ওনাকে এখন উনিজি বলাটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তো আমাদের উনিজি বেনারসে নমিনেশন পেপার্স জমা দিতে গিয়ে এক বিরাট নৌটঙ্কি পেশ করেছেন। বলেছেন, গণতন্ত্রের মহোৎসবে শামিল দেশের মানুষ। দেশে নির্বাচন হবে, এক স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আছে না বলে বলা ভালো ছিল, এখন তার নখ থেকে চুল পরাধীন, তার তিন নির্বাচন কমিশনারের বাড়িতে লাঞ্চ ডিনারের মেনুও সম্ভবত নিজেরা ঠিক করেন না, করে দেশের শাসকদল আরও সংক্ষেপে বলা ভালো মোদি–শাহ। দেশে সাত দফায় নির্বাচন হচ্ছে। কেন? কারণ বিজেপির প্রচারক তো একজন, এক থেকে দশ পর্যন্ত প্রচারক তো নরেন্দ্র মোদি। দুই কি তিন দফাতে নির্বাচন হলে উনি প্রচারে যেতেন কী করে? এবং সারা দেশের প্রচার সেরে তিনি নিজের কেন্দ্রের প্রচার সারবেন, দেশের নির্বাচনী প্রচার শেষ হবে ওনার রথযাত্রা দিয়ে, নির্বাচন কমিশন সেই জন্যই ওনার নির্বাচন শুরু বা মাঝখানে রাখেননি, এক্কেবারে শেষ দফাতে রেখেছেন। এবং উত্তরপ্রদেশের ভোটও যখন মধ্য আর পূর্ব দিকে রওনা দিল, হিসেব কষে তখনই তাঁর নমিনেশন দেওয়ার দিন, সে তো এক ইভেন্ট, কাজেই তিনি সেই ইভেন্টকে মাইন্ড ব্লোয়িং করে তোলার চেষ্টা করলেন। দেশজুড়ে ওনার সাধের এনডিএ-তে এখন বড় দল কোথায়? কিন্তু যা আছে তাই সই, জানিয়ে দেওয়া হল সব্বার হাজিরা মাস্ট। তাঁরাও জানেন জিততে হলে ওনাকে চাই, কাজেই তেনারা এলেন। চন্দ্রবাবু নাইডু, যিনি তাঁর ইস্তেহারে মুসলমানদের জন্য আলাদা সংরক্ষণের কথা লিখেছেন তিনিও এলেন। গতবার বিধানসভাতে সমাজবাদী দলের সঙ্গে জোট করেছিলেন সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির ওম প্রকাশ রাজভড়, তিনিও এলেন, এলেন শিন্ডে, অজিত পাওয়ার। কিন্তু নীতীশ এলেন না, তিনি বুঝে ফেলেছেন, ঘটি উল্টেছে, তিনি সম্ভবত আবার নতুন কিছু প্ল্যান আঁটছেন। তো যাই হোক আমাদের নরেন্দ্র মোদি তো ফকির, যখন তখন ঝোলা লেকে চল পড়েঙ্গে, তিনি ওইদিন সকাল থেকে বেলা দুটোর মধ্যেই তিনবার জামাকাপড় বদলেছেন। প্রথমবার তাঁকে দেখা গেল সাতসকালে গঙ্গার সামনে পুরোহিতদের নিয়ে মন্ত্র আওড়াতে, পরনে সাদা পাঞ্জাবি গেরুয়া উত্তরীয়, সকালের মেজাজে এ তাবতকালের সবচেয়ে বড় মিথ্যেটা অম্লান বদনে বলে দিলেন, সাংবাদিককে নয়, যিনি বুম মাইকটা ধরেছিলেন। তাঁকে জানালেন, যেদিন আমি সার্বজনিক জীবনে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ করব, সেদিন আমি হারিয়ে যাব। সামনে সাংবাদিক ছিল না, থাকলে হেসে ফেলত, প্রশ্ন করত। না, আমি শিওর সাংবাদিক ছিল না, অতএব সেই প্রশ্নও কেউ করেনি।
এরপর তিনি মন্দিরে, অতএব পোশাক বদল, এবারে গেরুয়া, এক প্রকৃত বহুরূপী এখন সন্ন্যাসী, কালভৈরবের মন্দিরে পুজো দিয়ে সঙ্গে একজন পুরোহিতকে নিয়ে রওনা দেবেন ডিএম অফিসে, দাঁড়ান দাঁড়ান, জামাকাপড় বদলাতে হবে না? এবার সাদা পাঞ্জাবির ওপরে উজ্জ্বল নীল জ্যাকেট, মোদিজি চললেন। আজ পর্যন্ত সাংবাদিক হিসেবেই বহু নির্বাচন দেখেছি, মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াও দেখেছি, সেখানে ফর্মে সংবিধান মেনেই ফর্ম জমা দিতে হয়, কিন্তু উনিজি সংবিধানের শপথবাক্য পড়লেন, উনি দাঁড়িয়ে জেলাশাসক বসে, নির্দেশ না থাকলে ওনার চোদ্দ পুরুষ খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত, নির্দেশ আছে, উনি বসে রইলেন। সাধারণভাবে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ সম্মানযোগ্য মানুষ এসে টেবিলের সামনে দাঁড়ালে উঠে দাঁড়ানোই প্রথা কিন্তু উনিজি এখন নাটকে মেলোড্রামা জুড়ে দিতে চান কাজেই ডিএম বসে উনি দাঁড়িয়ে। তো ফকিরের মনোনয়নপত্র জমা হল এবং আমরা জানলাম এক ফকিরের সামান্য পুঁজি মোট ৩.০২ কোটি ফিক্সড ডিপোজিট ২.৮৬ কোটি হাতে ক্যাশ ৫৬০০০ টাকা, ব্যাঙ্কে ৮০৩০৪ টাকা, ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট ৯.১২ লক্ষ টাকা, চারটে সোনার আংটি ২.৬৮ লক্ষ টাকা। জানার পরে যে কারও গান গাইতে ইচ্ছে করবে, এবার মরলে ফকির হব গুজরাটেতে জন্ম নেবো, রে ব্যান পরে মব্লাঁ নিয়ে বসব আমি গদি জুড়ে, তোমরা যে যা বলো আমারে। কিন্তু এফিডেভিটে তো কেবল এই তথ্যই ছিল না, আরও কিছু তথ্য ছিল, তারমধ্যে একটা হল তাঁর স্ত্রীর নাম, যা তিনি ২০১৪-র আগে লুকিয়েই রেখেছিলেন, ২০১৪, ২০১৯ আর ২০২৪-এ তিনি সেই তথ্য দিয়েছেন। এবারে যা নতুন জানলাম তা হল ওনার স্ত্রীর পেশা, উনি লিখেছেন উনি জানেন না, ওনার স্ত্রীর আয়ের উৎস, উনি লিখেছেন যে উনি তাও জানেন না, ওনার স্ত্রী যশোদাবেনের আয় সম্পত্তির কোনও খবর তিনি জানেন না এবং ওনার স্ত্রীর ঋণ বা সেক্ষেত্রে সরকারের কাছে বকেয়া ইত্যাদির পরিমাণও তিনি জানেন না। কিন্তু দেশের অনেকের বাপের ভাগ্যি যে উনি ওনার স্ত্রীর নামটা জানেন। এরকম এক অসামাজিক মানুষ দেখেছেন? উনি সন্ন্যাসী? সন্ন্যাস নিয়েছেন? মব্লাঁর প্লেনে লেখেন, দেড় লাখের রোদ চশমা পরেন, ১২ কোটির মার্সিডিজে চড়েন, দিনে তিন, চার, পাঁচবার পোশাক পাল্টান, উনি সন্ন্যাসী?
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ইডি এখন অদক্ষ অফিসারে ভরে গিয়েছে, বলছেন বিচারপতি
আমাদের বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী ছিলেন, ক্ষেত্রীর মহারাজাকে লিখেছিলেন, আমার মায়ের জন্য আমার চিন্তা হয়, আপনি মাসে একটা টাকার অনুদানের ব্যবস্থা করে দিলে বড্ড উপকার হয়। ক্ষেত্রীর মহারাজা সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। ততদিনে বিবেকানন্দ আমেরিকা ঘুরে এসেছেন, কিন্তু তাঁর মনের ইচ্ছেও লিখেছিলেন শেষ জীবনটা যদি মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে দিতে পারতাম, এটা তাঁর আক্ষেপ ছিল, হ্যাঁ তিনিই বলেছিলেন গর্বের সঙ্গে বলো আমি হিন্দু। রামকৃষ্ণ মারা যাওয়ার আগে বলছেন, নরেন, লাটু, এরা সব রইল, তোমার অন্নবস্ত্রের অভাব হবে না কোনও দিন, কাকে? সারদা মা-কে, উনি হিন্দু ছিলেন, কলমা পড়ে মুসলমানও হয়েছিলেন। বুদ্ধ বোধি লাভের পরে গিয়েছিলেন যশোধরার কাছে, বলতে যে আমি তোমাকে না বলেই সংসার ছেড়েছিলাম, ভুল করেছিলাম, আমি বোধি লাভ করেছি তার কিছুটা তোমাকেও দিতে এলাম, তিনি তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথমে নিজের স্ত্রীর নাম গোপন রেখেছিলেন, বিয়ে করেছেন সেটাও গোপন রেখেছিলেন এখন তিনি খোঁজও নেন না তাঁর বিবাহিত স্ত্রীর। কয়েকজনের বক্তব্য ওসব লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ইত্যাদিদের দিন গেছে এখন প্রধানমন্ত্রীকে ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরতে হবে, সিকিউরিটির জন্য বুলেট প্রুফ মার্সিডিজে চড়তে হবে, চড়ুন, উনি প্রধানমন্ত্রীর ঘোরাফেরার জন্য প্লেনও কিনেছেন, কিনুন, কিন্তু নিজেকে ওই ফকির বলাটা ছাড়ুন, সন্ন্যাসী বলা ছাড়ুন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ফকিরির মানেটা বদলে দেবেন না, ঝোলা লেকে চল পড়েঙ্গে না বলে চলে পড়ুন, চলে গিয়ে দেখান, আর তা না পারলে ফকির ফকির বলে হুঙ্কার দেবেন না। আপনার রে ব্যান বা মার্সির্ডিজে আপত্তি নেই, আপনার নিজেকে গরিব আর ফকির আর সন্ন্যাসী বলায় আপত্তি রয়েছে। পৃথিবীর কোনও সন্ন্যাসী ২২টা ক্যামেরা রেখে গঙ্গায় ডুব দেন না, ১৫০টা স্টিল ক্যামেরা সামনে রেখে হিমালয়ের গুহায় ধ্যান করতে বসেন না।
কিসের সন্ন্যাসী? যিনি তাঁর স্ত্রীর খবরও রাখেন না? কোন ধর্ম বলে এমন রীতির কথা? রাম বনবাসে, সিংহাসনে নয়, বনবাসেও সঙ্গে সীতা। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বনবাসে, সঙ্গে স্ত্রী দ্রৌপদী, আমাদের বেদ উপনিষদে যজ্ঞ সম্পূর্ণই হত না স্ত্রীকে পাশে না রাখলে, দক্ষের যজ্ঞে শিবের ওই তাণ্ডব নৃত্য কেন? কোন হিন্দুত্বের পাঠ পড়াচ্ছেন মোদিজি? নিজের বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স? হতেই পারে, হয়, কিন্তু বিবাহিত স্ত্রী, তিনি ফর্মে লিখছেন, অথচ তিনি কী করেন? কী খান? রোজগার কীভাবে করেন? খাবার জোটে কীভাবে? তিনি জানেন না, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী? আসলে এ এক ইমেজ বিল্ডিং, এক সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর, কিসের ইমেজ? দুনিয়ার শিল্পপতিদের বিয়েতে হাজিরা দিচ্ছেন, হেঁ হেঁ করছেন, তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়েতে যাচ্ছেন, কেবল নিজের স্ত্রী বাদ দিলেই সন্ন্যাসী হওয়া যায়? নাকি তেমন বড়লোকের ঘরে কোটিপতি শিল্পপতিদের ঘরে বিয়েটা হলে এই নৌটঙ্কির দরকার হত না? দেশ আপনার পরিবার, অপনা পরিবার বলে ক্যাম্পেন চলছে, যে মণিপুরের নারীকে ধর্ষণের পরে নগ্ন করে প্যারেড করানো হল, তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন? হাথরসের ধর্ষিতার মা-বাবার পাশে? যাননি। ওগুলো পরিবার ছিল না। আসলে এক অত্যন্ত গরিব সৎ সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ ধরার জন্যই এই ব্যবস্থা। উনি চা বিক্রি করতেন, যে স্টেশনে করতেন, তার অস্তিত্বই নেই। সেই সময়ের নরেন্দ্র মোদি মানে কিশোর নরেন্দ্র মোদির ছবি আছে স্যুটেড বুটেড, সেগুলো চা বিক্রি করে হয়? দিলীপকুমার স্টাইলের চুলের বাহার? কিশোর বয়সে আমাদের ক’ জনের স্যুট পরার অভিজ্ঞতা আছে? তাও আবার এক চা বিক্রেতার? হ্যাঁ, বাবার চায়ের দোকান ছিল, রোজগারও ছিল, কেবল ওই ইমেজ বিল্ডিংয়ের জন্য চা বিক্রি আর ভিক্ষের মিথ্যে কথা বলেছেন। অজস্র মিথ্যে বলেন। ভিক্ষের গল্প বলছেন আর সেই সময়ে তাঁর ছবি পাওয়া যাচ্ছে আমেরিকা, ফ্রান্সে। ভিক্ষের টাকায় বিদেশে গিয়েছিলেন মোদিজি? আইফেল টাওয়ারের সামনে ফটো তুলিয়েছিলেন ভিক্ষের পয়সাতে? ছোটবেলায় কুমির ধরা থেকে এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে মাস্টার্স করা পুরোটা ওই মিথ্যের অঙ্গ। এবং সেই মিথ্যের কোনও আবরণও নেই, সপাটে মিথ্যে বলেই চলেছেন। কচ্ছের কোনও একটা প্রোগ্রামে আদবানিজি গিয়েছিলেন, ৮৮-তে, তিনি নাকি তখনই ডিজিটাল ক্যামেরাতে ওনার অনুষ্ঠানের ছবি তুলে মেল করে দিলেন দিল্লিতে, এটা নিউজ নেশনের সাংবাদিককে বলছেন আর হাসছেন। মানে ভাবো একবার, সেই জমানায় আমি কত টেক স্যাভি, তার পরের দিনে সেই ছবি দিল্লির কাগজে ছাপা হতে আদবানিজি তো অবাক। মানে উনি আদবানির থেকে এগিয়েই ছিলেন, এই হচ্ছেন আমাদের উনিজি, কেবল বলার সময়ে খেয়ালই করেননি যে সময়ের কথা বলছেন তখন ডিজিটাল ক্যামেরা নেই, প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরাই এল ১৯৯০-এ আর ই-মেল-এ ছবি অ্যাটাচ করা? ১৯৯৫-তে শুরু হয়।
মানে নির্জলা মিথ্যে নয়, এত মিথ্যের পরে মনে হয় উনি এক কমপালসিভ লায়ার, এটা এক ধরনের মানসিক অসুখ। এবং তারসঙ্গে নানান কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, আর অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞানের ঢিপি। কখনও শ্রাবণ মাসে মাছ মাংস খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করছেন, কখনও মেঘের তলা দিয়ে রাডার এড়িয়ে বিমান চালানোর কথা বলছেন। একবার বললেন এক আজব যন্ত্রের কথা, নালা থেকে একটা পাইপ এনে উলটো হাঁড়ির তলায় রেখে স্টোভ জ্বালিয়ে চা বানানোর কথা, নালাতে নোংরা জল জমে মিথেন গ্যাস হতেই পারে, মিথেন গ্যাস জ্বালানো যায়, অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে এমনিতেও জ্বলতে পারে, মিথেন গ্যাসকে ব্যবহারও করা যায়, কিন্তু নালি থেকে পাইপে করে এনে? ফুটপাথে জ্যোতিষ বসে টিঁয়া পাখি নিয়ে, তাদের কাছে এরকম কথা শোনা যায়, যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এবং কেন বলছেন? ওনার ইমেজ বিল্ডিং। উনি গরিব, উনি ফকির, উনি সন্ন্যাসী, উনি টেক স্যাভি, উনি বিজ্ঞান জানেন, উনি পুরান, উপনিষদ পড়েছেন এই সব মিলে উনি এক মহামানব, অবতীর্ণ হয়েছেন। এই ইমেজটা উনি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন, ওনার পাশাপাশি কিছু লোকজন সেটাতে ইন্ধন দিয়েছেন, বিশ্বের প্রত্যেক স্বৈরাচারীরা এইভাবেই তাদের ইমেজ তৈরি করে, তারা জানে ওই ইমেজ দিয়েই এক রূপকথা বিক্রি করতে হবে, সেই রূপকথাতে কিছু মানুষকে দানব বানাতে হবে। একবার এক মহামানবের ইমেজ তৈরি হলে এবার তিনি বলবেন ওই যে লুঙ্গি পরা লোকজনগুলোর জন্য দেশ এগোচ্ছে না, যে সাধারণ মানুষ ওই মহামানবের ইমেজে বিশ্বাস রেখেছেন, তিনি এবার এটাতেও বিশ্বাস করবেন এইরকমভাবেই গড়ে তোলা হিটলারের নির্দেশে সাধারণ জার্মান মানুষজন ইহুদিদের ওপর অত্যাচার করেছিল, অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। আজ ভারতে সেটাই হচ্ছে, এক কিউরেটেড ইমেজ, এক সন্ন্যাসীর ইমেজ, এক ফকিরের ইমেজ, এক সবজান্তার ইমেজ, এক প্রকাণ্ড জ্ঞানী মানুষের ইমেজ তৈরি করে ঠুঁসে দেওয়া হচ্ছে উনিজির মধ্যে। সেই তিনি যাঁর মোট সম্পদ ৩ কোটি, যিনি দিনে তিন-চারবার জামাকাপড় বদলান, যিনি জ্ঞানী কিন্তু যাঁর পড়াশুনো নিয়ে প্রশ্ন করলে জেলে পোরা হবে, যিনি ছোট্টবেলা থেকেই ভিক্ষে করে দিন কাটিয়েছেন কিন্তু সেই পয়সাতে বিদেশেও গেছেন। এই ইমেজের আর এক দিক হল উনি সৎ, উনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তিন নম্বর দিক হল ওনার ভিশন, বিকাশ উন্নয়ন আর বিশ্বগুরুর ছবি। তাও যে এক নির্ভেজাল মিথ্যে, সেটা আজ পরিষ্কার। আর পরিষ্কার বলেই হাওয়া ঘুরছে, চাকা ঘুরছে, রাজপথে সেই মহাকালের রথের ঘর্ঘর আওয়াজ, শোনা যাচ্ছে মানুষের কণ্ঠস্বর, সিংহাসন খালি করো, কি জনতা আতি হ্যায়।