Sunday, June 8, 2025
Homeফিচারবাংলা সাহিত্যে সমরেশ মজুমদারের উত্তরাধিকার বিরাজ করবে কালপুরুষের মতো

বাংলা সাহিত্যে সমরেশ মজুমদারের উত্তরাধিকার বিরাজ করবে কালপুরুষের মতো

Follow Us :

সমরেশ মজুমদার নেই খবরটা পাওয়ার পরেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। জানতাম বুকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে দিন পনেরো আগে তিনি বাই পাসের ধারে একটা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে শুনলাম হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ভেবেছিলাম অন্য বারের মতো এবারও ফিরে আসবেন। গত কয়েক বছর ধরেই মাঝে মাঝেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হত। এবং ডাক্তারের নিষেধে ছাড়তে হয়েছিল সিগারেট এবং মদ্য পান। বৌদি চলে গেছেন বছর দুয়েক আগে। শ্যামপুকুর স্ট্রিটের তিন তলার ঘরেই থাকতেন। ফোন করলে বলতেন, ডাক্তার নীচে নামতে বারণ করেছেন। সোমবার বিকেল পাঁচটা পঁয়তাল্লিশের পর তার আর কোনও দরকার পড়ল না।

সমরেশদার সঙ্গে কত স্মৃতি। সম্পর্কটা প্রায় সিকি শতাব্দীর। তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচয় তো সেই ১৯৭৬ সাল থেকে। বার্ষিক আনন্দবাজারে দৌড় উপন্যাস বেরনোর পর থেকে। সেই যে বাংলা সাহিত্যে সমরেশদার দৌড় শুরু হল তা শেষ হল এত দিনে। দৌড় দিয়ে সমরেশদার জয়যাত্রা শুরু হলেও তাঁর নামটা বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ঘরে ঘরে পৌছে গেল দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত উত্তরাধিকার উপন্যাস থেকে। এর পর সেটা ট্রিলজি হয়ে গেল। বেরোল কালবেলা এবং কালপুরুষ। এই ট্রিলজিই তাঁকে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন করে দিয়েছে। পরবরর্তী কালে গর্ভধারিনী, অগ্নিরথ, সাতকাহন, সিংহবাহিনী, এত রক্ত কেন, কলিকাতায় নব কুমার। বলতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে। শুধু পশ্চিম বঙ্গে নয়, সমরেশদার সাহিত্য ভীষণ রকম জনপ্রিয় বাংলাদেশে। হয়তো একটু বেশিই। সমরেশদা উত্তর বঙ্গের লোক। একেবারেই বাঙাল নন। কিন্তু তাঁর লেখার সঙ্গে একটা আত্মীয়তা অনুভব করত বাংলাদেশের মানুষ। আর আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে তাঁর যে কত ভক্ত তা গুণে শেষ করা যাবে না। সে দেশের ট্যাক্সি চালক তাঁর পরিচয় পেয়ে ভাড়া নেয়নি। অবশ্যই সেই ট্যাক্সিচালক ছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। আর গত পঁচিশ বছরে সমরেশদা বছরের একটা বড় সময় থাকতেন আমেরিকা কিংবা বাংলাদেশে। কলকাতা ছিল তাঁর তৃতীয় পছন্দের জায়গা। তবে সমরেশদার সাহিত্যে, বিশৈষ করে উপন্যাসে বাংলাদেশ যতটা এসেছে তার চেয়ে বেশি এসেছে আমেরিকা।

তবে জীবনের শেষ পর্বে এসে কী উপন্যাস কী ছোট গল্পে সমরেশদা ফিরে গেছেন তাঁর নিজের জায়গায়। উত্তর বঙ্গে। গত বছর শারদীয়ায় তাঁর উপন্যাস উনকীর পটভূমিকা উত্তর বঙ্গের চা বাগান। তার আগে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে যে শেষ উপন্যাস লিখেছেন তা হল আলোকরেখা। এটাও উত্তর বঙ্গের পটভূমিতে লেখা। স্বাধীনতার প্রাক্কালে চা বাগানের একটি নিটোল গল্প। ১০ মার্চ, ১৯৪২ সালে জন্ম। সেই বিচারে একাশি পেরিয়ে বিরাশিতে পা দিয়েছিলেন দীর্ঘকায়, সুদর্শন, এক মাথা ঝাকড়া চুলের মানুষটি। যত সহজে তিনি পাঠক এবং পাঠিকার মন জয় করেছিলেন তত সহজ কাজটা ছিল না। কারণ তাঁর নামে একজন কিংবদন্তী সাহিত্যিক বিরাজ করছিলেন। আর সেই সমরেশ বসুর সাম্রাজ্য ছিল বিশাল। তবে একই নামের সাহিত্যিককে বেশ স্নেহ করতেন অগ্রজ সমরেশ। একবার বলেও ছিলেন, ” তোমার কোনও ডাক নাম আছে? আমার কিন্তু একটা ডাকনাম আছে। সুরথ।” সমরেশদরা কোনও ডাক নাম ছিল না। একটা নামেই তিনি ডাকসাইটে লেখক হয়ে যান।

তবে শুরুটা যে খুব সহজ ছিল তা বলা যাবে না। উত্তর বঙ্গ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন পড়াশোনা করতে। প্রথমে স্কটিশচার্চ কলেজে এবং তার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি চলতে লেখা। একটা ছোট গল্প দেশ পত্রিকায় জমা দিয়ে বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করা। তখন দেশের গল্প দেখতেন বিমল কর। জানা গেল গল্পটা মনোনীত হয়েছে। বেরোবে কয়েকদিনের মধ্যে। কিন্তু কদিন পরে গল্পটা ফেরত এল ডাকযোগে। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে টেলিফোনে এক প্রস্থ গালিগালাজ বিমল করকে। সব শুনে বিমলবাবু খুব আলতো করে বললেন, পিওনকে গল্পটা দেওয়া হয়েছিল প্রেসে পাঠানোর জন্য। ও ভুল করে গল্পটা ডাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আপনি আবার ওটা দিয়ে যান। এবং সেই গল্পটা প্রকাশিত হয়েছছিল দেশে। সমরেশদার প্রথম উপন্যাসের সময়ও সেই গন্ডগোল। সাগরময় ঘোষ নিজে চাইলেন উপন্যাস। নির্ধারিত দিনের মধ্যে তা দেওয়াও হল। উপন্যাস পড়ে খুব খুশি সাগরময়। সেটা ছিল ১৯৭৫। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম শতবার্ষিকী। পুজোর আগেই সমরেশ কাছের মানুষদের জানিয়ে দিয়েছিলেন  শারদীয়া দেশে তাঁর উপন্যাস বেরনোর কথা। কিন্তু এর কয়েক দিন পরে সাগরময় দাকলেন সমরেশকে। দিলেন সেই দুঃসংবাদ। শরৎচন্দ্রের একটা অপ্রকাশিত উপন্যাস পাওয়া গেছে। সেটা ছাপা হবে। তোমারটা এবারের পুজোয় বেরোবে না। লজ্জায়, অপমানে সমরেশ সেই পুজোয় কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে গেলেন এক অজ্ঞাত স্থানে। সেই উপন্যাসটাই হল দৌড়। যা বেরোতেই সমরেশ সুপারহিট।

শুরুর দিকে সবারই একটা মেন্টর লাগে। সমরেশের সেই মেন্টর ছিলেন বিমল কর। প্রতি শনিবার কার্জন পার্কে তরুণ সাহিত্যিকদের নিয়ে আড্ডা বসাতেন বিমল কর। সেই আড্ডায় নিয়মিত ছিলেন সমরেশ। সেখানেই আরেক কৃতী এবং অকালপ্রয়াত লেখক বরেণ গঙ্গোপাধ্যায় সমরেশ সম্পর্কে বলেছিলেন, “এ ছেলে উত্তর বঙ্গ থেকে মাথায় চায়ের পেটি নিয়ে এসেছে। না বেচে যাবে না।” কথাটা ভীষণভাবে খেটে গেল। শুধু সাহিত্য নয়। বাংলা সিরিয়ালের জনকও ছিলেন সমরেশ। তাঁর লেখা গল্প তেরো পার্বণ নিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলা সিরিয়াল। পরিচালনা করেছিলেন জোছন দস্তিদার। সব্যসাচী চক্রবর্তী ছিলেন নায়ক গোরার ভূমিকায়। সেখান থেকেই বাংলা ফিল্মে দৌড় শুরু সব্যসাচীর, যা চলছে আজও। আর লেখালিখির পাশাপাশি নাটকেও বিরাট আগ্রহ ছিল সমরেশের। যুক্ত ছিলেন নান্দীকারের সঙ্গেও। পরে বেশ কয়েকটি নাটকও লিখেছেন। যার মধ্যে অন্যতম তিন নম্বর চোখ। গ্রুপ থিয়েটারে বহুবার অভিনীত হয়েছে। সমরেশদা গানও লিখতেন। তাঁর লেখা গান গেয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য এবং লোপামুদ্রা মিত্র। এমন কি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও। বলাই বাহুল্য তাঁর কাহিনী নিয়ে প্রচুর সিনেমা হয়েছে। সেই দৌড় থেকে কালবেলা হয়ে বুনো হাঁস পর্যন্ত। পাশাপাশি জনপ্রিয় ছিল তাঁর ছোটদের জন্য লেখা অর্জুন সিরিজও।

তবে দিনের শেষে তিনি ছিলেন একজন নির্ভেজাল সাহিত্যিক। যাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সেটা কখনও সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে আসেনি। যিনি মাত্র ৪২ বছর বয়সে অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৮৪ সালে কালবেলা উপন্যাসের জন্য। তাঁকে রাজ্য সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২০১২ সাল পর্যন্ত। তবে এ সব কথা এখন অবান্তর। সমরেশদা রেখে গেলেন তাঁর দুই কন্যাকে। আর রেখে গেলেন তাঁর বিপুল সাহিত্য সম্ভার। বাংলা সাহিত্যের এই কালবেলায় সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যের উত্তরাধিকার বিরাজ করবে কালপুরুষের মতো।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Suvendu Adhikari | তৃণাঙ্কুরের পোস্টে রেগে আগুন শুভেন্দু, খেপে গিয়ে কী বললেন দেখুন
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | BJP | ৫০০-১০০০-এ শাঁখা-পলা বিসর্জন দেবেন না
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | BJP | বিজেপি ক্ষমতায় এলে মাসে ৩০০০ টাকা
00:00
Video thumbnail
Anubrata Mondal | অনুব্রতকে ফাঁ/সা/নোর নেপথ্যে কে? দেখুন কলকাতা টিভি EXCLUSIVE
00:00
Video thumbnail
Bowbazar News | কলকাতায় ফের ভে/ঙে পড়ল বহুতলের একাংশ, কী পরিস্থিতি বউবাজারে? দেখুন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | শুভেন্দুকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট, ভুগতে হবে পাল্টা শুভেন্দু
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | BJP | ৫০০-১০০০-এ শাঁখা-পলা বিসর্জন দেবেন না
02:51
Video thumbnail
India-Pakistan | জলের জন্য কাঁদছে পাকিস্তান, ভারতকে চার বার চিঠি, কী সিদ্ধান্ত দিল্লির?
01:26:21
Video thumbnail
Mahua Moitra | বিয়ের পর মহুয়া মৈত্রর এই ভিডিও দেখলে আপনিও খুশি হবেন...
02:42:44
Video thumbnail
Anubrata Mondal | অনুব্রতকে ফাঁ/সা/নোর নেপথ্যে কে?
02:42