রুমেলিকা কুমার, ডঃ রুমেলিকা কুমার জানিয়েছিলেন যে অডিট চলছে, অডিট হয়ে গেলেই এই অভয়া কাণ্ডের জন্য যে ডোনেশন নেওয়া হয়েছে তার অ্যাকাউন্টের সমস্ত হিসেব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের অনেকের মনে হয়েছিল বহু ভুলভাল কথাবার্তা ওই জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন থেকে বলা হয়েছে মাঝেমধ্যেই কিন্তু এটা একটা সলিড জবাব। কিন্তু এসব বলার পরেও প্রায় মাসখানেক কেটে গেল, জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের অ্যাকাউন্টের হিসেব দেননি। আর এখন তো আরও নানান তথ্য উঠে আসছে যা বলেই দিচ্ছে যে অনেক গোলমাল আছে এই আন্দোলনের পেছনে। চোখ বুজে ভাবুন খাদ্য আন্দোলনের কথা, না ডাঃ নন্দ, ডাঃ মাহাতো, ডাঃ হালদারদের সেসব ভাবতে বলব না কারণ ওসব ভাবতে শিরদাঁড়ার উপরে মস্তিষ্ক লাগে। আমি আমাদের দর্শকদের যাঁরা সেই দিনগুলো দেখেছেন, যাঁরা দেখেছেন ট্রামভাড়া আন্দোলন, যাঁরা দেখেছেন বা শুনেছেন তেভাগা আন্দোলনের কথা, তাঁদেরকে বলছি, তাঁরা ভাবতেও পারবেন যে সেই আন্দোলন কেমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে, সে আন্দোলনের কথা কেমনভাবে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে তার জন্য এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে ডাকা হয়েছে, তাঁকে দিয়ে সেই আন্দোলনের ছবি ভিডিও ভাইরাল করা হচ্ছে? সেসব তো ছিলই না, এই তো উত্তর? ঠিক কথা, তার পরেও সে সব আন্দোলন কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম থেকে গ্রামে? এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে? মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে ফেললেন হারানের নাত জামাই, সলিল চৌধুরী লিখে ফেললেন শপথ-এর মতো কবিতা। বা নকশালবাড়ির মহিলাদের সেই আত্মত্যাগ, বেঙ্গাই জোতের সেই ১১টা লাশ আগুন হয়ে ছড়িয়ে গেল, অজিত পান্ডে লিখলেন তরাই কান্দে গো, উৎপল দত্ত লিখলেন ‘তীর’, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ছাত্ররা চললেন গ্রামে, ওই আরজি করের ডাক্তার পড়া ছেড়ে চললেন গ্রামে, পরে আমরা দেখেছি কানোরিয়ার শ্রমিক আন্দোলন, দেখেছি সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলন, দেখেছি জল জমি রক্ষার আন্দোলন, দেখেছি কৃষক আন্দোলন সেসব কি ইভেন্ট ম্যানেজারদের তৈরি ইভেন্ট ছিল? কিন্তু গত অগাস্টে আরজি করের ধর্ষণ আর হত্যার পরে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার খানিক ছিল বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানের নকলনবিশী আর বাকিটা ছিল এক ইভেন্ট।
হ্যাঁ, রীতিমতো পয়সা খরচ করে ওই ডাঃ নন্দ, ডাঃ হালদার, ডাঃ মাহাতো ইত্যাদিরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে টাকা দিয়ে এক ইভেন্ট সাজাচ্ছিলেন, আপাতত তা আমাদের সামনে। এক ইভেন্ট কোম্পানি যারা সোনার দোকান থেকে লক্ষ্মীপুজো থেকে হোলি কিংবা পয়লা বৈশাখে ইভেন্ট সাজিয়ে দেয়, তারাই দায়িত্বে ছিল এই আন্দোলনকে সাজানোর, তার বিভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরি করার, ইভেন্টে নানান রং আনার। ধরুন ওই যে একটা শিরদাঁড়া তৈরি করে হাতে নিয়ে লালবাজার চলো, গোটা কলকাতা পুলিশের শিরদাঁড়া নেই, ওনারা হাতে করে এক শিরদাঁড়া নিয়ে চললেন লালবাজার অভিযানে সেটা ছিল ওই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির তৈরি ইভেন্টের অঙ্গ। কিন্তু এসবের জন্য তো পয়সা চাই, হ্যাঁ তার ব্যবস্থাও হয়েছে আসুন গল্পটা সেখান থেকেই করা যাক। ৯ তারিখে ভোরবেলায় ঘটনা ঘটেছে আমরা জেনেছি ১০ তারিখে খবরের কাগজে, সরকারের কিছু অর্বাচীন সিদ্ধান্তে মানুষের রাগ বেড়েছে, অবিশ্বাস বেড়েছে, মানুষের বিভিন্ন সময়ে জমে থাকা রাগ হঠাৎই এক প্লাবন হয়ে নামল কলকাতার রাজপথে ১৪ তারিখে। সেই ইভেন্টের কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন রিমঝিম সিং, এক সেরা বাঙালি, তা খানিক কৃতিত্ব তাঁকে দেওয়া যায় বইকী। এরই মধ্যে ঘটে গেছে আরজি করের সেই বাথরুম ভাঙার ঘটনা, এই ধর্ষণ হত্যার মধ্যেই এক বিরাট অবিশ্বাস তৈরির মতো ঘটনা, চারিদিকে ছড়িয়ে গেল খবর, টয়লেটেই হয়েছিল খুন, সব্বাইকে অন্ধকারে রেখে সেই টয়লেটকেই বেমালুম গায়েব করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল আরজি কর প্রশাসন এবং সরকার। কাজেই দাবি এক দফা এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। মাথায় রাখুন এই কাণ্ডটা কারণ এই ঘটনায় জড়িত এক ডাক্তারবাবুর নাম এর পরেই আসবে। এসবের মধ্যেই আমরা দেখলাম এই মহানগরে বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি। স্লোগান থেকে মিছিলের আঙ্গিকে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের জলছবি। এবং সেরকম একটা দিকে ২১ অগাস্ট, ধর্ষণ হত্যার ১২ দিনের মাথায় এসবিআই-তে এক অ্যাকাউন্ট খোলা হল, মুক্ত হস্তে দান করুন। কোনও ভুল নেই, আন্দোলন চালাতে পয়সার দরকার হয় বইকী, আন্দোলন মিটিং মিছিল আয়োজনের জন্য ফান্ড রেইজিং তো নতুন কিছু নয়, সেই কবে এক আনা চাঁদা তুলতেন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা রেল আন্দোলনকে সাহায্যের জন্য, মোট ৫১ টাকা তুলে দিয়েছিলেন তখনকার রেল শ্রমিক নেতা জ্যোতি বসুর হাতে।
তো ১২ দিনের মাথায় এসবিআই-এ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হল, খুললেন প্রিয়া লাকরা, রিয়া বেরা এবং শিভম গারোদিয়া। প্রিয়া লাকরার বাড়ির ঠিকানা দেওয়া হল ঝাড়খণ্ডের ঠিকানা, কারণ তিনি ওখানকার মেয়ে। আন্দোলনে মানুষের সমর্থন ছিল, হু হু করে টাকা এল, অগাস্ট ২১ থেকে অক্টোবর ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ৪৪ লক্ষ ৫২ হাজার ১৭০ টাকা এসেছে। এত্ত টাকার দরকার ছিল? খরচের বহর বলে দিচ্ছে না, এরচেয়ে ঢের কম টাকাতেই চলে যেত, কারণ খরচ হয়েছে এই সময়ের মধ্যে মোট ৮ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৮৭ টাকা। কিন্তু এখানে কহানি মে টুইস্ট হ্যায়, এরপরেই ২৯ অগাস্ট আর একজন ডাক্তারবাবু ডাঃ শুভজিৎ সরকার আর একটা অ্যাকাউন্ট খুললেন এটাও ওই স্টেট ব্যাঙ্কে এবং এখানেও হু হু করে টাকা এল, ৩০ অগাস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ৬২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা চলে এল। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই, বলি হীরা নিলে কত শুনি? বাঘা শুধোচ্ছে, গুপি বলছে নিয়েছি যথেষ্ট। তো ওই ডাঃ প্রিয়া লাকরার টাকা এবং ডাঃ শুভজিৎ সর্দারের অ্যাকাউন্টের টাকা মেলালেই তো কোটি টাকা হয়ে গেছে, প্রতিটা সমাবেশে মানুষ কাঁচা রসিদের বিনিময়ে টাকা দিচ্ছেন, সে টাকার কোনও হিসেব দেখা যাচ্ছে না, কারণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কেবল অনলাইন ট্রান্সফার। কিন্তু আরও কি টাকার দরকার? সেপ্টেম্বর ২৬ তারিখে আবার একটা অ্যাকাউন্ট খোলা হল এবারে জুনিয়র ডক্টরস ফোরামের নামে অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট। এতদিন তাঁরা খোলেননি কেন? এতদিন কীভাবে চলছিল? যাকগে ওই দুটো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকেই হয়তো চলছিল, এবারে তাদের নিজেদের অ্যাকাউন্ট হল? তারপরে কি বাকি দুটো অ্যাকাউন্টের সব টাকা ওই অ্যাকাউন্টে চলে গেল? পাঠিয়ে দেওয়া হল? না, সবক’টা অ্যাকাউন্টই আছে। সরকারের কাছ থেকে স্বচ্ছতার দাবি যাঁরা করেন তাঁদের কাজকর্ম এত অস্বচ্ছ কেন? কেন একই আন্দোলনের জন্য একই শহরের মধ্যেই তিন তিনটে অ্যাকাউন্ট? তার মধ্যে দুটোব্যক্তিগত নামে? এর মধ্যে প্রথম অ্যাকাউন্টে যে রিয়া বেরার নাম পেয়েছেন উনিই হলেন সেই রিয়া বেরা যিনি ওই আরজি কর হাসপাতালে যে রিনোভেশন হবে তার কাগজে সই করেছিলেন। হ্যাঁ, তাঁদের সম্মতিতেই টয়লেট ভাঙা হয়েছিল, কলকাতা পুলিশ জানতে পেরে চিঠি দিয়ে তা বন্ধ করার আদেশ দেয়, কিন্তু রটনাটা এমন হয়েছিল যে আসলে সরকার থেকে বাথরুম ভেঙে প্রমাণ লোপাটের চক্রান্ত চলছে।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | অপরাধী সঞ্জয় রায়কে জেল থেকে বের করার জন্য যুক্তি সাজানো হচ্ছে
সেই রিয়া বেরা ফান্ড রেইজিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন, এই তথ্য মানুষকে জানানোর দরকার পড়েনি যে না ওটা সরকার নয়, ওটা আরজি কর প্রশাসনের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের এক টিমের যৌথ ইনস্পেকশনের পরেই ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এবং সেই সিদ্ধান্তও ১০ তারিখে, মানে ঘটনা ঘটার পরে তাঁরাই নিয়েছিলেন। যাকগে থাক সে কথা। এবারে আসি ওনাদের টাকার খরচের কথায়, দেখা যাচ্ছে ওই ডাঃ শুভজিৎ সর্দারের অ্যাকাউন্ট থেকে দুর্গাপুরে আদত অফিস কিন্তু কলকাতা থেকেই কাজ করে এমন এক ইভেন্ট ম্যানেজারের কাছে টাকা গিয়েছিল, লাখদুয়েক টাকা। কিন্তু আমার মতো অনেকেরই সন্দেহ ওইটুকুই সব নয়, একটা কোম্পানির নামে, অন্যটা ওই সংস্থার মালিক অর্ণব পালের নামে চেক গিয়েছিল এবং ওনারা সেই ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে, সেই মশাল, মোমবাতি মিছিল, গান নাটকের সেই ছবি আর দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে রাখার সেই শপথের ছবি ভাইরাল করার ব্যবস্থা করেছিলেন সমাজমাধ্যমে। ওই একই ভাবে ভাইরাল হয়েছিল সোমা বলছি-র গুজব, একই ভাবে ভাইরাল হয়েছিল পেলভিক বোন, কলার বোন ভাঙা, দেড়শো গ্রাম বীর্য বা গণধর্ষণের তত্ত্ব। হ্যাঁ এক বিরাট ইভেন্ট যেভাবে অ্যারেঞ্জ হয় সেভাবেই এক প্রোফেশনাল কোম্পানি ইনোভেডরসকে দিয়ে এই কাজ করানো হল। দেখুন এনারা কেমন ইভেন্ট অ্যারেঞ্জ করেন। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ফেস্ট থেকে সোনার দোকান থেকে গানের বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে স্বরস্বতী পুজো বা পয়লা বৈশাখ। তো মালিক বলেছেন আমরা ওই আন্দোলনকে সমর্থন করেছি এমন তো নয়, আমাদের টাকা দেওয়া হয়েছিল, আমরা টাকা নিয়ে কাজ করেছি, ক্যাশ নিতে বলা হয়েছিল, নিইনি। এই প্রথম বিদ্রোহের জন্য ইভেন্ট ম্যানেজারকে নিয়োগ করা হল, এরপরে কোনও প্রতিবাদ, আন্দোলন, ধরনা, মিছিল দেখলেই প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় আসতে বাধ্য যে কোন ইভেন্ট ম্যানেজার এই ইভেন্টটি সাজিয়েছেন। আমরা যারা এই আন্দোলনকে ওই ১৪ তারিখ বা তার ক’দিন পর থেকেই এক পথভ্রষ্ট আন্দোলন বলছিলাম, যারা বলছিলাম এই প্রকাণ্ড মিথ্যে প্রচারের মধ্যে একটা ব্যবস্থা কাজ করছে, ধন্যবাদ তমাল সাহা আর তাঁর সংস্থা নিউজ দ্য ট্রুথকে, তাঁরাই এই তথ্য মানুষের সামনে প্রথম এনে হাজির করলেন।
এরপরে অবশ্য আরও তথ্য গলগল করে বেরিয়ে আসছে, কোন কোন ডায়গনিস্টিক সংস্থা কোন স্বার্থে এই আন্দোলনের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল, কোন কোন ডাক্তারদের সংগঠনের বিনা অনুমতিতেই টাকা ট্রান্সফার হয়ে গেছে এই অ্যাকাউন্টগুলোতে, কোন ডাক্তারেরা এই ইভেন্ট কোম্পানির নিয়োগ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জিবি মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন, কেন এক সংগঠনের ফান্ড রেইজিং অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি দু’ দুটো ব্যক্তিগত নামের অ্যাকাউন্ট চলছে, এসব প্রশ্ন এখন আমাদের সামনে এসে পড়ছে। প্রশ্ন উঠছে এই ফান্ডের হিসেবের স্বচ্ছতার, যা এখনও আমাদের কাছে নেই। তবে এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি যে খুব তাড়াতাড়ি এক ন্যারেটিভ তৈরি করতে পেরেছিল তা দেখার মতো, প্রথমটা হল শিরদাঁড়া সংক্রান্ত। সমাজের অত্যন্ত এগিয়ে থাকা অংশের ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্র, ডাক্তারেরা রাজ্য রাজধানীর পুলিশকে এক ঝটকায় ক্লীব পঙ্গু কাঠের পুতুল তৈরি করার এক ন্যারেটিভ তৈরি করার জন্যই ওই শিরদাঁড়া নিয়ে হেঁটেছিলেন, লালবাজারে কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সেই শিরদাঁড়া তাঁর হাতে দিয়েওছিলেন, কিন্তু একবারও ভেবেছিলেন তাঁদের এই কাজ কতটা নৈরাজ্য বহন করে আনবে? ঘটনাচক্রে তাঁদের আন্দোলনের গঙ্গাযাত্রা তাঁরা নিজেরাই ঘটিয়েছেন, তাঁদের অনর্গল মিথ্যের ঝুড়ি আর চূড়ান্ত অনৈতিকতা এখন আমাদের সব্বার সামনে, কর্মবিরতির নাম করে যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করে পয়সা কামালেন তাঁদের মুখে শিরদাঁড়া ইত্যাদির প্রসঙ্গ কি মানায়?
সেদিনই মনে হচ্ছিল এক ম্যানুফ্যাকচার্ড কনসেন্ট বানানোর চেষ্টা চলছে, আজ এই ইভেন্ট ম্যানেজার এনে ইভেন্ট সাজানো হয়েছে জেনে আমরা সেই স্বরূপ বুঝতে পারলাম। দু’ নম্বর ঘটনা, সেই লালবাজার অভিযানের দিনেই, একটা ভিডিওর ভাইরাল হওয়া, এক পথচারী জলের বোতল বিলি করছেন বিপ্লবী ছাত্রদের হাতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন বোতলের জল। সেই ভিডিও তারপরের দিন ভাইরাল। মাত্র ৩ অগাস্ট ঢাকার রাস্তায় একই ভিডিও ভাইরাল, এক রিকশাওলা ছাত্রদের হাতে তুলে দিচ্ছে বোতলের জল। হ্যাঁ ব্যান্ডানা থেকে বোতলের জল থেকে দেশটা তোমার বাপের নাকি গান কিংবা দাবি এক দফা এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ সবটাই ছিল বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের এক নিকৃষ্ট কপি, কেন বলছি? সেই জুলাই অভ্যুত্থানের এক মাসে ৬২৪ জন মারা গিয়েছিলেন, আর কলকাতার এই তিন মাস চলা আন্দোলনে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে মাত্র একটা ঘটনায়, ওই নবান্ন অভিযানের দিনে, সেদিন অবশ্য সেখানে ডাক্তার বিপ্পবীরা ছিলেন না। তিন নম্বর হল খুব দ্রুত একের পর এক মিথ্যেকে ছড়িয়ে দেওয়া, যার অধিকাংশ মিথ্যের খবর খুব ভালো করেই জানতেন ওই ডাক্তারবাবুরা, তাঁদের নেতৃত্ব। এটা অবশ্য খানিক বিজেপি আইটি সেল-এর কায়দায় ছড়ানো হয়েছে। হ্যাঁ, এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মালিক স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন আমরা কোনও রাজনীতি করি না। হ্যাঁ তাঁরা কোনও রাজনীতি করেন না কিন্তু তাঁরা প্রতিটা রাজনৈতিক ন্যারেটিভ কীভাবে তৈরি হয় তা জেনেছেন বুঝেছেন আর তার প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু ডাঃ নন্দ ডাঃ মাহাতো ডাঃ হালদারেরা একটা জায়গা বুঝতে পারেননি, যাঁরা এই পেছন থেকে এই আন্দোলনকে ধোঁয়া দিচ্ছিলেন তাঁরা বুঝতে পারেননি যে আন্দোলন সংগ্রাম বিপ্লব লড়াইয়ের জন্য এক সততা অত্যন্ত প্রয়োজন। মানুষকে কিছুদিন তো বোকা বানানোই যায়, চিরটাকাল বোকা বানিয়ে রাখা তো যায় না আর এই জায়াগতেই চালে ভুল করেছেন ডাক্তার বিপ্লবীরা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দিয়ে বিয়ে বাড়ি হয়, সোনার দোকানের বিজ্ঞাপন হয়, বাণিজ্য হয়, প্রচার হয়, আন্দোলন হয় না, বিপ্লব হয় না সমাজ বদল হয় না।