আই এস এল-এর লিগ পর্যায়ের খেলা চলছে। এটিকে মোহনবাগান খেলেছে পনেরোটা ম্যাচ। এখনও লিগের পাঁচটা ম্যাচ বাকি। তার দুটো প্লে অফ এবং অবশেষে ফাইনাল। কিন্তু মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দোর চোখ এখন থেকেই ফাইনালের দিকে। শনিবার কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে জুয়ান তাই বলেছেন, “আমাদের কাছে সব ম্যাচই ফাইনাল। আর আমরা সব ম্যাচেই জিততে চাই।” জুয়ানের পক্ষেই এ রকম আত্নবিশ্বাস মানায়। তাঁর দল টানা এগারোটা ম্যাচে অপরাজিত। এর মধ্যে জিতেছে ছটা ম্যাচ। এবং এই চমৎকার পারফরম্যান্সের পিছনে কিন্তু মোহনবাগানের বিদেশিদের থেকে ভারতীয়দের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুই ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। লিস্টন করেছেন সাতটি গোল। মনবীর করেছেন পাঁচটি গোল। মোহনবাগান যে ৩১টি গোল করেছে, তার মধ্যে ১৭টি গোলই করেছেন ভারতীয়রা। তাই গত ম্যাচে গোয়ার বিরুদ্ধে বাগানের ২-০ জয়ের টিমে ছিলেন মাত্র দুজন বিদেশি, বাকি নয়জন ভারতীয়।
আই এস এল-এর টিমগুলি নির্ভর করে বিদেশিদের উপরে। বাগানেও ছয় বিদেশি যথেষ্ট দক্ষ। কিন্তু চোট আঘাতে তাদের ছয়জনকে পাওয়া যাচ্ছে না। রয় কৃষ্ণ এখন চোট আঘাত কাটিয়ে খেলার জায়গায় চলে এসেছেন। ডেভিড উইলিয়ামসও তাই। তবে হুগো বুমো এবং কার্ল ম্যাকহিউ এখনও ফিট নন। কিন্তু জুয়ান এ সব নিয়ে ভাবিত নন। এবং কাঁদুনিও গাইছেন না। তবে তাঁকে বাড়তি ভরসা দিয়েছেন সন্দেশ ঝিঙ্গন। এই পঞ্জাবপুত্রের যোগদানে মোহনবাগানের ডিফেন্সের গভীরতা আরও বেড়ে গেছে। প্রীতম কোটাল, তিরি এবং সন্দেশকে নিয়ে মোহনবাগানের ডিপ ডিফেন্স এখন যথেষ্ট পোক্ত। শুরুর দিকে ডিফেন্সের জন্য বাগানকে অনেক গোল খেতে হয়েছে। ম্যাচ হারতে হয়েছে। এখন সে সব দিন অতীত। এমনি এমনি কী আর টানা এগারোটা ম্যাচে অপরাজিত থাকা যায় ! শনিবার জুয়ান সেটাকে এক ডজনে নিয়ে যেতে চান।
এই কাজে তাঁর প্রধান ভরসা লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং। গোয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করা মনবীর হ্যাটট্রিক করতে পারতেন। এবং গোল মিসের জন্য ম্যাচের শেষে বাবার কাছে বকুনিও খেতে হয়েছে। তবে মনবীর গুরুত্ব দিচ্ছেন পর পর তিনটি ম্যাচে গোল করাকে। ব্যাপারটা সহজ নয়। শুরুর দিকে গোল পেয়েছিলেন। তার পর দীর্ঘ সময় তাঁর গোল ছিল না। এখন আবার তিনি গোলের মধ্যে। এটা বেশি স্বস্তি দিয়েছে কোচকে। আর লিস্টন তো এ বারের লিগের ভারতীয়দের মধ্যে অন্যতম সেরা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে তাঁর দৌড়, কাট করে ভেতরে ঢোকা এবং তারপর গোল করা এখন যেন ট্রেড মার্ক হয়ে গেছে মোহনবাগানের খেলার। তবে লিস্টন শুধু নিজে গোল করেন না, গোল করানও। গোয়া ম্যাচে মনবীরের প্রথম গোলটা তো লিস্টনের কর্নারে হেড থেকে পাওয়া। এই দুজনের পিছনে মাঝ মাঠে জনি কাউকোর কথাও বলতে হবে। শুরুর দিকে তিনি ছিলেন পরিবর্ত প্লেয়ার। এখন প্রথম একাদশে। এবং ডিফেন্স ও অ্যাটাকের মধ্যে যে ব্যালান্স সেটা করছেন কাউকো। তাঁর পাশে দীপক ট্যাংরি, লেনি রডরিগসরা ভাল রকমের মানানাসই। তবে জুয়ান কী ভাবে টিম করবেন কেউ জানে না। তাই শনিবার তিনি তাঁর বাকি বিদেশিদের কীভাবে ব্যবহার করবেন তার দিকে নজর রাখতেই হবে। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার। জুয়ানের আস্থা এবং বিশ্বাস এখন ভারতীয়দের উপরেই।
আই এস এল-এর প্রথম চারে ওঠার জনয় লড়াই এখন চরমে। হায়দরাবাদ (২৯), মোহনবাগান (২৯), জামশেদপুর (২৮) এবং কেরালা ব্লাস্টার্সের (২৬) তুল্যমূল্য লড়াই চলছে। হায়দরাবাদ খেলেছে ১৬টা ম্যাচ। বাকি তিনটি দল পনেরোটা করে। তাই কেরালা কোনওভাবেই হেলাফেলার দল নয়। তাদের সামনের দিকের তিন বিদেশি আদ্রিয়েন লুনা, আলভারো ভাজকুয়েজ এবং জর্জ পেরেরা দিয়াজ আছেন গোলের মধ্যে। ডিফেন্ডার মার্কো লেসকোভিচ চোট সারিয়ে মাঠে নামার জন্য তৈরি। কেরালা ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়েছে এনেস সিপোভিচের গোলে। তার মানে টিমটা বিদেশিদের ভাল খেলার দৌলতে এত দূর এসেছে। সঙ্গে ভারতীয়রাও মন্দ নন। বিশেষ করে গোলকিপার প্রভসুখন গিল রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে। বারো ম্যাচের মধ্যে পাঁচটা ম্যাচে গোল খাননি গিল। এবারের গোল্ডেন গ্লাভসের আন্যতম দাবিদার তিনি। করোনার জন্য এই ম্যাচটা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। তার পর দুদলই ফর্মের দিক থেকে অনেক উন্নতি করেছে। তাই শনিবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে একটা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ দেখার প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।