Saturday, October 25, 2025
HomeScrollAajke | দেশের বাইরে আর এক দেশ, যাদবপুর, যাদবপুর

Aajke | দেশের বাইরে আর এক দেশ, যাদবপুর, যাদবপুর

এখনও থমথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। চলছে ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি। মঙ্গল এবং বুধবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল ডিএসএফ-সমেত বেশ কয়েকটা তথাকথিত অতিবাম ছাত্র সংগঠন। এই দু’দিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস আর ল্যাবরেটরি বন্ধ রাখার ডাক দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আবার ক্ষণে ক্ষণে জিবি মিটিং হয়, দু’ পাঁচ হাজার ছাত্রের ৬০-৭০ জন বসে সিদ্ধান্তের পর সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছেন এবং সেটাকেই জিবি বলা হচ্ছে। তো সোমবার রাতের জিবি বৈঠকের পর ছাত্রদের তরফে বেশ কয়েকটি দাবি উঠে এসেছে। ছাত্রদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সব্বাই জানে যে উপাচার্য অসুস্থ, চিকিৎসা চলছে বাড়িতে নয় হাসপাতালে, কিন্তু ২৪ ঘণ্টার নোটিস দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, আহত ছাত্রদের চিকিৎসার খরচও বহন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেই এই দাবিও তুলেছেন ওই ছাত্ররা। এখানেই শেষ নয় যে সমস্ত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা উপাচার্যকে সরকারের সঙ্গে কথা বলে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উল্টো দিকে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের উপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ সংশ্লিষ্ট ধারায় থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থাও করতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। এবং এসব দাবি না মেনে নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রেরা। মানে এর থেকেও বৃহত্তর আন্দোলন, সেটা কেমন হবে? তা অবশ্য জানা নেই। অধ্যাপকদের এক সংগঠনের সম্মেলনে ঢুকে ওঁরা হামলা চালাবেন, তারপর ঘটনা পরম্পরায় আহত হবেন, তারপর তাঁরা আবার আন্দোলন করবেন। এ এক ধারাবাহিক আন্দোলন, যা তাঁদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন সময়ে তাঁরা করবেন, তাঁরাই আছেন, তাঁরাই থাকবেন, তাঁদের শর্তে ক্লাস হবে, তাঁদের শর্তে ক্লাস বন্ধ হবে, তাঁদের ইচ্ছেয় সেমিনার হবে বা হতে দেওয়া হবে না। এ যেন এক অন্য দেশ যেখানে এদেশের নিয়ম কানুন আইন সবই অর্থহীন, সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, দেশের বাইরে আর এক দেশ, যাদবপুর, যাদবপুর।

কেউ কি জানেন সেই ছেলেটির কথা যিনি আক্ষরিক অর্থেই অন্তর্বাস পরে আন্দোলনে নেমেছিলেন? তিনি এখন আমেরিকায়। কেউ কি জানেন গত ১০ বছর আগে এই ফেটসুর উজ্জ্বলতম নেতা এখন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক, কেউ কি জানেন তার আগের বছরের ছাত্র ইউনিয়নের বিশাল নেতা এখন আমেরিকার গবেষণাগারে কাজ করছেন, বেতন বছরে প্রায় দু’ কোটি, নাম বলে তাঁর শিক্ষক বাবা-মাকে লজ্জায় ফেলতে চাই না।

আরও পড়ুন: Aajke | এবারে বাঙালি জাগো

আচ্ছা কেউ কি ভেবেছেন প্রতিবছর এই যে রাশি রাশি হাসিখুশি বিপ্লবীদের আমরা গত ৪০ বছর ধরে দেখেছি সেই নেতারা ঠিক কী করছেন? তাঁদের টাইম পিরিয়ডে যখন তাঁরা ইটিং ফায়ার ভমিটিং ফায়ার সেই তাঁরা কোন মন্ত্রবলে উবে গেলেন? উবে যান? উবে তো যাননি, সেই তাঁদের মধ্যে অত্যন্ত ওঁচাদের এখনও চলতি রাজনৈতিক এরিনাতেই দেখা যাবে, সেই বিপ্লবী বামেদের স্ত্রীরা এই তৃণমূল জমানাতেই চুক্তিবদ্ধ অধ্যাপিকার কাজ পেয়েছেন, যা নাকি বিস্তর টাকাপয়সার বদলেই পাওয়া যায় বলে তাঁদেরই অভিযোগ, সেখানে এই কচি নেতাদের বিপ্লবী স্ত্রীরা কীভাবে সেসব বাগিয়ে সুরক্ষিত বিপ্লবের সহায়ক শক্তি হয়ে ওঠেন? আমি বাম জমানার ৩৪ আর এই জমানার ১০ বছর, মানে কম বেশি ৪৫ বছরের এক এক বছরে জনা ৫০ সক্রিয় নেতাদের জন্মাতে দেখেছি, কিন্তু তাঁরা অনায়াসে নিশ্চিন্ত জীবন বেছে নিয়ে এখন ফোন পে-তে হাজার টাকা ডোনেশন পাঠিয়ে দেন মাত্র। কিন্তু নিজেদের সময়ে এনারা একেক জন হোক কলরবের কলকাকলি। কেউ বা হতাশ, রাজনীতির নাম মুখে আনেন না, কিন্তু এঁদের এই বিচ্ছিন্নতার বলি স্বপ্নদীপ কুন্ডু এখন ফ্রেমবন্দি, এনারা অভয়ার বিচার চাইবেন, স্বপ্নদীপের নয়, কারণ এই খুনটা ওনারা নিজেরাই করেছেন, ওনাদের দেখরেখেই যাদবপুরে র‍্যাগিং হয়, আলুদা, ভুলুদারা সেসবের নেতৃত্ব দেন আবার রাত জাগো বলে জাস্টিস চাইতে বসেন। এই ইত্যাকার স্ববিরোধিতা নিয়ে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে উঠেছে যাদবপুর, যেখানে এই সরজমিনের সংবিধান বা আইন লাগুই করা যাবে না, খানিক উত্তর কোরিয়া বা ইদি আমিনের উগান্ডার মতো ব্যাপার। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, যাদবপুরের ছাত্ররা আজ নয় সেই কবে থেকেই এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতোই তাদের ইচ্ছে খুশি মতোই চলে, তারা যাদেরকে ঢুকতে দেবে তারাই ঢুকবে, তারা না চাইলে ওই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢোকাও যাবে না, এমনকি বিরোধী রাজনীতির সমর্থক অধ্যাপকদের সম্মেলনও তারা হতে দেবে না, হলে বানচাল করবে। আপনারা কি এই ধরনের দেশের মধ্যে আর এক দেশকে সমর্থন করেন, যারা নিজেদের ইচ্ছেমতোই চলবে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

বাম ধারা বজায় রাখা এক ব্যাপার, আর তা জোর করে চাপিয়ে দেওয়াটা এক্কেবারে অন্য ব্যাপার। এ এক ধরনের গা-জোয়ারি আর চালাকি, যা দিয়ে এক সংগঠনকে টিকিয়ে রাখা হয়। সমস্যা হল সেই সংগঠন যখন ভাঙে, সেই গা-জোয়ারি যখন আর খাটে না তখন তারা মানুষের বিশ্বাস আর ফিরে পায় না। ঠিক এটাই বৃহত্তর রাজনীতিতেও দেখেছি আমরা। আমরা যা বলব সেটাই হবে, মেয়ের বিয়ে থেকে ভাড়াটে উচ্ছেদ বা বসানো থেকে শুরু করে প্রতিটা ব্যাপারে নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেওয়া এক বাম জমানা আমরা দেখেছি। তাঁদের আর দশটা ভালো গুণ থাকার পরেও তাঁরা শূন্য থেকে মহাশূন্যে চলে গেছেন, যাচ্ছেন, তার কারণও ওই জমানার বিচ্ছিন্নতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে। আজও জেএনইউ, আজও যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি সত্যিই দ্বীপশিখার মতো জ্বালিয়ে রেখেছে বাম মতবাদকে, কিন্তু তা যদি এক চাপিয়ে দেওয়া দাদাগিরি হয়ে ওঠে তাহলে সে জমানার অবসান হবে, কেউ তার পতন আটকাতে পারবে না, যাদবপুর তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। সাবেক সোভিয়েতে ২২ এপ্রিল লেনিনের জন্মদিন রাষ্ট্রীয় উৎসব হয়ে উঠেছিল, আজকে রাশিয়াতে সেদিন এমনকি মস্কোতেও ১০০ খানেক লোকের জমায়েত হলে অবাক হতে হয়। এ দায় লেনিনের নয়, এ দায় লেনিনের সেই শিষ্যদের যাঁরা লেনিনকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মানুষের মাথায়, লেনিনের আদর্শের বিরুদ্ধেই।

Read More

Latest News