২০২৪। দিল্লির তখত্ দখলের সুপার ফাইনালের আগে অ্যাডভানটেজ বিজেপির। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মণিপুর এবং গোয়া- এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলে খানিকটা হলেও দেওয়াল লিখনে সে কথা স্পষ্ট। সেমিফাইনালের ফল ৪-১। এরই মধ্যে বাংলার মতো বিজেপির বিজয়রথ থমকে গিয়েছে পঞ্জাবে। কংগ্রেস, বিজেপি, শিরোমণি অকালি দলকে সরিয়ে
পঞ্জাবে নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আম আদমি পার্টি। দিল্লির বাইরে এই প্রথম অন্য কোনও রাজ্যে সরকার গঠন করবে কেজরিওয়ালের দল। আর গোয়ার মতো ভিন রাজ্যে লড়াই করতে গিয়ে কার্যত পর্যুদস্ত হয়েছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস।
উত্তর প্রদেশের বুথ ফেরত সমীক্ষা সর্বোচ্চ ২৬৫+ আসন দিয়েছিল বিজেপিকে। ভোটের ফলও এই সংখ্যার কাছাকাছি দিয়েই গিয়েছে। কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে লাগাতার আন্দোলন, লখিমপুরে আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর বিজেপি নেতার গাড়ি কিংবা হাথরসের নির্যাতিতার কাহিনি, বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির অস্বস্তি কিছু কম ছিল না। তার আগে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে গিয়ে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগও ছিল। কেননা গঙ্গায় ভেসে গিয়েছে অগুনতি বেওয়ারিশ মৃতদেহ। কেননা অক্সিজেন না পেয়ে হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন সাধারণ মানুষ। ভোটের ফলে এ সবের কি ছাপ দেখা গেল?
গত বিধানসভার তুলনায় বিজেপির ভোটক্ষরণ হয়েছে এটা তথ্য পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। জোট বাদ রেখে একা বিজেপি’রই প্রায় ষাটটি আসন কমেছে। বিপক্ষে সমাজবাদী পার্টির সাইকেল সাতষট্টির মত আসন ছিনিয়ে নিয়েছে গেরুয়া শিবির থেকে। সেটা হয়তো ২০২৪-এর আগে অখিলেশ যাদবকে বাড়তি অক্সিজেন এনে দেবে। কিন্তু স্কোরবোর্ডে লেখা থাকবে উত্তরপ্রদেশে জয়ী দল ভারতীয় জনতা পার্টি। যোগী আদিত্যনাথ যাকে বলছেন, ‘প্রচণ্ড বহুমত’।
আরও পড়ুন: Narendra Modi: ২০২৪ নির্বাচনের ফল ঠিক করে দিয়েছে ২০২২ ফলাফল
রেকর্ড বুকে লেখা থাকবে আর একটা তথ্যও। দু’বছর পর দিল্লির ধুন্ধুমার লড়াইয়ের আগে চরম অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। গান্ধী পরিবারের মেয়ে প্রিয়ঙ্কা উত্তরপ্রদেশের মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও ভোটের বাক্সে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। ‘লড়কি হুঁ লড় সকতি হুঁ’। এই স্লোগান কি মহিলা ভোটারদের টেনে আনতে পারল? নিশ্চিত উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের সাইন বোর্ডে লেখা, ‘শূন্য হাতে ফিরি হে নাথ’। লখনউয়ের ৪০৩ আসনের বিধানসভা ভবনে, বিরোধী বেঞ্চের এক কোনায় পড়ে থাকবেন মাত্র দু’জন কংগ্রেসি বিধায়ক। মাত্র একটি আসন পেয়েছে বহুজন সমাজ পার্টি। গো-বলয়ের রাজনীতিতে শুধুমাত্র দলিত নির্ভর ভোট-ব্যাঙ্ক কি এই সময়ে দাঁড়িয়ে আর অপ্রাসঙ্গিক? যে বিএসপি এক সময় উত্তরপ্রদেশে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পেয়েছে, তাদের হাতে আজ শূন্য। তবে কি মায়াবতীর রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ? ভোটের ফলের পর সেই প্রশ্ন উঠছে।
কথায় আছে রাজধানী পৌঁছতে হলে লখনউ, উত্তরপ্রদেশের জমি পেরতে হয়। উত্তরপ্রদেশের ফল নাকি লোকসভা ভোটে নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। তাই উত্তরপ্রদেশের ফলের দিকে তাকিয়ে ছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বাংলার বিধানসভা ভোটে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও গোহারা হারতে হয়েছে বিজেপিকে। মোদি-শাহ্ জুটির রথ থামিয়ে দিয়েছে মমতার বাংলা। লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশের জয় তাই বহু কাঙ্খিত ছিল বিজেপি’র কাছে। রাজধানী দিল্লি লাগোয়া পঞ্জাব প্রদেশে কিন্তু বিজেপি বা সহযোগী শিরোমণি অকালি দলের প্রচার কাজে দেয়নি। অবশ্য পঞ্জাবে যদি কোনও দলের পতন হয়ে থাকে তো সেটা কংগ্রেসের।
ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংকে নিয়ে কংগ্রেস এমনিতেই অস্বস্তিতে ছিল। রাজ্য চালানোর সাড়ে বছরের মাথায় ক্যাপ্টেনকে সরিয়েও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া সামলাতে পারেনি কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীর পদে চরণজিৎ সিং চন্নিকে বসিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। অনেকে বলেছিলেন এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের মাস্টারস্ট্রোক। কিন্তু বাস্তবে তা ব্যুমেরাং হিসেবে দেখা গেল। পঞ্জাবের মানুষ বিকল্প হিসেবে বেছে নিলেন আম আদমি পার্টিকে।
উত্তরাখণ্ড রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর কখনও পর পর দু’বার একই দল ক্ষমতায় আসেনি। বিজেপির কাছে এটাও নজির। উত্তরাখণ্ডের ম্যাজিক ফিগার ৩৬। বিজেপি সেখানে ৪৭ আসন পেয়েছে। কংগ্রেসকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে মাত্র ১৯ আসন নিয়ে। বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে যদি কোথাও মোটামুটি লড়াই হয়ে থাকে তো সেটা গোয়ায়। যদিও সমস্ত হিসেব নিকেশ উলটে গোয়াতেও সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি।