতিদিন আমাদের অনুষ্ঠান দেখেন। আমরা জানি আরও বড় আঘাত আসতেই পারে। কিন্তু না স্যার, শিরদাঁড়া বিক্রি নেই, কলকাতা টিভি ঝুকেগা নহি।