Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | বলার অধিকার, সংসদ আর দেশের অবমাননা

Fourth Pillar | বলার অধিকার, সংসদ আর দেশের অবমাননা

Follow Us :

পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের ধারণা তৈরি হওয়ার বহু আগেই আমাদের দেশে ষোড়শ জনপদে পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রাসি, অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্র ছিল। ষোড়শ জনপদের বিশিষ্ট মানুষজনেরা বসে তাঁদের নেতা নির্বাচিত করতেন, সেই নেতাকেই রাজা বলা হত। সেই রাজা দরবারে বসেই প্রথমে অমাত্যদের এক রক্ষাকবচ দিতেন, সেই রক্ষাকবচ হল, তাঁদের ইচ্ছেমতো কথা বলার অধিকার, ইচ্ছেমতো প্রসঙ্গ উত্থাপন করার অধিকার। না, আমজনতার তো তা ছিল না, কিন্তু দরবারে উপস্থিত পাত্র অমাত্যদের, বিশিষ্ট মানুষজনদের, যাঁদের নিয়ে সেই দরবার বসত, তাঁদের এই অধিকার ছিল। কিন্তু ক্রমশ রাজতন্ত্র জেঁকে বসে, ব্রাহ্মণরা রাজার মধ্যে দেবত্বের প্রচার করতে থাকেন, কিছুদিন পরে রাজার কথা দেবতার আদেশ হয়ে দাঁড়ায়। চালকে মানে হল শাবল, দক্ষিণে কর্নাটক এলাকায় শাবলকে চালকে বলা হয়, যে উপজাতি বা গোষ্ঠীর মানুষজন চালকে নিয়ে চাষাবাদের কাজ করত তাদের চালকে বলা হত। এদের মধ্যে পুলকেশিন (এক) ক্ষমতা আর লোকবল বাড়াতে থাকেন, পাশপাশি গোষ্ঠীপতিদের হয় যুদ্ধে হারান, নাহলে তাঁরা পুলকেশিনের ক্ষমতা দেখেই আনুগত্য স্বীকার করেন। এরপর ছোটখাটো যুদ্ধ, তারপর বড় যুদ্ধ এবং চালুক্য বংশের সূত্রপাত। রাজা পুলকেশিন এক মহাধিরাজ উপাধি নেন, তারপর শ্রী পৃথিবী বল্লভ, মানে বিষ্ণুর উপাধি নেন। এক গোষ্ঠীপতি, যিনি গোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন, তিনিই হলেন দেবতা, তাঁর নির্দেশ হল দৈব নির্দেশ। 

ওদিকে পাশ্চাত্যে গণতন্ত্রের এক ধারণা এসেছে। রাজা আছেন, কিন্তু এক সংসদও আছে, যাকে ইংল্যান্ডে তখন হাউস অফ কমনস বলা হত, তার ওপরে ছিল হাউস অফ লর্ডস। তো ১৫৪১ সাল, হাউস অফ কমনস-এ প্রথম আনা হল এই বলার অধিকার, মানে সাংসদরা তাঁদের ইচ্ছেমতো কথা বলতে পারবেন, এটা তাঁদের প্রিভিলেজ। রানি এলিজাবেথের (এক) সময়ে সিংহাসনে বসা সম্পর্কিত আইন নিয়ে আলোচনা চলছিল, রানি নির্দেশ দেন এই আলোচনা বন্ধ করার, এরপরও আলোচনা চলে, রানি স্পিকারকে ডেকে পাঠান। নির্দেশ দেওয়ার পরেও আলোচনা বিতর্ক চলে, রানিকেই পিছু হঠতে হয়, এটাই সংবিধানে প্রিভিলেজ অফ ফ্রিডম অফ স্পিচ হিসেবে গৃহীত হয়। সেই ব্রিটিশ আইন আর সংবিধানের প্রভাব আছে আমাদের সংবিধানে, সেখানে সাফ বলা আছে একজন সংসদ সভায় যা বলছেন, যে বিষয় উত্থাপন করছেন, তা নিয়ে কোনও মামলা করা যাবে না, এটা একজন সংসদের অধিকার। সংবিধানসভায় সংবিধানের প্রস্তুতি পর্বে এ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। সংসদের ভেতরে বা বাইরে একজন সাংসদ কতটা বলতে পারেন, তা নিয়ে চুলচেরা বিতর্ক হয়েছে। এবং শেষমেশ ইংল্যান্ডের হাউস অফ কমনস-এর রুল নাইন এর মতোই আমাদের সাংসদদের বলার অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেখানে খুব সাফ একথাও বলা আছে যে একজন সাংসদের বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, কেউ যদি তেমন অভিযোগ উত্থাপন করেন, তাহলে তাঁকে জবাব দেওয়ার সুযোগও সাংসদের অধিকার ওই প্রিভিলেজ। অতএব তিনি প্রিভিলেজ মোশন আনবেন, স্পিকার তাঁকে সময় দেবেন, তিনি অভিযোগের জবাব দেবেন। তাহলে দাঁড়ালটা কী? সংসদের মধ্যে যে কোনও বিষয় উত্থাপন করার অধিকার সাংসদের আছে, এবং যদি তা কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে হয়, তাহলে তার জবাব দেওয়ারও অধিকার সংশ্লিষ্ট সাংসদের আছে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি ও মোদিজির নোবেলপ্রাপ্তি   

সংসদের বাইরে? সাধারণভাবে একজন সাংসদ অভিযোগ আনতেই পারেন, কিন্তু দেশের একজন আম নাগরিকের বিরুদ্ধেও যদি এই কথা বলা হয়, তাহলেও তার উপযুক্ত প্রমাণ থাকতে হবে, সেই মানুষটি আদালতে যেতেই পারেন, মামলা করতেই পারেন। বিচারক সেই প্রমাণ চাইতে পারেন এবং তার ভিত্তিতে রায় দিতে পারেন। তো আপাতত সংসদের ভেতরে একজন নয়, গোটা ট্রেজারি বেঞ্চ, মন্ত্রীরা সমেত বিজেপি সাংসদরা দাবি করছেন রাহুল গান্ধী বিদেশে গিয়ে দেশের অপমান করেছেন, তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানিয়েছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, বিরোধীদের মাইক খারাপ নয়, সরকার বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দিচ্ছেন ইত্যাদি। তো এটা নাকি দেশের অপমান, কাজেই রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে। রাহুল গান্ধী প্রিভিলেজ মোশন আনলেন, জানালেন তিনি বলতে চান, কারণ অভিযোগ তো তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে বলতে দেওয়া হল না। এই প্রথম লোকসভা এবং রাজ্যসভায়, শাসকদলের সদস্যরা সংসদ বানচাল করলেন। একদিন নয়, বেশ কয়েকদিন সংসদের ছবি একই ছিল। মজা হচ্ছে নরেন্দ্র মোডি সংসদে ঢুকেইছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে, কিন্তু তারপরেও তিনি বিদেশে গিয়ে একাধিকবার দেশের দুর্নীতি আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে খারাপ কথা বলেছেন, অনায়াসে বলেছেন। ধরুন মে ২০১৫তে সিওলে দাঁড়িয়ে মোদিজি বলছেন, কেয়া ইয়ে দেশ হ্যায়? কেয়া ইয়ে সরকার হ্যায়? ইয়ে কেয়া হি লোগ হ্যায়? মুঝে নহি পতা কি হামনে অপনে পিছলি জনম মে অ্যায়সা কোনসা পাপ কিয়া থা জো হোমে ভারত মে জনম মিলা। এরপরেই তিনি বলেছিলেন BRICKS কা ‘I’ মানে ইন্ডিয়া লড়খড়া রহা হ্যায়। টরেন্টোতে গিয়ে ওই ২০১৫তেই বলেছেন, হমারা মিশন হ্যায় স্কিল ইন্ডিয়া, পহলে ইন্ডিয়া কি পহচান থি স্ক্যাম ইন্ডিয়া। জুন ২০১৬তে দোহাতে গিয়ে বলেছেন, ভ্রষ্টাচার এক দিমক হ্যায়, দুর্নীতি এক ধরনের উইপোকা। ইসনে ভারত কো খোখলা মানে ঝাঁঝরা কর দিয়া হ্যায়। 

আচ্ছা এগুলো দেশের অপমান নয়? এগুলো সব সুবচন, আর রাহুল যা বলেছেন সেটা দেশকে অপমান? কিন্তু ওই যে, হোয়াটসঅ্যাপ খুলে দেখুন ১০টা মেসেজ জমা হয়ে পড়ে আছে। রাহুল দেশকে অপমান করেছেন। পরের যুক্তিটা একবার দেখুন, এই অসম্ভব জুড়ে যাওয়া পৃথিবীর যুগে একটা মানুষ কোথায় কী বলল, তাতে কি আলাদা করে কিছু এসে যায়? মানে ধরুন ক্যানিংয়ে বসে ডেরেক ও’ব্রায়েন একট টুইট করলেন, টরেন্টোতে বসে যিনি সেই টুইটটা পড়বেন, তাঁর কি জানার ইচ্ছেও হবে যে ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটটা ক্যানিংয়ে বসে করেছেন না কামচটকায় বসে লরেছেন? বিষয় বা ব্যক্তির গুরুত্ব কি আলাদা করে এক ছটাকও কমে বা বাড়ে? তাহলে? কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাহুল কী বললেন আর টরেন্টোতে বসে মোদিজি কী বললেন, তাতে সত্যিই কি এসে যায়? কিন্তু সেই বলার জন্য আমাদের টাকায় চলা এই সংসদ যদি অচল হয়ে পড়ে থাকে, তাহলে তার দায় তো কাউকে নিতেই হবে? তাই না। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: আদানির মালিক কে, সেই মালিকের মাথায় কে?   

আবার অন্যদিকে একটু নজর দিন, সংসদ কী নিয়ে আলোচনা করবে? দেশে মূল্যবৃদ্ধি এক চূড়ান্ত জায়গায়, দেশের বেকারত্ব রেকর্ড ছুঁয়েছে, দেশের মিডিয়া অ্যান্ড স্মল সেক্টরে রোজ তালা পড়ছে, মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে, মানুষ যেটুকু আয় করছে, তা খরচ করার সাহস পাচ্ছে না। অন্যদিকে শেয়ার বাজার টলমল, বৈষম্যের কোনও তল পাওয়া যাবে না, দেশের সংসদ অচল দেশপ্রমের ধুয়ো তুলে, কংগ্রেস জেপিসি চাইছে, যে জেপিসি বিরোধীরা চেয়েছিল টুজি স্ক্যামের বিরুদ্ধে। মনমোহন সিং জেপিসির দাবি মেনেই নিয়েছিলেন, পি সি চাকোর নেতৃত্বে জেপিসির রিপোর্টে বিলকুল ক্লিন চিট, মনে আছে? স্বাভাবিক, জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি হলে তার মাথায় থাকবে একজন শাসকদলের নেতা, কমিটির গরিষ্ঠাংশ থাকবে শাসক দলের, কোন রিপোর্ট বের হবে? আসলে সংসদে মানুষকে বোকা বানানোর খেলা চলছে। ক’দিন আগেই এই সরকারই জানিয়েছে কৃষি দফতরের ৪৪ হাজার কোটি টাকা তিন বছরেও খরচ হয়নি। এর মানে কী? সরকার বলছে কৃষকদের আমদানি দ্বিগুণ করে দেবে, অথচ সেই কৃষি দফতরের ৪৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়নি, কেউ একট শব্দ বলেছেন? কোনও আলোচনা হয়েছে? কংগ্রেস ইডি, সিবিআই, এনআইএ-র অতিসক্রিয়তা নিয়ে রাস্তায় নামছে, সঙ্গে বিরোধীরা। সেই কংগ্রেস দিল্লিতে আপ-এর বিরুদ্ধে লিকার স্ক্যামে সিবিআই চাইছে, পঞ্জাবে আপ বিরোধী খলিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে এনআইএ-র সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে, গুজরাতে বিরোধিতা করছে, ইউএপিএ-তে গ্রেফতারের বিরোধিতা করছে বামেরা, কেরলে ইউএপিএ-তে ধরপাকড় জারি। কোথাও একটা খেলা হচ্ছে, মানুষের রোজকার হাজারো সমস্যা থেকে, বেঁচে থাকার ন্যূনতম উপকরণ হাতের নাগালে চলে যাচ্ছে, দিন আনি দিন খাই মানুষদের নাভিশ্বাস উঠছে, দেশের ৮০ কোটি মানুষ সরকারের দেওয়া ফ্রি র‍্যাশন, বা অন্যান্য সামান্য ডোলের দিকে তাকিয়ে আছেন আর সেটা বজায় রাখার জন্যই কি এক বড় খেলা চলছে? গণতন্ত্র গণতন্ত্র খেলা? মানুষের কাছে প্রতিবার কিছু প্রতিশ্রুতি হাজির করা হবে, আর ভোটের লাইনে ভিড় করে মানুষ দাঁড়াবে, সরকার তৈরি হয়ে গেলেই খেলা খেলা সারা বেলা। 

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন  

রাজা আসে যায় রাজা বদলায়
নীল জামা গায় লাল জামা গায়
এই রাজা আসে ওই রাজা যায়
জামা কাপড়ের রং বদলায়…
দিন বদলায় না!
গোটা পৃথিবীকে গিলে খেতে চায় সে-ই যে ন্যাংটো ছেলেটা
কুকুরের সাথে ভাত নিয়ে তার লড়াই চলছে, চলবে।
পেটের ভিতর কবে যে আগুন জ্বলেছে এখনও জ্বলবে!
রাজা আসে যায় আসে আর যায়
শুধু পোশাকের রং বদলায়
শুধু মুখোশের ঢং বদলায়
পাগলা মেহের আলি
দুই হাতে দিয়ে তালি
এই রাস্তায়, ওই রাস্তায়
এই নাচে ওই গান গায়:
“সব ঝুট হায়! সব ঝুট হায়! সব ঝুট হায়! সব ঝুট হায়!”
জননী জন্মভূমি!
সব দেখে সব শুনেও অন্ধ তুমি!
সব জেনে সব বুঝেও বধির তুমি!
তোমার ন্যাংটো ছেলেটা
কবে যে হয়েছে মেহের আলি,
কুকুরের ভাত কেড়ে খায়
দেয় কুকুরকে হাততালি…
তুমি বদলাও না;
সে-ও বদলায় না!
শুধু পোশাকের রং বদলায়
শুধু পোশাকের ঢং বদলায়…

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
BJP | ভোটের আগে উত্তপ্ত কেতুগ্রাম, BJP মণ্ডল সভাপতির বাড়ি ভাঙচুর, হুমকি, অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে
04:42
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | শেষ হল অন্ধকার, দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে ফিরল আলো
02:13
Video thumbnail
Mamata Banerjee | তৃতীয় দফা ভোটের আগে আজ মালদায়ে জোড়া সভা করবেন তৃণমূলনেত্রী
03:19
Video thumbnail
Hasnabad News | হাসনাবাদে বাড়িতে বিস্ফোরণ, গ্রেফতার বিজেপি কর্মী
05:28
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | বন্ধ হল অবৈধ ভাবে পুকুর ভরাটের কাজ, উদ্যোগ পুরপ্রধানের
02:15
Video thumbnail
Hasnabad Arrest | হাসনাবাদে বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় BJP নেতা নিমাই দাসের ভাই দিলীপ দাস গ্রেফতার
03:23
Video thumbnail
Weather | আগামী ৭ দিন বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই, তীব্র তাপপ্রবাহের চরম সতর্কবার্তা কোন রাজ্যগুলিতে?
01:59
Video thumbnail
WBJEE 2024 | তাপপ্রবাহের মধ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা, পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কি ব্যবস্থা ?
05:04
Video thumbnail
Baguiati News | তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুন, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ, আটক ১৩
03:41
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | দেখে নিন আজ সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
15:42