এটিকে মোহনবাগান–১ মুম্বই সিটি এফ সি–১
(ডেভিড উইলিয়ামস) (প্রীতম কোটাল–নিজ গোল)
খুবই উপভোগ্য ম্যাচ। দু দলের যে কেউই জিততে পারত। প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দুই গোলকিপার মোহনবাগানের অমরিন্দর এবং মুম্বইয়ের নওয়াজ প্রচুর গোল সেভ করেছেন। দু দলের ডিফেন্সের উপর দিয়ে প্রচুর ঝড় বয়ে গেছে। এবং সেগুলো সামলেছে দুই দলের ডিফেন্স। মোহনবাগান ডিফেন্সে তিরি অনবদ্য। পুরো একার কাঁধে টিমটাকে হারের হাত থেকে বাঁচালেন। প্রীতম একটা আত্মঘাতী গোল করেছেন। ২৪ মিনিটে বিপিন সিংহের সেন্টারটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে তাঁর হেড গতিপথ পাল্টে গোলে ঢুকে যায়। প্রীতমকে তাই দোষ দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাকি ম্যাচে তিনি কিন্তু একেবারেই ভাল খেলতে পারেননি। তিরি দুর্দান্ত না খেললে বৃহস্পতিবার মারগাওয়ের জহওরলাল নেহরু স্টেডিয়াম থেকে মোহনবাগান এক পয়েন্ট পেয়ে ফিরত না। সঙ্গত কারণেই তিরিকে ম্যাচের সেরা বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে পারফরম্যান্সের বিচারে তিরির খুব কাছাকাছি ছলেন মুম্বই গোলকিপার নওয়াজ। প্রথম দিকে তিনি একটু নড়বড়ে ছিলেন। কিন্তু ম্যাচ যত এগিয়েছে নওয়াজ তত দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছেন। ডেভিড উইলিয়ামসের একটা শট পোস্টে লাগে। কিন্তু ডেভিডের অন্য শট বা হেডগুলো কিন্তু নওয়াজ বাঁচিয়েছেন। হুগো বুমো, লিস্টন কোলাসো কিংবা মনবীরদের পায়ের গ্রাস কেড়ে নিয়েছেন নওয়াজ তাঁর বিশ্বস্ত দুটি হাত দিয়ে। ম্যাচ জিততে না পারায় মোহনবাগানের আর চারের মধ্যে ঢোকা হল না। বারো ম্যাচে কুড়ি পয়েন্ট নিয়ে পাঁচেই থেকে গেল জুয়ান ফেরান্দোর টিম। আর তেরো ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে থেকে গেল গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই। আর এভাবেই ডার্বিতে দুরন্ত জয়ের পর আটকে গেল মোহনবাগান। টানা পাঁচটা ম্যাচ তারা মুম্বইকে হারাতে পারল না। তবে আগের চারটের মতো এদিন হারতে হয়নি।
এই নিয়ে পর পর সাত ম্যাচে জয়হীন রইল মুম্বই। চমৎকার ডিফেন্স, কার্যকরী মাঝ মাঠ নিয়েও তারা কেন জয় পাচ্ছে না তার একটা উদাহরণ হয়ে রইল আজকের ম্যাচটা। আসলে মুম্বইয়ের স্ট্রাইকিং এবিলিটি কমে গেছে। তাদের এক নম্বর স্ট্রাইকার ইগর অ্যাঙ্গুলোর সেই পেনিট্রেশন ক্ষমতা এখন আর নেই। তাঁকে প্রথমার্দ্ধে নামানো হয়নি। শেষ ৪৫ মিনিট খেললেন এবারেই আটটা গোল করে ফেলা আ্যাঙ্গুলো। কিন্তু তাঁর জায়গায় প্রথম ৪৫ মিনিট যিনি খেললেন সেই দিয়েগো মরিসিও আরও খাজা। একটা বল নিয়ে তাঁকে উঠতে দেখা যায়নি। না পাওয়া গেল একটা শট, না হেড। অ্যাঙ্গুলো নামার পর মুম্বই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে। কিন্তু তাঁর নিজের খেলার ঝাঁঝ তো নেই বললেই হয়। গোল হবে কী করে? মুম্বই জিতবে কী করে? মুম্বইয়ের লেফট উইং বিপিন সিং দুর্দান্ত খেললেন। বাঁ দিক দিয়ে তাঁর দুরন্ত গতি এবং চমৎকার ড্রিবলিং খুলে দিচ্ছিল গোলের দরজা। কিন্তু তাঁর সেন্টারগুলো কাজে লাগাবার লোক পাওয়া যায়নি। পাওয়া যাবে কী করে? সেগুলো আটকাবার জন্য তো ছিলেন তিরি। শূণ্যে অথবা জমিতে তিরি দুর্ভেদ্য পাহাড়ের মতো হয়ে উঠেছিলেন। একটাও ফাউল নেই। ক্লিয়ারিংগুলো দেখবার মতো। সেগুলো থেকেই কাউন্টার আ্যাটাক তৈরি হচ্ছিল। বাগানের গেমমেকার হলেন হুগো বুমো। গত বছর মুম্বই যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তার পিছনে বুমোর যথেষ্ট আবদান আছে। এবারও তিনি শুরুতে ভাল খেলছিলেন। কিন্তু মাঝে বেশ কয়েকটি ম্যাচ বাতিল হওয়ায় এবং একটা ম্যাচে সাসপেন্ড থাকায় ফিরে আসার পর বুমোর খেলায় আগের মতো ধারটা পাওয়া যাচ্ছে না। কর্নার বা ফ্রি কি তো তিনিই নেন। সেগুলো থেকে অনেক গোলও হয়েছে। কিন্তু এদিন সেগুলোর মধ্যে সেই বিষ ছিল না। দুই উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লিস্টনকে ফণা তুলতে দেননি রাহুল বেকে। আর মনবীর বার বার আটকে গেছেন মন্দার রাও দেশাইয়ের কাছে। মাঝ খানে মেহতাব সিংকে নিয়ে নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন মোর্তাদা ফল। তবে তাঁর খেলারও অবনিতি হয়েছে। আগের মতো তিনি আর তত দুর্ভেদ্য নন। কর্নার কিংবা সেট পিসের সময় হেডে গোল করার যে অভ্যাস ছিল তাঁর তাও তো অর্ন্তহিত।
ম্যাচটায় যে শেষ পর্যন্ত কোনও দল হারল না তার পিছনে মুম্বইয়ের গোলকিপার নওয়াজের সঙ্গে বলতে হবে মোহনবাগান গোলকিপার অমরিন্দরের কথাও। তিনিও মুম্বইয়ের প্রাক্তনী। এই ম্যাচটায় প্রথম লিগে অমরিন্দর পাঁচ গোল খেয়েছিলেন। এদিন যেন তিনি প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন হেরে মাঠ ছাড়বেন না। গোলটার পিছনে তাঁর কোনও দোষ নেই। কিন্তু বাকি সময়ে তিনি প্রচুর নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন। অমরিন্দরের জন্য এবার মোহনবাগানকে প্রচুর গোল খেতে হয়েছে। যার জন্য প্রায় ভল্ট থেকে তুলে এনে সই করাতে হয়েছে সুব্রত পালকে। তবে অমরিন্দর এখন যে ফর্মে আছেন তাতে সুব্রত আর জার্সি পাবেন বলে মনে হয় না। জার্সি তো রয় কৃষ্ণও পাচ্ছেন না। এদিন তো তাঁকে রিজার্ভেও রাখেননি জুয়ান ফেরান্দো। তাঁর ভরসাস্থল ডেভিড উইলিয়ামস। আর ম্যাচের নয় মিনিটের মাথায় মুম্বই ডিফেন্সে আহমেদ জাহুর ভুলে বল পেয়ে গোল করে উইলিয়ামস বুঝিয়ে দিলেন তাঁর উপর আস্থা রেখে ভুল করেননি কোচ। তাঁর বদলি জনি কাউকো সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। ফিনল্যান্ড মিডফিল্ডার এখন দলের বোঝা।
ডার্বির নায়ক কিয়ান নাসিরিকে জিয়ান নামালেন তিরাশি মিনিটের মাথায়। সেই সময় খেলার যা গতি তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি কিয়ান। সব দিন তো আর রোববার হয় না। কিয়ান এদিন তাই নন এনটিটির খাতায়।