skip to content
Thursday, March 27, 2025
HomeScrollFourth Pillar | দিল্লির হার, বিরোধীদের সংকট
Fourth Pillar

Fourth Pillar | দিল্লির হার, বিরোধীদের সংকট

শুভেন্দু অধিকারী যতটা আনন্দিত, তারচেয়ে বেশি আনন্দিত হলেন অধীর চৌধুরী

Follow Us :

ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে, আমাদের দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই কথাটা এক্কেবারে খাপে খাপ পঞ্চুর বাপ। আপ হেরেছে, দিল্লির কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন বা শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিতের আনন্দ আর ধরে না, নিজেদের শূন্য পাওয়ার কোনও দুঃখ তাঁদের চোখেমুখে দেখাই যাবে না। ওদিকে অতিশী মারলেনা, কী কুক্ষণেই যে তাঁর বাবা-মা তাঁর নামের শেষে মার্কস লেনিনের মার আর লেনা জুড়েছিলেন কে জানে? তিনি তাঁর জয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ঝিনচ্যাক নাচ নেচে দিলেন। ওদিকে রাহুল গান্ধী বললেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই লড়েই যাব, ওনার মাথাতেও নেই যে এরপরেই আসছে বিহারের নির্বাচন সেখানে ওনাকে লালু যাদব, তেজস্বী যাদবের হাত ধরেই লড়তে হবে। বিজেপির আর বেশি কিছু করার দরকার আছে কি? খুব সোজাসুজিভাবেই দিল্লির নির্বাচনে কেবল আপ আর কংগ্রেস একজোটে লড়লে জোটের হাতেই থাকত সরকার, এবং দুই দল একসঙ্গে লড়লে প্রচারের আর একটা মোমেন্টাম দেখা যেত, বাকি দলও সঙ্গে থাকত। বামেদের এক দুটো আসন দিয়ে, সমাজবাদী দলকেও একটা আসন দিয়ে, তৃণমূলকে বাঙালি এলাকাতে একটা আসন দিয়ে ইন্ডিয়া জোট যদি নির্বাচনে নামত তাহলে দেশের রাজধানী কোনওভাবেই বিজেপির হাতে যেত না। কিন্তু এনাদের তো বিজেপিকে হারানোটা লক্ষ্যই নয়, এনাদের লক্ষ্য কীভাবে নিজেদের ইগো বজায় রাখা যায়, কীভাবে নিজেদের সুপ্রিমেসি বজায় রাখা যায়। তাকিয়ে দেখুন বিহারের দিকে, রাত কাবার করে ভোরে নীতীশ চলে এসেছিলেন বিরোধী দলের জোটে, লালুর হাত ধরে আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ঠিক তার তিনদিন আগেই তিনি অমিত শাহকে জানিয়েছিলেন, বিরোধীদের দিকে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই, কিন্তু তিনদিন পরেই পাল্টি খেয়েছিলেন। ক্রুদ্ধ অমিত শাহের প্রতিক্রিয়া ছিল, নীতীশ কুমারের জন্য দরজা বরাবরের জন্য বন্ধ হল।

কিন্তু মজাটা দেখুন, যেই মাত্র বিজেপি বুঝতে পারল কেবল নীতীশকে ভাঙিয়ে নিলেই ইন্ডিয়া জোট ধাক্কা খাবে, অজিত পওয়ারকে ভাঙালেই মহারাষ্ট্র হাতে আসবে, সেই মাত্র তারা তাদের সব ইগো, সব অতীতের কথাবার্তা ভুলে তাদেরকে আয় ভাই ঘরে আয় বলে জোটে কেবল নিল না, ভালোরকম জায়গাও দিলেন। এখনও নীতীশকুমারের সরকারকে ঢালাও সাহায্য দিয়েই যাচ্ছে মোদি সরকার। একই কথা বলা যায় চন্দ্রবাবু নাইডুর প্রসঙ্গে, তাকিয়ে দেখুন, এই সেই চন্দ্রবাবু নাইডু যিনি মোদিজি সম্পর্কে কোন কথাটা বলেননি, তিনিই এখন এনডিএ সরকারের অন্যতম পিলার, আর মোদিজি ঢালাও সমর্থন পাচ্ছেন, ঢালাও ফান্ড দিচ্ছেন। এর মানে কি এইরকম যে বিজেপি তার আদত প্রোগ্রাম ছেড়ে দিয়েছে? একবারের জন্যও যদি সেই কথা ভাবেন তাহলে ভুল করবেন, বিজেপির প্ল্যান বিজেপির নয়, তা আরএসএস-এর নির্দেশ, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন হবে, যেমনভাবে তালাকের বিরুদ্ধে বিল এসেছে, যেমনভাবে ৩৭০ ধারা তোলা হয়েছে, যেমনভাবে রাম জন্মভূমি উদ্ধার করে মন্দির হয়েছে, যেমনভাবে কাশী মথুরা ইত্যাদির কথা তোলা হচ্ছে ঠিক সেভাবেই বিজেপি দল আরএসএস-এর নির্দেশ মেনেই চলবে, অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। কিন্তু তারা জানে কখন সেই কাজ তাদের করতে হবে, তার আগে তারা যা যা দরকার সব করবে, যে কারও সঙ্গে হাত মেলাতে তাদের আপত্তি নেই। তাদের কোনও বৈঠক ডাকতে হয় না, নির্বাচনে জেতার জন্য যে কারও হাত ধরার ব্যবস্থা তাদের আছে।

কিন্তু আমাদের দেশের বিরোধী দল? সেখানে বিপ্লবী দল সিপিএম যারা আর কোনও দিনও না বাংলায় না ত্রিপুরাতে ফিরতে পারবে, যারা কেরালা হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে আছে, তারাও নিজেদের সহি বিপ্লবীয়ানা জাহির করতে বিরোধী দলের ঐক্যের এক বড় কাঁটা হয়ে আজ নয় বহুদিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। কেরালাতে কংগ্রেস নাকি বিজেপির বি টিম, হ্যাঁ এটাই কেরালা সিপিএম-এর অফিসিয়াল বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই কথা প্রকাশ্য জনসভাতেই বলেছেন গোপন বৈঠকে নয়। আবার এই বাংলাতে সেই কংগ্রেসের হাত ধরেই তাঁরা তৃণমূলকে বিজেপির বি টিম বলেন, কাঁড়িকাঁড়ি হাঁড়ি হাঁড়ি যুক্তিও দেন। কংগ্রেস কেরালাতে সিপিএমকে বিজেপির বি টিম বলে, প্রকাশ্যেই বলে, সাংবাদিক বৈঠক ডেকেই বলে। আবার সেই কংগ্রেস বামেদের সঙ্গেই তামিলনাড়ুতে জোটে আছে, সেই কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে বিহারে জোটে আছে। সারা দেশের বিরোধী জোট, আর রাজ্যে রাজ্যে সেই জোটের শরিকরা একে অন্যকে চোর, দুর্নীতিবাজ বলে যাচ্ছেন। একটা জোট তৈরি হয়েছে আজ বছর ঘুরে আবার বছর এসে গেল, একজন কনভেনর ঠিক করা গেল না। যাঁরা জোটের কনভেনর নির্বাচিত করে উঠতে পারছেন না, তাঁরা ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজনকে বেছে নিতে পারবেন? এটাই তো মানুষ ভাবছে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদিজির পুণ্যস্নান, ভারতের গণতন্ত্র বিপন্ন

আর অন্যদিকে তাকান, এই ক’দিন আগে পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে বিজেপি তাদের চেয়ে ছোট দলের নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে নিজেদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে উপমুখ্যমন্ত্রী করে রেখেছিল, আজ অনায়াসে তিনিই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এভাবেই বিজেপি এগোয় আর বিরোধীরা পিছোয়। কেবল নিজেদের লড়াইয়ে হরিয়ানা গেছে, মহারাষ্ট্র গেছে, এবারে দিল্লি গেল এবং দিল্লি যাওয়ার পরে এই বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যতটা আনন্দিত, তারচেয়ে বেশি আনন্দিত হলেন অধীর চৌধুরী, মুখ চোখ উদ্ভাসিত, মমতা বলেছিলেন কেজরিওয়ালকে জেতাবেন, কী হল? এবং এরপরে এক ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট সম্ভব? আর ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট ছাড়া জিতে আসতে পারবে বিরোধীরা? বিজেপিকে হারানো সম্ভব এই নিজেদের মধ্যে খাওয়াখায়ি করা বিরোধী দলেদের। বিজেপির গ্র্যান্ড প্ল্যানটা কী? তাকিয়ে দেখুন দিল্লির দিকে, তারা হারিয়েছে আম আদমি পার্টিকে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিকেলে এসে দলের দফতরে যা বললেন তার সিংহভাগই কংগ্রেসের জন্য। বিজেপি জানে দেশের ভোটারদের ২০ শতাংশ এখনও কংগ্রেসের দিকেই আছে, বিরোধী, আঞ্চলিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কংগ্রেসের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে তারা বিজেপিকে আটকে দিতে পারবে। যারা এখন বিজেপির পাশে আছে, তারাই সুযোগ সুবিধে বুঝে ওই দিকে চলে যাবে, চন্দ্রবাবু নাইডু বা নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক পাল্টিবাজী তো নতুন কিছু নয়। তাহলে? তাহলে তাদের প্ল্যান হল আঞ্চলিক দল, ছোট দলগুলোকে হয় নিজেদের দিকে নিয়ে আসা, আর না হলে তাদেরকে কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে না দেওয়া, প্রতিটা আঞ্চলিক দলে বিজেপির সক্রিয় এজেন্ট কাজ করছে। আবার কংগ্রেসের একাংশের সঙ্গে বিজেপির এক গোপন যোগাযোগ আছে, যারা সময়ে অসময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে এইসব আঞ্চলিক দলগুলোর বিরুদ্ধে উসকানি দেবে, বিরোধের ফাটলকে আরও চওড়া করার চেষ্টা তারা চালিয়েই যাচ্ছে। এবং এইসব আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে একনাথ শিন্ডের অভাব নেই, কাজেই সেদিকেই তাদের আপাতত নজর, যদি আর ক’দিনের মধ্যেই আপ দলকে ভেঙে টুকরো করে দেয় আমি তো অবাক হব না।

লক্ষ করুন হারের পরেই কেজরিওয়াল প্রথমেই পঞ্জাবে আপ বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন, তাঁদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন, কারণ কিছুদিন আগেই রাঘব চাড্ডার মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান, তাঁর সুর মিলছে না, এবং এগুলো বিজেপির কাছে কোনও নতুন খেলা নয়। আপ-কে নিয়ে এই খেলাটা আরও সহজ কারণ তাদের ভিত্তিই ছিল চরম কংগ্রেস বিরোধী, এখন তাদের এক অংশকে নিজেদের দিকে নিয়ে যাওয়াটা খুব অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। আর ঠিক এইভাবে একটা একটা ছোট বা আঞ্চলিক দলকে শেষ করে, ভেঙে, প্রায় ক্ষমতাহীন করার পরে তাদের সামনে থাকবে অসহায় কংগ্রেস দল আর তাদের এক অর্বাচীন নেতৃত্ব যাঁরা নিজেদের তৈরি গজদন্ত মিনারে বসে নিজেদের পোলাওয়ের ঘিয়ের গন্ধ শুঁকতে ব্যস্ত ছিলেন। দিল্লির নির্বাচনে আপ হেরেছে কেবল জোট হয়নি সেই জন্যই নয়, আরও হাজারটা কারণ ছিল, আরও হাজারটা দোষ তাদের ছিল এবং আছে। কিন্তু জোট হলে আপ এবং কংগ্রেস এর সম্মিলিত শক্তি সম্ভবত বিজেপিকে আটকাতে পারত, আপ ২২টা আসন পেয়েছে, তাদের এক অংশ গতকালের হার সামলে নিয়ে বলছে আমরা এখনও বিধানসভাতেই আছি, লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। কংগ্রেস তো বিধানসভাতেই ঢুকতে পারেনি, ওদের রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ওদিকে অজয় মাকেন বলেছেন যে আপ-এর রাজনীতি শেষ। দু’ দলের একজন নেতারও কি এই সাধারণ বুদ্ধিটুকু নেই, যে বুদ্ধি দিয়ে বিজেপির এই গ্র্যান্ড প্ল্যানের এই বিরাট পরিকল্পনাটা বোঝা যায়। পঞ্জাব ধরেই নিতে পারেন বিজেপির হাতে যাবে, যদি যায় তাহলে সারা দেশে থাকবে কেবল বাংলা, তেলঙ্গানা, কর্নাটক, তামিলনাড়ু আর কেরালা। যদি সেই গ্র্যান্ড প্ল্যানের দিকে নজর দেন তাহলে বুঝবেন, এবারে বিজেপি তার সমস্ত শক্তি নিয়ে বাংলা জয়ের লক্ষ্যে এগোবে, সাম দান দণ্ড ভেদ সবকটা অস্ত্র প্রয়োগ করবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
America | বিশ্বের কোন দেশে কী বিপদ? ভয়ঙ্কর রিপোর্ট আমেরিকার
00:00
Video thumbnail
Colour Bar | মার্চ কেমন কাটল আলিয়ার
07:19
Video thumbnail
Aishwarya Rai Bachchan | ঐশ্বর্যর গাড়িতে বাসের ধাক্কা, কী অবস্থা? কেমন আছেন ঐশ্বর্য?
02:20:22
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ১০০ দিনের কাজের শ্রমিক ক্রিকেটার মহঃ সামির বোন!
02:23:13
Video thumbnail
Bangladesh | বাংলাদেশে জরুরী ব‍্যবস্থা প্রসঙ্গে বিরাট মন্তব্য সেনাপ্রধানের, ইউনুস কি গ্রেফতার হবেন?
02:30:19
Video thumbnail
Dilip Ghosh | ফের বিতর্কিত মন্তব্য দিলীপের, এবার পুতনা দাওয়াই
02:32:35
Video thumbnail
ED | ইডির মামলায় যিনি অভিযুক্ত তিনিই সাক্ষী, বেনজির ঘটনা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে
02:35:52
Video thumbnail
Israel | পুরো ইজরায়েলে ফের হুথির হা*ম*লা, ধ্বং*সস্তূপে পরিণত হবে ইজরায়েল?
02:41:42
Video thumbnail
Sheikh Hasina | এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা, দেখুন Live
01:48:15
Video thumbnail
অদিতির সঙ্গে সাদা কালো (Sada Kalo) | এবার শুরু অর্ধেক আকাশের দাবিতে লড়াই
07:51