Sunday, June 8, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | রাহুল গান্ধী জননেতা হয়ে উঠছেন
Fourth Pillar

Fourth Pillar | রাহুল গান্ধী জননেতা হয়ে উঠছেন

উত্তরপ্রদেশ আর পঞ্জাবে রাহুল গান্ধীর জনপ্রিয়তা নরেন্দ্র মোদির চেয়ে বেশি, দক্ষিণে তো বটেই

Follow Us :

নতুন সার্ভে বলছে, চারটে রাজ্যে সেদিনের পাপ্পু মোদিজিকে ছাপিয়ে উপরে উঠে গেছেন, এবং সেগুলো বড় বড় রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক আর তেলঙ্গানা। ওদিকে দলের মধ্যেই এতদিনে মোদিজিকে নিয়েই হরেক কিসিমের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উত্তরপ্রদেশে তো বিদ্রোহ, কেশবপ্রসাদ মৌর্য এখনও মনে করেন ২০২২-এ তাঁকে হারিয়েছিলেন আদিত্যনাথ যোগী, তিনি এখন তাঁর পাউন্ড অফ ফ্লেশ চাইছেন। খুলে আম বগাওয়ত। মহারাষ্ট্রে আগামী বিধানসভার বিরাট হার আপাতত কেবল সময়ের অপেক্ষা। হরিয়ানাতেও তাই। অন্যদিকে রাহুল চলে যাচ্ছেন মণিপুর, চলে যাচ্ছেন রেল শ্রমিকদের কাছে। তার উপরে এ সরকার মোদি-শাহের সরকার নয়। এ সরকার আদতে নাইডু নীতীশবাবুর সরকার। একটা ইডি রেড, ভুল করেও হতে পারে, বিহারের এক আমলার বাড়িতে, তিনি আবার নীতীশ ঘনিষ্ঠ, টেনশন শুরু হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিরোধীরা এককাট্টা শুধু নয় সংখ্যায় বাড়ছেন। ক’দিনের মধ্যে তাঁরা ২৫০ হয়ে উঠবেন। কিন্তু এসব হওয়ার আগেই বলেছিলাম, উতনা আসান নহি হোগা। ২৩৬-২৩৭ জন বিরোধীকে সামলানো ২৪০ দলের নেতার কম্ম নয়, ইন ফ্যাক্ট উনি তো এসব কখনও করেননি। উনি জীবনের ওই ১৪-১৫ বছর বাদ দিন, ওই চা বিক্রি, ভিক্ষে, সাধু হওয়া ইত্যাদি বাদ দিন ওই ১৫ বছর পরের ২০টা বছর ছিলেন আরএসএস-এর প্রচারক। এক বিষাক্ত আবহে বড় হওয়া মানুষ, মিথ্যে, ছল, চাতুরি, আর চরম ঘৃণার আবহে বড় হওয়া এক মানুষ, এই সময়েই তিনি জীবনের হার্ড রিয়েলিটিগুলোকে দেখেছেন, দেশ দেখেছেন আরএসএস-এর চোখে। তারপরের ২০ বছর বিজেপি কর্মকর্তা হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গেছেন, কিন্তু সেসব সাংগঠনিক কাজে, বিভিন্ন দলের মানুষদের সঙ্গে পরিচয়, আলাপ আলোচনা ইত্যাদি ছিল না। এরপরের ১৫ বছর তিনি গুজরাটের রাজনীতি সামলেছেন, আগে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তারপরে বিধায়ক, আর তারপরে এক্কেবারে প্রধানমন্ত্রী, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানমন্ত্রী।

জীবনে এই প্রথম উনি এক সংখ্যালঘু দলের মাথা হিসেবে দুই ধুরন্ধর রাজনীতিবিদের সাহায্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আর উল্টো দিকে এখনও এক রক সলিড ইন্ডিয়া জোটের মুখোমুখি। কাজেই বহু আগেই বলেছিলাম আসান নহি হোগা। শপথ স্পিকার ইত্যাদি কাজের শেষে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরে প্রথামাফিক ধন্যবাদ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগে নিজের ঘরে বসে সিসিটিভিতে দেখে নিতেন বিরোধীদের ভাষণ বা দেখতেনই না, এবারে হাজির থাকতে হয়েছে, আর একটা, রাহুল গান্ধীর একটা ভাষণেই বোঝা গেছে কেমন হবে আগামী দিনগুলো। জানিয়ে রাখা যাক, নির্বাচনের পরে সিএসডিএস-এর সার্ভে বলছে, উত্তরপ্রদেশ আর পঞ্জাবে রাহুল গান্ধীর জনপ্রিয়তা নরেন্দ্র মোদির চেয়ে বেশি, দক্ষিণে তো বটেই, বাংলাতে উপরে মমতা, মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে কেরালাতে রাহুল গান্ধী। মানে গ্রাফ বাড়ছে আর সেই গ্রাফ আরও বাড়ানোর জন্যই গতকাল সংসদে এসেছিলেন রাহুল গান্ধী, প্রথম থেকেই ঠিক করে এসেছিলেন ওসব রাষ্ট্রপতি ভাষণ ইত্যাদি নিয়ে একটা কথাও বলবেন না, যা ভেবে এসেছেন তাই বলবেন, খানিকটা মোদি স্টাইল। আদানি হিন্ডেনবার্গ নিয়ে আলোচনা, উনি আদানির নামও করেননি, নির্বাচনী প্রচার সেরেছিলেন, রাহুল সেটাই করলেন, ঘণ্টাখানেকের বক্তৃতায় আক্ষরিক অর্থে খিল্লি করলেন, চাটলেন, তথ্য দিলেন, আগামী এজেন্ডাগুলোকে সেট করলেন আর সবচেয়ে বড় কথা হল উনি কংগ্রেসের নেতা হিসেবে নয়, জোটের নেতা হিসেবে ভাষণ দিলেন। উঠে এল সেই বায়োলজিক্যাল প্রসঙ্গ, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্ম বায়োলজিক্যাল নয়, চারিদিকে খ্যা খ্যা করে হাসি, মজার কথা হল সরকারি বেঞ্চে তখন মৌনতা দেখার মতো। কে ডিফেন্ড করবেন? কে বলবেন যে হ্যাঁ উনি সত্যিই বায়োলজিক্যালি জন্মই নেননি।

আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারী মুসলমান ঘৃণাকে অস্ত্র করে নিজের মাথা বাঁচাতে চাইছেন

রাহুল গান্ধী বলতে শুরু করলেন, শিবের ছবি দেখিয়ে, শিবজির গলায় সাপ কেন? তা ভয় দেখানোর জন্য নয়, বরং ভয় কাটানোর প্রতীক, কেন বাঁ ধারে ত্রিশূল? কারণ তিনি চট করে অস্ত্র ধরতেই চান না, আর হাতে অভয়মুদ্রা। ডরো মত, ডরাও মত। শিবজি বলছেন ভয় পেয়ো না, ভয় দেখিও না। একই কথা পয়গম্বর বলছেন, শান্তির কথা অহিংসার কথা বলছেন যিশু, বুদ্ধ, মহাবীর, গুরু নানক। প্রত্যেকের আছে সেই অভয়মুদ্রা, ডরো মত, ডরাও মত। প্রধানমন্ত্রী আর দশবারের মতোই ভিকটিম কার্ড খেলার চেষ্টা করলেন, রাহুল গান্ধী এসব কথা বলে হিন্দু ধর্মের অপমান করছেন, মিলিত বিরোধী স্বর বলে দিল বিজেপির কাছে হিন্দুদের ঠিকেদারি নেই, নরেন্দ্র মোদি মানে পুরো হিন্দু সমাজ নয়, আরএসএস সম্পূর্ণ হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। ৫০ বারের বেশি রাহুল গান্ধীর বক্তৃতা চলাকালীন সরকার পক্ষের সাংসদ মন্ত্রীরা উঠে দাঁড়ান, তার মধ্যে নরেন্দ্র মোদি নিজেই দু’বার, অমিত শাহ চারবার, উনি তো স্পিকারের কাছে প্রোটেকশন চাইছিলেন। রাজনাথ সিং তিনবার, কিরেন রিজিজু ছ’বার, শিবরাজ সিং চৌহান তিনবার, অনুরাগ ঠাকুর ছ’বার। অশ্বিনী বৈষ্ণব চারবার, নিশিকান্ত দুবে অসংখ্যবার আর ভূপেন্দ্র যাদব পাঁচবার উঠে দাঁড়িয়ে ভাষণ থামানোর চেষ্টা করে যান। একগুচ্ছ বিষয় তিনি তুলেছেন, আমি যেগুলো খুব দরকারি সেগুলো এক এক করে বলছি, ১) সেই আইডিয়া অফ ইন্ডিয়া নিয়ে কথা বলেছেন, বিজেপি ভারতবর্ষের ধারণাকেই ভাঙতে চায়, নষ্ট করতে চায়। এক্কেবারে সরাসরি সংঘাতে নামা, আর পার কি লড়াই। আপনারা ভারতের ধারণাকেই ভাঙতে চান। ২) আপনারা আর যাই হন, হিন্দু নন, কারণ হিন্দু হিংসাতে বিশ্বাসই করেন না, গান্ধী প্রসঙ্গ এসেছে অনায়াসে, হিন্দু মানে শিবজি, যিনি শান্তি, অহিংসার কথা বলছেন, প্রত্যেক ধর্ম আসলে শান্তি অহিংসার কথাই বলেন।

৩) ভগবান রাম আপনাদের জানিয়ে দিয়েছেন ব্যস করো, এই যে আমার পাশে বসে আছেন অবধেশ প্রসাদ, উনি জিতেছেন, আপনারা হেরেছেন, কারণ আপনারাই একমাত্র হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। ৪) অগ্নীবীর, দেশের নওজওয়ানদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন আপনি, চার বছর পরে তাঁরা কী করবেন? একটা ইউজ অ্যান্ড থ্রো পলিসি চালু করেছেন যা নিন্দনীয়। ৫) মণিপুরকে আপনারা এক গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যার ফলে আপনারা নিজেরাই এখনও মণিপুরে ঢুকতেই পারছেন না, প্রধানমন্ত্রী এত জায়গাতে যাচ্ছেন মণিপুরে যাওয়ার সময় উনি পাছেন না। ৬) জম্মু থেকে কাশ্মীরকে লাদাখকে আলাদা করেছেন মানুষ তার জবাব দিয়েছেন, নিজেদের মতো করেই দিয়েছেন। ৭) আপনি গত ১০ বছর ধরে দেশের কয়েকজন বিলিওনিয়ার, হাতে গোনা দু’ তিন জন ব্যবসায়ীদের জন্যই কাজ করেছেন, আপনার জিএসটি তড়িঘড়ি করে আনার উদ্দেশ্যও সেটাই ছিল। ৭) আপনি আদানি আম্বানির জন্যই কারও সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাই এক কৃষি বিল এনেছিলেন, আপনার এই বিলের বিরোধিতা করেছিলেন দেশের অন্নদাতারা, আপনি আদানি আম্বানিদের হয়ে কাজ করছিলেন। 8) নিট পরীক্ষা ছিল মেধার অন্বেষণের জন্য, তাকে আপনি একটা কমার্শিয়াল ধান্দার জায়গা করে তুলেছেন, আপনি দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। ১০) আপনার এই দশ বছর ছিল আসলে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ্যে ঘৃণা ছড়ানোর এক অধ্যায়, যা শেষ হয়েছে, মানুষ বলে দিয়েছে আর নয়। মানে খুব পরিষ্কার, সংসদে রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন রাহুল গান্ধী সেদিকেই যাননি, তিনি এক্কেবারে শুরুর তারটা বেঁধে দিলেন, জানিয়ে দিলেন ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই হবে। এবং এসবের মধ্যে হুল ফুটিয়েছেন, খিল্লি করেছেন, বলেছেন সেই বায়োলজিকাল ভগবানের কথা। এতদিনে স্পিকারের মনে পড়েছে মর্যাদার কথা, এই লোকসভাতেই কি আমরা শুনিনি মৌন মনমোহনের সেই তীব্র শ্লেষ, শুনিনি পাপ্পুর কাহিনি, সেদিন মর্যাদার কথা মনেই ছিল না, আজ শুরুয়াতি আক্রমণেই ব্যাকফুটে স্পিকার স্যর। যদি এই শুরুর ভাষণের মার্কিং করার কথা ওঠে, মানে ১০-এ কত দেবো, তাহলে বলব রাহুল অনায়াসেই সাত পেয়েছেন। কেবল একটা জায়গাতে মনে হচ্ছিল আহা ওঁকে কেন কেউ বলে দিল না আমাদের ঠাকুরের কথা। উনি শিব, মহম্মদ, নবী, যিশু, বুদ্ধ, মহাবীর, গুরু নানকের ছবি দেখিয়ে বলছিলেন, এঁরা বলেছিলেন ডরো মৎ, ডরাও মৎ, ভয় পেয়ো না, ভয় দেখিও না। আহা, কেউ যদি ওঁকে বলতেন, আমাদের ঠাকুর সেই কবেই বলে গেছেন,

আমি ভয় করব না ভয় করব না।
দু বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না॥
তরীখানা বাইতে গেলে মাঝে মাঝে তুফান মেলে–
তাই ব’লে হাল ছেড়ে দিয়ে ধরব না, কান্নাকাটি ধরব না ॥
শক্ত যা তাই সাধতে হবে, মাথা তুলে রইব ভবে–
সহজ পথে চলব ভেবে পড়ব না, পাঁকের ‘পরে পড়ব না ॥
ধর্ম আমার মাথায় রেখে চলব সিধে রাস্তা দেখে–
বিপদ যদি এসে পড়ে সরব না, ঘরের কোণে সরব না ॥

অনেকদিন পরে সংসদে এক সাম্য ফিরে এসেছে, গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত ফিরে এসেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের চিহ্নটুকুও আর নেই, এটাই কি কম কথা?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sheikh Hasina | ফের সরাসরি বক্তব্য রাখছেন হাসিনা, কী বলছেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
Sheikh Hasina | এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা, দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Supreme Court Update | ২৭টি মাদ্রাসা ভেঙে ফেলার নির্দেশে স্থগিতাদেশ, দেখুন কী বলল আদালত
00:00
Video thumbnail
Russia-Ukraine | সবচেয়ে বড় বিমান হাম/লা ইউক্রেনে, পুতিনকে পাল্টা দেবেন জেলনস্কি? দেখুন বিগ আপডেট
00:00
Video thumbnail
G7 summit | জি-৭ বৈঠকে ডাক মোদিকে কানাডায়, কেন আমন্ত্রণ? সাংবাদিকদের জবাব দিলেন কার্নি
00:00
Video thumbnail
Mohun Bagan | ভাঙবেন তবু মচকাবেন না
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | দুয়ারে প্রসাদ বিতর্ক
11:32:51
Video thumbnail
Russia-Ukraine | সবচেয়ে বড় বিমান হা/ম/লা ইউক্রেনে, পুতিনকে পাল্টা দেবেন জেলনস্কি? দেখুন বিগ আপডেট
11:54:59
Video thumbnail
Mohun Bagan | ভাঙবেন তবু মচকাবেন না
11:45:29
Video thumbnail
Kunal Ghosh | কুণাল ঘোষকে হাজিরার নির্দেশ হাইকোর্টের, কী কারণে?
11:54:57