তেল আভিভ ও গাজা: ‘জানি মৃত্যু নিশ্চিত। তবে সেটা যেন তাড়াতাড়ি আসে।’ বুজে আসা গলায় কথাগুলি বললেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের ত্রাণ-উদ্ধার ও চিকিৎসা শিবিরের এক তরুণী কর্মী। একদিকে হামাস বাহিনী, অন্যদিকে ইজরায়েলের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর যৌথ আক্রমণ যে কোনও মুহূর্তে শুরু হওয়ার অপেক্ষা। আর এই স্নায়ুযুদ্ধের জাঁতাকলে সাধারণ মানুষ। তিলতিল করে ফুরিয়ে আসছে বেঁচে থাকার রসদ। ফুরোচ্ছে হাসপাতালের ওষুধ, জল মায় বিদ্যুতের জ্বালানিও। স্নান করব, না জল খাব এই দোটানায় হাজার হাজার নাগরিক।
পুরোদস্তুর যুদ্ধের কাউন্টডাউনের এই অবস্থায় হামাস ১৯৯ জনকে পণবন্দি করে রেখেছে বলে দাবি ইজরায়েলের। উদভ্রান্ত প্যালেস্তিনীয়দের সাহায্যার্থে আসা কয়েক লক্ষ টন ত্রাণসামগ্রী মিশরের সিনাই বদ্বীপ এলাকায় আটকে রয়েছে। সেগুলি গাজায় ঢুকতে পারছে না। গোটা গাজা এলাকায় এখন লোক শুধু প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে।
আরও পড়ুন: বাঁচার আশায় মিশর সীমান্ত করিডরে দাঁড়িয়ে কয়েক লক্ষ প্যালেস্তিনীয়
রাষ্ট্রসঙ্ঘের এক কর্মী জানান, জ্বালানির যেটুকু মজুত আছে তাতে বড় জোর আর একদিন হাসপাতালগুলি চলবে। তবে জরুরি অনেক পরিষেবাই ভাগ ভাগ করে চালাতে হচ্ছে। সব থেকে সমস্যা পানীয় জলের। এই অবস্থা চলতে থাকলে হাসপাতালে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবেন রোগী ও জখমরা। প্রায় প্রতিটি পরিবার প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বেরিয়ে পড়েছে। নিদেনপক্ষে একটি ব্যাগ ছাড়াই শয়ে শয়ে মানুষ রাস্তায়। বহু মানুষ পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। উত্তর গাজা থেকে আসা মানুষ দক্ষিণ প্রান্তের রাফাহ্ সীমান্তে অপেক্ষা করছেন মিশরের দরজা খোলার প্রত্যাশায়।
কিন্তু, মিশরের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইজরায়েল রাফাহ্ ক্রসিং পার হওয়ার অনুমোদন দেয়নি। মিশর এবং গাজা ভূখণ্ড পারাপার করার এটাই প্রধান সীমান্ত দরজা। ফলে সাধারণ মানুষ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। যেমনটা বললেন দোরঘাম আবুসালিম। গাজা ভূখণ্ডে জন্ম ওয়াশিংটনে বসবাসকারী এই তরুণ লেখকের।
আবুসালিম জানান, ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র চারবার তিনি অসুস্থ বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। তাঁর দুই ভাইবোন গাজাতেই থাকেন। আবুসালিম বলেন, খাওয়া জুটছে না ওদের। আমার বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং ডায়াবেটিসের রোগী। মা দৃষ্টিহীন ও হাইপারটেনশনের রোগী। তাঁদের কারও কাছে এখন ওষুধ নেই। মধ্য গাজার ডের আল-বালাহ্ শহরে আপাতত মৃত্যুর সঙ্গে ঘর করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় তিনটি পরিবার একত্রে থাকছেন। কিন্তু, ঘর ছাড়ার অর্থ তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। আবুসালিম বলেন, কাতারে কাতারে মানুষ পালাচ্ছেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে যাওয়ার আগে আমাদের শহরের কাছেই তাঁদের অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।
দেখুন অন্য খবর