Friday, September 26, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollAajke | মমতা–৩০০০, অমিত শাহ–০৩
Aajke

Aajke | মমতা–৩০০০, অমিত শাহ–০৩

এই বঙ্গে অমিত শাহর তিনটে পুজো উদ্বোধনের ছিল, তার মধ্যেও নাকি একটা হচ্ছে না!

নচে’দা, নচেন্দ্রনাথ ভাট্টাচার্য বলতেন, বাবা নাম দিয়েছিল নগেন্দ্রনাথ, কিন্তু বাবা নাকি নস্যি নিতেন, হেডস্যার শুনেছিলেন নচেন্দ্রনাথ, সেটাই থেকে গিয়েছে স্কুলের খাতায়। তো সেই নচেদার বাবা ছিলেন ডাকসাইটে বামুন পুরোহিত। কন্যাপক্ষের হয়ে বিয়েবাড়িতে বরপক্ষের পুরুতকে মন্ত্র শিখিয়ে আসতেন, সরস্বতী থেকে বিশ্বকর্মা নচেদা বাইক ভাড়া করে পুজো করতে যেতেন। সেই নচে’দাকে বলেছিলাম, নতুন পুরুত এসেছে পাড়ায়, নচেদা বলেছিল, “দুউউউউউউস ১৮–২”। মানে নচেদা ১৮টা পুজো করছেন, নতুন পুরুত মাত্র দু’টো! নচে’দা বিড়ির ধোঁয়ার সঙ্গেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই নতুন পুরুতকে, আর যাওয়ার সময়ে বলে গিয়েছিলেন, “কিসে আর কিসে, তোর ভাগ্নে আর আমার পিসে”? ওনার এক পিসে নাকি টাকি থানার বড়বাবু ছিলেন। তো সেই গল্পটা হঠাৎই মনে পড়ল, বাঙালি মন জয়ে রামনবমী বাদ দিয়ে দুর্গাপুজো করবে বিজেপি, ‘জয় শ্রী রাম’ ছেড়ে তাই ‘জয় মা দুগগা’। তো সেই লড়াইয়ে একা কুম্ভ সজল ঘোষ আর তাঁর লেবুতলা পার্ক, মানে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো। সেখানে মোদিজির মুখ, বুক চিরে ঢুকবেন দর্শনার্থীরা, মুখে বুকের এমন ব্যবহার তো এর আগে কলকাতা দেখেইনি। কিন্তু বিষয়টা সেটা নয়, এ রাজ্যে তৃণমূলের মুখ মমতা, তিনি নাকি ভারচুয়াল আর রিয়েল উদ্বোধনে এবারে ৩০০০ পুজোর উদ্বোধন করবেন। শুনলেই মাথা বন বন করে ঘুরবে! সে যাই হোক, এটাই খবর। উল্টোদিকে ‘অব কি বার দো’শ পার’ শ্লোগানের জনক অমিত শাহর এই বঙ্গে তিনটে পুজো উদ্বোধনের কথা শুনছিলাম, তার মধ্যেও নাকি একটা হচ্ছে না। মানে দক্ষিণ কলকাতাতে মমতার পাড়ায় এসে চমকে দেওয়াটা সম্ভবত হচ্ছে না। আর হলেও স্কোর – ৩। সেটাই বিষয় আজকে, মমতা – ৩০০০, অমিত শাহ – ০৩।

বহুবার বলা কথা, কিন্তু আবার বলতেই হবে, ‘রেখেছো বিজেপি করে, বাঙালি করোনি’। সমস্যা কি এক জায়গায়? ধরুন দুর্গাপুজোতে কুমারী পুজো হয়। শুরু করেছিলেন কে জানি না, তবে বিবেকানন্দ এই কুমারী পুজোতে হৈচৈ ফেলে দিয়ে এক মুসলমান কন্যাকে পুজো করেছিলেন। এদিকে আমাদের ‘টাচ মি নট খোকাবাবু’, সেই মুসলিমদের সাফ বলেই দিয়েছেন, “আপনাদের ভোট চাই না”। ধরুন উত্তরের নবরাত্রি, আর আমাদের দুর্গাপুজোর মিল কোথায়? আমাদেরও নবমী আছে, ওনাদেরও নবমী আছে, কিন্তু আমাদের নবমীতে পাঁঠার মাংস মাস্ট, ওনাদের শুদ্ধ শাকাহারী। আমাদের ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি, খাবে পাঁঠা বাজাবে তালি’! কানের কাছে গিয়ে বলুন না অমিত শাহের, ছিটকে যাবেন, পাঁঠা খেয়ে তালি দেওয়ার ব্যাপারটা সহ্যই হবে না। তো সেই বিজেপি এ বঙ্গে পেছনে কটা পালক লাগিয়ে ময়ূর হতে চায়। তো মাতৃ পুজার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে রুদ্রনীল ঘোষকে, যিনি মাত্র ক’বছর আগে মমতাকে অন্য সবাই ‘দিদি’ বলে ডাকলেও উনি ‘মা’ বলে ডাকতেন। সেই ‘মা’ বলিতে প্রাণ করে আন চান, সেইরকম আর কি। একবার তেমনই কোনও মাতৃ আরাধনার দায়ে ওনাকে পুলিশ অ্যারেস্ট করতে গিয়েছিল। উনি ‘য পলায়তি স্বঃ জীবতি’ বলে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। উনিই এবারে ইজেডসিসি-র পুজোর দায়িত্বে। খুব সোজা পুজো, বাজেট আছে, প্রচুর বাজেট আছে, পুজো করে ফেলুন, সে পুজোর কোনও পাড়া নেই, সে পুজোর সারা বছরের প্রস্তুতি নেই, সে পুজোর আগে পাড়ার মহিলারা এসে দাবি জানায় না, ভোগের খিচুড়িতে এবারে বেশি কাজু কিশমিশ দেওয়ার। নবমীতে খাসির মাংসের দাবি আসেনা জেন জি-র তরফে, কারণ ও তো কোনও পাড়ার পুজোই নয়, একটা কালচারাল সেন্টার বিজেপির হাতে মানে কেন্দ্র সরকারের হাতে আছে, সেখানে আগে সিপিএম গণসঙ্গীত শোনাত, এখন বিজেপির সভা হয়।

আরও পড়ুন:

বাকি রইল, আগেই বলেছি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে সজল ঘোষের পুজো। হ্যাঁ, মেক নো মিসটেক, ওটা কিন্তু সজল ঘোষের পুজো, আগে ছিল প্রদীপ ঘোষের পুজো। ওনারা বিজেপিতে আছেন, তাই উদ্বোধনে অমিত শাহ। তৃণমূলে থাকলে উদ্বোধন করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিএম-এ গেলে উদ্বোধন করতেন বিমান বসু বা মহম্মদ সেলিম। আর দক্ষিণে পুজো উদ্বোধনে এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে করে অমিত শাহ আসছেন না। তার মানে স্কোর ৩ থেকে নেমে ২। আর যদি তৃণমূল নেতাদের পুজো ধরি, তাহলে বানের জলে ভেসে যাবে বিজেপি। কারণ হাতে ঐ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বাদ দিলে কিছুই নেই। এধারে ববি হাকিম থেকে অরুপ বিশ্বাস থেকে সুজিত বসু, পুজোর বাজারে ‘অমর-আকবর-অ্যান্টনি’। ওনাদের বাদ দিলেও হাজার একটা পুজো তৃণমূল নেতারা করেন আর সেগুলো সব পাড়ার পুজো। জনসংযোগ দেখার মতো। আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, যে দল আগামী বিধানসভা দখল করতে চায়, ২০২৬-এ সরকার তৈরি করতে চায়, তাদের হাতে এমএলএ, এমপি, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত প্রধান ক’জন আছে ছেড়ে দিয়ে কেবল তাঁদের হাতে কটা দুর্গাপুজো আছে সেটা গুনেই কি বোঝা যায় না যে এ রাজ্যে বিজেপি এখনও অনেক অনেক পিছিয়ে?

সমাজ, সংস্কৃতি আর ধর্ম কে বাদ দিয়ে রাজনীতি হয় না, হবেও না। আর সেই সমাজ ‘হোমোজেনিয়াস’ নয়, একই ধরণের নয়, সংস্কৃতি ভাষা এক নয়, হাজার বৈচিত্র আছে, ধর্মও বহু, ধর্মের আচার বিচার বহুতর। সেটাই সমস্যা বিজেপির। বিহারের সবথেকে বড় পুজো কী? আজ্ঞে না দিওয়ালি, রামনবমী নয়, ছট পুজো। দেখুন সেখানে ঢুকতেই পারছে না বিজেপি, এখনও ল্যাংবোট। বাংলা থেকে অন্ধ্র তেলেঙ্গানা, দক্ষিণে ঢুকতে পারছে না বিজেপি, ঐ একই কারণে। বিজেপির একটা স্ট্রাকচার আছে, তাদের নিজেদের হিন্দুত্বের ডেফিনেশন আছে, একটা নির্দিষ্ট ভাষা আছে আছে একজন নেতা। বৈচিত্রের দুনিয়াতে বিজেপি অচল, আর ঠিক সেই কারণেই এখানে বিজেপির স্কোর তিন, তৃণমূলের ৩০০০।

Read More

Latest News