Thursday, July 3, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ
Fourth Pillar

Fourth Pillar | বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ

ঘুরপথে তারাই ক্ষমতায় বসবে যারা এই আন্দোলন হাইজ্যাক করেছে বহু আগেই

Follow Us :

হাসিনা মিলিটারি হেলিকপ্টারে চেপে ভারতে চলে এলেন, গণভবনে লুঠপাট চলছে, বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙা চলছে। মিলিটারি প্রধান ক্ষমতা নিলেন হাতে বললেন বিক্ষোভ থামান। নতুন দেশ গড়ব ইত্যাদি। এখনও পর্যন্ত লাশের সংখ্যা ৪০০, কেউ কেউ বলছেন আরও অনেক অনেক বেশি। ৪০০-ই কি কম? এক মানব শরীরে কমসম করে ৫ লিটারের বেশি রক্ত থাকে, ৪০০ জন মানুষের লাশের অত রক্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে, বিশ্ববদ্যালয়ে, রাজপথে ছড়িয়ে আছে। ৪০০ জন মানুষ, মুসলমান, হিন্দু, ছাত্র, রিকশাওয়ালা, পথচলতি মানুষ, শিশু, পুলিশ, নেতা কবরে শুয়ে আছে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলনের লাশ, কিছু লাশ পুড়ছে, কিছু লাশ মর্গে, তাদের শণাক্তকরণই হল না। এর পরেও আরও লাশ পড়বে। কিন্তু কেন? আন্দোলন শুরু হল কোন দাবিতে, আপাতত দাবি কী? আন্দোলন যাঁরা করছেন তাঁরা কারা? সরকার কী চাইছে? সব নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনা যা হওয়ার হচ্ছে এ বাংলাতে কিন্তু সেসব আলোচনার বেশিরভাগটাই শোনা কথা আর কিছু প্রচার। যা নিয়ে শুরু হয়েছিল তা থেকে এখন সরে গেছিল গোলপোস্ট, কোটার দাবি উঠেছিল সরকার বদলের দাবি, যা ছিল আদত লক্ষ্য, আসল লক্ষ্য, এখন তা আমাদের সামনে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাভাষার, মাতৃভূমির, জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ, জিতেছিল বাঙালি, জিতেছিল ধর্মনিরপেক্ষতা, জিতেছিল মানবতা। হেরেছিল কারা? পাকিস্তান? সে তো ৭১-এই সেটলড, বাংলাদেশ তো আর নতুন করে পাকিস্তান হবে না। আসলে সেদিন হেরেছিল সেই ঘাতক দালাল রাজাকারেরা যারা বাংলা ভাষা মাতৃভাষার দাবিকে উপেক্ষা করেছিল, হেরেছিল তারা যারা এক মৌলবাদকে সামনে রেখে ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে সরব ছিল, হেরেছিল তারা যারা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তারা সেদিন হেরেছিল, কিন্তু শেষ হয়ে গিয়েছিল কি? একেবারেই নয়, তারা শেষ হলে জাতির পিতাকে হত্যা করল কারা? গণতন্ত্রকে সামরিক ছাউনিতে নিয়ে গেল কারা? তারা শেষ হয়নি, বরং তারা বার বার তাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে ফিরে ফিরে আসে, দখল নিতে চায় এই অর্জিত স্বাধীনতার। বাংলাদেশের যে কোনও আন্দোলনে, সামাজিক রাজনৈতিক যে কোনও কর্মকাণ্ডে এই দুই ধারা আছে, হেরেছে, শেষ হয়ে যায়নি। ঠিক আমাদের দেশের আরএসএস হিন্দু মহাসভা, জনসঙ্ঘ, বিজেপির মতোই এক এমন বিপজ্জনক দর্শন নিয়ে তারাও কাজ করেই চলেছে। কাজেই আপনার একচোখ যদি ভাতের লড়াইয়ের দিকে হয়, তাহলে আর এক চোখকে রাখতেই হবে এই জামাত শিবির রাজাকার হেফাজতের দিকে, আমাদের দেশে আমাদেরও রাখাই উচিত ওই আরএসএস আর তার শাখা সংগঠনের দিকে। বেশ কিছুদিন আগে এক গায়ক বন্ধু ফোন করে জানায় সে যাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে, গল্প করতে করতেই জানায় আর কে কে যাচ্ছে, খটকা লাগায় চেক করে দেখি আরএসএস-এর এক শাখা সংগঠন এখন মানবাধিকারের ব্যানার নিয়ে রাস্তায়। ওই যে একটা চোখ এই দিকেই রাখতে হবে। আমরা ভুলেছিলাম বলেই সেদিন ৭৫-এর জরুরি অবস্থার বিরোধিতার প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে আজ দেশের ক্ষমতায়।

ভাতকাপড়ের লড়াইয়ের কথা বলেই ফ্রান্সের ফার রাইটরা আর একটু হলে ক্ষমতায় আসতে চলেছিল। ভাতকাপড়ের লড়াই, চাকরির দাবি, বেশি মাইনের দাবি নিয়ে সমাজতন্ত্রের কথা বলে মুসোলিনি ক্ষমতায় এসেছিল, নাৎসি পার্টি ক্ষমতা দখল করেছিল। কাজেই যেখানে ওই মৌলবাদী স্বৈরাচারের অস্তিত্ব আছে, সেখানে যে কোনও আন্দোলনে আগে তাদের এলিমিনেট করেই, তাদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালিয়েই ওই আন্দোলনকে নিয়ে এগনোও যায়, না হলে পস্তাতে হয়। সেদিন না বুঝেছিলেন দেশের সমাজতন্ত্রীরা, না বুঝেছিলেন বামেরা, তাঁরা অটল আদবানির হাত ধরে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৌলবাদী স্বৈরাচারকে জায়গা করে দিয়েছিলেন, এ তো ইতিহাস, অস্বীকার করার তো কোনও জায়গাই নেই। কাজেই ভাতকাপড় চাকরি আর বাসস্থানের লড়াই তো হবেই, কিন্তু স্থায়ী শত্রুদেরকে সেই আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন না করতে পারলে আন্দোলন হাইজ্যাক হবে, হবেই।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | সংসদ ভবন ফুটো হয়ে গেছে, বৃষ্টি পড়ছে ভবনের ভিতরে

প্রশ্ন উঠতেই পারে যে মুক্তিযুদ্ধের এতদিন পরে কেন মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সংরক্ষণ? জায়েজ প্রশ্ন, আলোচনা হওয়া উচিত, সরকার না মানলে আন্দোলনও হওয়া উচিত। কিন্তু সেই আন্দোলনে হঠাৎ এই রাজাকার শব্দটা এল কোথা থেকে, এই যে ফোয়ারার মতো কবিতা গান বেরিয়ে এল, এসবের ভিত্তি কী? শেখ হাসিনা কি আন্দোলন যারা করছে তাঁদের রাজাকার বলেছিলেন? কোথাও? একটা তথ্য প্রমাণ? একটা ভিডিও আছে, যেখানে তিনি স্পষ্টই বলছেন যে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তি যোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারদের নাতিপুতিরা পাবে? খুব পরিষ্কার যে উনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাখা সংরক্ষণের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলছিলেন। যুক্তিটা হল, এটাই তো স্বাভাবিক যে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সংরক্ষণ থাকবে, রাজাকারদের পরিবারের জন্য তো থাকবে না। কিন্তু প্রথমে তাকে খুব চালাকি করে প্রচারের মধ্যে আনা হল যে প্রধানমন্ত্রী যিনি নাকি মুজিব কন্যা, তিনি ছাত্রদের রাজাকার বলেছেন, কাজেই স্লোগান তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, বলছে কে স্বৈরাচার স্বৈরাচার। রাজাকার শব্দটি জায়েজ স্থান পেল, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার হল, স্বৈরাচার ভার্সেস রাজাকারের লড়াই, এটাই তো বটম লাইন, এটাই তো শেষ কথাটা। শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী কি না? তাঁর দেশের মানুষ সেই রায় দিতেন, তাঁর দেশের মানুষ নির্বাচনে তাঁকে হারিয়ে দিতেন, এখন গণ আন্দোলনের ফলে তাঁকে সরে যেতে হল যেমনটা এঁর আগেও হয়েছে, কিন্তু কারা লাভবান হলেন এই আন্দোলনের ফলে? এই স্লোগানে? কারা কোটার আন্দোলনকে এই পর্যায়ে নিয়ে গেলেন? কাদের মাথা থেকে বের হল এই স্লোগান? ভাবতে হবে, ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক পরিসরে গণতন্ত্রের উপর আঘাত এসেছে বার বার। গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্তগুলো লঙ্ঘন করেছে সরকার এ নিয়ে দ্বিমত নেই, আওয়ামি লিগের নতুন করে ভাবা উচিত ছিল ছাত্র লিগের গুন্ডারাই কি দেশ চালাবে? এটাও ভাবতে হবে। কিন্তু এক বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে যদি এক রাজনৈতিক স্বৈরাচার আর আল বদর, রাজাকার, হেফাজত, জামাত আর মৌলবাদের উত্থানের মধ্যে আমাকে একটাকে বাছতেই হয় তাহলে আমি নির্দ্বিধায় বেছে নেব নিয়মতান্ত্রিক স্বৈরাচারকে, ঠিক যেভাবে আজ বেছে নিয়েছে ফ্রান্সের মানুষ, মাক্রঁকে তো একেবারে হারিয়ে দেয়নি, মধ্য আর বাম জোট ভোট পেয়েছে, আমাদের দেশে কংগ্রেস বা তৃণমূলকে বেছে নিয়েছে, বিজেপিকে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দেয়নি। এগুলোই হল সেই বোধ, লেসার এভিল গ্রেটার এভিল বাছার সাধারণ থিওরি। কারণ হাসিনাকে হারানো যায়, আওয়ামি লিগকে হারানো যায়, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করাই যায়, কিন্তু অন্য পক্ষ রাজাকার হেফাজত জামাত আল বদর আল শামস মগজের দখল নেয় সে বড় ভয়ঙ্কর। আন্দোলন শুরু হল মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংশোধনের দাবিতে, কখন? যখন সেই সিদ্ধান্ত বিচারের জন্য অপেক্ষায়, বিচারপতিরা রায় দেবেন এক মাসের মধ্যে, তবুও আন্দোলন? মেনে নিলাম, এবারে এক স্তরে এসে বিচারের রায়ও চলে এল, তুলে নেওয়া হল সেই কোটা, কিন্তু এবারে আন্দোলন, কেন গুলি চলল? এবং গুলি চলার পিছনের কারণ জানার আগেই হাসিনার পদত্যাগ, সরকারের পদত্যাগই হয়ে উঠল প্রথম আর প্রধান দাবি। কারা আসবেন তার বদলে? প্রতিবাদী ছাত্রদের কোনও দল আছে? নেই। তাহলে?

তাহলে তারাই আসবে, ঘুরপথে তারাই ক্ষমতায় বসবে যারা এই আন্দোলন হাইজ্যাক করেছে বহু আগেই। আপাতত মিলিটারি, তাদের হাত ধরে পিছনের লোকেরা খুব শিগগির সামনে আসবে। এবং এই পরিকল্পনা, এখন তো জানাই যাচ্ছে আজকের নয়, বহু বহু পুরনো, ২০২৩-এর পিঙ্ক রেভেলিউশনের কথা বলা হয়েছিল। আজ সেই ছক মেনেই আন্দোলন? হাসিনার ভুল? অসংখ্য ভুল আছে, এভাবে শক্তি দেখিয়ে আন্দোলন থামানোর দরকার ছিল কি? নিজের ফাঁদে নিজেই জড়িয়েছেন। কিন্তু তার বদলে যারা দরজায় কড়া নাড়ছে, দেশের সংখ্যালঘু মানুষদের উপরে এরই মধ্যে নামিয়ে এনেছে অত্যাচার, এরই মধ্যে আরও তীব্র হয়েছে ভারত বিরোধী জিগির। আসলে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা জারির ভুলের হাত ধরেই আমাদের দেশে উঠে এসেছিল বিজেপি, বাম সমাজতান্ত্রিকদের ভুলেই আরও বড় ক্ষমতা নিয়ে সরকার তৈরি করেছে বিজেপি। অত দূরে কেন? ২০১৩–২০১৪তেই দেখুন না, বাম দলগুলো, সমাজবাদী দল, আরজেডি প্রত্যেকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, তীব্র সমালোচনা করছেন, আন্দোলন গড়ে তুলছেন। কে ক্ষমতায় এল? বিজেপি। আজ বাম, সমাজবাদী দল, আরজেডি, কংগ্রেস প্রত্যেকে হাত মিলিয়ে সেই বিজেপিকেই হারানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ সেই বাঁকের মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল, হয় আওয়ামি লিগ জিতবে, হাসিনা থাকবেন, না হলে জামাত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসবে। হাসিনা হারলেন, মুক্তিযুদ্ধ হারল, এই জয়ে যা এল তা নিখাদ মিলিটারি শাসন। এই ছাত্ররা, এই বামেরা, এই ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষেররা যখন এই সারসত্য বুঝতে পারবেন, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে, অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও এক সুতোও যদি সুযোগ থাকে, যদি সামান্য সুযোগে ঘুরে দাঁড়ায় মানুষ, তাহলে বলব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াও।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | ক্লোজ মার্জিনে পাশ ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল বিল, কী হল? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
01:09:16
Video thumbnail
Gaza | Israel | গাজায় ৬০ দিনের যু/দ্ধ বিরতির প্রস্তাবে রাজি ইজরায়েল! কোন শর্তে? দেখুন ভিডিও
02:41:40
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে যুক্ত হল আরও ৬ ধারা, চাঞ্চল্যকর তথ্য পুলিশের হাতে
53:45
Video thumbnail
Narendra Modi | ফের বিদেশ সফরে নরেন্দ্র মোদি, ভারতের কী কী লাভ হবে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
01:40:21
Video thumbnail
Sukanta Majumdar | মিটিং-মিছিলে পুলিশি বাধা, এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ সুকান্ত মজুমদার
01:10:05
Video thumbnail
Weather Update | শুরু হবে প্রবল দু/র্যোগ, তুমুল বৃষ্টিতে ভাসবে কোন কোন জেলাদেখুন আবহাওয়ার বড় আপডেট
01:28:11
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:24:25
Video thumbnail
Chitpur Incident | চিৎপুর জোড়া খু/ন কাণ্ডে ফাঁ/সির সাজা, কী হল শিয়ালদহ কোর্টে?
01:45
Video thumbnail
Kasba Incident | বি/স্ফো/রক নি/র্যা/তিতার বাবা, কী বললেন শুনে নিন
03:27
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে মুখ খুললেন নির্যা/তি/তার বাবা, কলকাতা টিভিকে কী জানালেন?
03:27

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39