Sunday, June 8, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: আবার দাঙ্গা চায় বিজেপি

চতুর্থ স্তম্ভ: আবার দাঙ্গা চায় বিজেপি

Follow Us :

শেফালি বৈদ্য, আদিত্য ত্রিবেদীর মত বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ার লোকজনেরা মুজফফরনগরে, কিসান পঞ্চায়েতে রাকেশ টিকায়েতের ভাষণের একটা অংশ শেয়ার করলেন। লিখলেন, দেখুন রাকেশ টিকায়েত কী শ্লোগান দিচ্ছেন, আসুন দেখা যাক, সত্যি করেই রাকেশ টিকায়েত কোন শ্লোগান দিচ্ছিলেন, (আদিত্য ত্রিবেদীর টুইটার ভিডিও)। স্পষ্ট শোনা গেল উনি বলছেন আল্লা হু আকবর, এবং সেটাই বিজেপির আইটি সেল দেশে তাদের ভক্তদের কাছে, দেশের মানুষদের কাছে পৌঁছে দিলেন। মেসেজ ইজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার, দেখুন, এই যে রাকেশ টিকায়েত, সে আসলে মুসলিমদের লোক, সে হিন্দু বিরোধী, অতএব তার কথা শুনে হিন্দু কৃষকরা কৃষক আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করুন। একজন মানুষ আল্লা হু আকবর শ্লোগান দিতেই পারেন, আমাদের সংবিধান তাঁকে সেই অধিকার দিয়েছে, রাকেশ টিকায়েতও দিতেই পারেন, কিন্তু সত্যিই কি রাকেশ টিকায়েত ওই শ্লোগান দিয়েছেন? ভিডিও বলছে হ্যাঁ, রাকেশ টিকায়েত, আল্লা হু আকবর শ্লোগান দিয়েছেন। কিন্তু আবার মন দিয়ে শুনুন, রাকেশ টিকায়েত তো আল্লা হু আকবর বলছেন, সমাবেশের লোকজন কী বলছেন? মন দিয়ে শুনলে, শুনতে পাবেন, উপস্থিত জনতা বলছেন হর হর মহাদেব। তার মানে রাকেশ টিকায়েত বলছেন আল্লা হু আকবর, জনতা বলছে, হর হর মহাদেব, বিজেপি আইটি সেল এইটুকু ভিডিওই শেয়ার করেছে, তারপরে রাকেশ টিকায়েত কী বলেছিলেন শুনুন।

(https://youtu.be/oFPLNle2ghE  0 : 50 – 1:30 ) রাকেশ টিকায়েত বলছেন সম্প্রীতির কথা, সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা, যে কথা বলে গেছেন, নানক, কবীর, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ। যে দর্শনের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছে আরএসএস, বিজেপি। আসলে এই একই সঙ্গে আল্লা হু আকবর আর হর হর মহাদেবের শ্লোগানের একটা পুরনো ইতিহাস আছে। রাকেশ টিকায়েতের বাবা, চৌধুরি মহেন্দ্র সিং টিকায়েত, যাঁকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠেরা বাবা টিকায়েত বলে ডাকতেন, সেই ১৯৮০ তে, যখন জাঠ নেতা চরণ সিংয়ের প্রভাব প্রায় শেষ, সেই সময়ে একছত্র কৃষক নেতা হিসেবে উঠে আসেন, তখন উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের শাসন, লক্ষ্ণৌতে বিরাট সমাবেশ ডেকেছিলেন, ১৯৮৮ তে দিল্লির বোট ক্লাবে, লক্ষ লক্ষ কৃষকের সমাবেশের অবিসংবাদী নেতা ছিলেন মহেন্দ্র সিং টিকায়েত। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি আবর্তিত হত, এই বলিয়ান খাপের জাঠ কৃষক নেতাকে ঘিরে। এই কৃষকেরা মূলত আখ চাষি, এদের মধ্যে অবস্থাসম্পন্ন, হিন্দু জাঠ ছিল, মুসলমান জাঠও ছিল, সবাইকে নিয়েই ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন গড়ে উঠল, নেতা মহেন্দ্র সিং টিকায়েতের নেতৃত্বে।  মাটিতে বসেই মিটিং হত, থাকত বিরাট বিরাট হুঁকো, অবশ্যই মুসলমান এবং হিন্দু জাঠেদের আলাদা আলাদা। সেই সময় বাবা মহেন্দ্র সিং টিকায়েত শ্লোগান দিতেন আল্লা হু আকবর, সমবেত জনতা বলত, হর হর মহাদেব। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মানুষ এটা জানেন। সেই সম্প্রীতির কথা, ভাইচারার কথা, আজ আবার রাকেশ টিকায়েত মনে করিয়ে দিলেন মাত্র। কেন? কারণ মাত্র ৯ বছর আগে এই সম্প্রীতি ভেঙে চুরমার হয়েছিল, হিন্দু মুসলমানের রক্তে লাল হয়েছিল মুজফফরনগর, এমন কি সেই দাঙ্গায় অভিযুক্ত ছিলেন স্বয়ং রাকেশ টিকায়েত, কেবল মুজফফর নগরেই নয়, দাঙ্গার আঁচ ছড়িয়েছিল পশ্চিম উত্তর প্রদেশে, দীর্ঘদিন একসঙ্গে বসবাস করতে থাকা জাঠ হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে ওটাই ছিল এক বিরাট বিভেদ বিন্দু, ওই দাঙ্গার ফলে এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত হিন্দু জাঠ আর মুসলমান জাঠেদের মধ্যে সদ্ভাব ছিল না। কিভাবে হয়েছিল এই দাঙ্গা? হয়েছিল? না করানো হয়েছিল? কারা করিয়েছিল? আসুন সেই ইতিহাসটাও দেখে নিই।

উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে বড় এই দাঙ্গায় মারা গিয়েছিল ৪২ জন মুসলমান, ২০ জন হিন্দু, মোট ৬২ জন। অসংখ্য মানুষ আহত শুধু হননি। ৪০ জনের মত মানুষ জীবনের জন্য উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছেন, অসংখ্য বাড়ি জ্বলেছে, ট্রাক্টর পুড়েছে, ফসল নষ্ট হয়েছে। দাঙ্গা যখন শুরু হয়, তার আগে বিকেইউ এক শক্তিশালী কৃষক সংগঠন, হিন্দু জাঠ আর মুসলমান জাঠেরা মিলে একজোটে চিনি মিল মালিকদের সঙ্গে দাম দস্তুর করতেন, দাবি আদায় করতেন। ২১ অগস্ট ২০১৩ এক মুসলমান বাইক আরোহীর সঙ্গে দুই হিন্দু যুবকের বচসা হয়, মারপিট শুরু হয়, বাইক আরোহী গণ পিটুনিতে মারা যান। এটাই এফআইআরে আছে। রটনা শুরু হয়, মুসলমান ছেলেটি এক হিন্দু মহিলার শ্লীলতাহানি করেছে, যে অভিযোগ এফআইআরে নেই। উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। একদিনের মধ্যে এক ভিডিও ভাইরাল হয়। খবর ছড়িয়ে পড়ে, লোকাল কেবল টিভিতে দেখানো শুরু হয়, ততদিনে মোবাইল এসে গেছে, সেখানেও এসে যায়, দুই হিন্দু যুবককে পিটিয়ে মারছে কিছু মুসলমান মানুষজন। ব্যাস, তারপর দাঙ্গা তার চেহারা নিতে থাকে। গুজব ছড়াতে থাকে। ৬২ জন মানুষ মরার পরে জানা যায়, ওই দু’জনকে পিটিয়ে মারার ভিডিওটা পাকিস্তানের ঘটনা। ততদিনে বিকেইউ টুকরো হয়ে গেছে, রাকেশ টিকায়েতের দিকে হাত তুলেছেন মুসলমান জাঠেরা, দাঙ্গার অভিযোগ। সুবিধে কার হল? সুবিধে হল পশ্চিম ইউপির সুগার মিল মালিকদের, কারণ কৃষকরা আর ঐক্যবদ্ধ নয়, তাঁদের বিভেদকে কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর আখের দাম বকেয়া রেখে দিল মিল মালিকেরা, দাম বাড়ানোর তো প্রশ্নই নেই। এটাই ছিল দাঙ্গার পেছনের গল্প। আর তার সঙ্গে জাঠ মুসলমান আর হিন্দু মুসলমানদের বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় আসা।

এদিকে আবার চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। কৃষক আন্দোলনের শুরুতেই জাঠ মুসলমান কৃষকদের তেমন ভূমিকা ছিল না। কিন্তু যেদিন রাকেশ টিকায়েতকে মঞ্চ থেকে গুন্ডা দিয়ে হাঠিয়ে দেবার পরিকল্পনা হল, বিজেপি এমএলএ গুন্ডা নিয়ে হাজির হল, সেদিন ওই জাঠ নেতা ঝরঝর করে কাঁদছিলেন। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ১৮৫ কিলোমিটার দূরে তাঁর গ্রাম থেকে জল আসবে, তবে তিনি জল খাবেন। সেদিন মুসলমান জাঠ নেতারা রওনা দিয়েছিল দিল্লির দিকে, টিকায়েতের পাশে দাঁড়াতে। মুসলমান মহিলারা মাথায় করে কলসি ভরে জল নিয়ে আসে, ভাই টিকায়েতের জন্য। হিন্দু জাঠ আর মুসলমান জাঠেরা আবার একে অন্যের হাত ধরে, গোটা ছবিটা পালটে যায়। কৃষক আন্দোলন ভাঙা তো দূরস্থান, এই ঘটনা টিকায়েতের মর্যাদাও বাড়িয়ে দেয়, নতুন প্রাণ আসে দেশজোড়া কৃষক আন্দোলনে। স্বাভাবতই এই ছবি আরএসএস বিজেপির কাছে বিপদজনক বৈকি, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে একটা আসনও তারা নিশ্চিন্তে জিততে পারবে না। টিকায়েত ঘোষণা করেছেন, বিজেপি হাঠাও, কৃষক নেতারা সভা করে বলছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রাচার করবেন। আর ঠিক তাই সেই মুজফফরনগরে কৃষক পঞ্চায়েত ডাকা হল, ঠিক তাই বহু পুরনো শ্লোগান, আল্লা হু আকবর, হর হর মহাদেব শোনা গেল হিন্দু আর মুসলমান জাঠেদের সভায়। টিকায়েত মনে করিয়ে দিলেন মঞ্চ থেকে বিজেপিকে একটিও ভোট নয়। এই অবস্থায় বিজেপি যা করার তাই করছে। তারা রাকেশ টিকায়েতের এক খন্ডিত ভাষণের ভিডিও ভাইরাল করছে, হিন্দু জাঠ আর মুসলমান জাঠেদের আলাদা করার চেষ্টা করছে। একটা রাজনৈতিক দল, যার মূল আদর্শই আমাদের সংবিধান বিরোধী, যাদের প্রথম লক্ষ্যই হল দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিভেদ জিইয়ে রেখে নির্বাচনে ফায়দা তোলা। তারা আবার উত্তর প্রদেশে সেই ইস্যুতেই ভোট চায়, সেই ইস্যুতেই মানুষের বিভাজন চায়। তাই আইটি সেল ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ওই দেখো ওই দেখো, রাকেশ টিকায়েত আসলে মুসলমান তোষনের চেষ্টা করছে, তারা আবার চায় রাজ্যজুড়ে দাঙ্গা বাঁধাতে, মানুষের লাশের ওপর দিয়ে নির্বাচনী জয় ছিনিয়ে আনতে। আমরা জানি, আর জানি বলেই প্রত্যেক বিবেচক মানুষ ওই আন্দোলনকারী কৃষকদের পাশে দাঁড়াবে। প্রত্যেক ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ, ঠিক যেভাবে বাংলার নির্বাচনের আগে হাঁক দিয়েছিল, এ জমিতে পদ্মফুলের চাষ হতে দেব না বলে, ঠিক যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল নো ভোট টু বিজেপি বলে, তাঁদের আবার সামনে আসতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যোগী সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, বিজেপি আর তার শাকরেদ দলগুলো যেন একটাও আসন না পায় তার জন্য মাঠে নামতে হবে। বাংলায় হেরেছে, উত্তরপ্রদেশেও হারাতে হবে, হারাতে হবে ভারতকে বিক্রি হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য, ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য।

আপনাদের জন্য লেখার সঙ্গে এই লিঙ্ক দুটি শেয়ার করলাম। যাতে বিজেপি আইটি সেলের পুরো বিষয়টি আপনারা বুঝতে পারেন।  https://twitter.com/ShefVaidya/status/1434506958317375495

https://twitter.com/AdityaTrivedi_/status/1434509018681122822

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Mahua Moitra | বিয়ের পর মহুয়া মৈত্রর এই ভিডিও দেখলে আপনিও খুশি হবেন...
00:00
Video thumbnail
South 24 Pargana | কোটিপতি চোর, জানার পর কী করল পুলিশ? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Weather Update | ফের গরম বাড়বে? দক্ষিণবঙ্গে কবে ঢুকবে বর্ষা? দেখে নিন বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
South 24 Pargana | চোরের প্রাসাদে CCTV, চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | Elon Musk | সরকারে মাস্কের কন্ট্রাক্ট নিয়ে বি/স্ফোরক ট্রাম্প
00:00
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Birbhum | TMC | বীরভূমের জেলা তৃণমূল কোর কমিটিকে ডাক শীর্ষ নেতৃত্বের
04:22
Video thumbnail
Mahua Moitra Wedding | বিয়েতে নাচের ভিডিও শেয়ার করলেন মহুয়া মৈত্র
00:30
Video thumbnail
Shree Jagannatha Temple | Puri | পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ছাপ্পান্ন ভোগ, কীভাবে তৈরি হয় জগন্নাথের ভোগ?
02:12
Video thumbnail
Mohun Bagan | ভাঙবেন তবু মচকাবেন না
04:50:15