Saturday, June 14, 2025
Homeফিচারনব্য আলেকজান্ডারের নরমেধ

নব্য আলেকজান্ডারের নরমেধ

Follow Us :

পাঁচ বছরের জন্মদিন বলে কথা! কেক কাটা হোক। বেলুন দিয়ে সাজানো হোক দেশ। আর আমাদের শ্বেত শ্মশ্রু ভরা মুখের জোকার-ক্যাপ পরা বার্থ ডে বয় ‘ফকিরে’র উদ্দেশে আসুন, আমরা তালি দিয়ে গেয়ে উঠি— হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। কারণ, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত সওয়া ৮টা নাগাদ ভারতের এই নবজন্মের মুহূর্তটি দেশবাসীর হাড়েহাড়ে মনে আছে। সদ্য শেষ হওয়া দিওয়ালির অভিনন্দন জানানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেশের জনগণের পাঁজরে বোমা ফাটিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরমাণু বোমা ফাটার মতো গোটা দেশ মুহূর্তে তছনছ হয়ে গেল। নেংটি পরা সেই নবজাতকের ৫ বছর বয়স হয়ে গেলেও লজ্জা নিবারণে ওর থেকে বড় কাপড় আর জোগাড় হয়ে ওঠেনি। উদোম শরীরেই হাটেঘাটেমাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারণ লজ্জা বোধ যার নেই, তাকে নির্লজ্জ কী করে বলা চলে? নোটবন্দি সেরকমই এক উদলা গায়ের ৫৬ ইঞ্চির ভয়ঙ্কর-দর্শন ‘শিশুপাল’। যার জন্ম হয়েছিল এদিন।

এক পলকে যেন থমকে গিয়েছিল সারা দেশ। রাতভর ঘুমোতে পারেননি মানুষ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অর্থনৈতিক সুনামি নেমে এল। কয়েক লক্ষ লোক কর্মহীন হল, বেঘর হল, কত শত ব্যবসা লাটে উঠল। নগদে লেনদেন হয়, এমন শ্রমজীবীদের ঘরে হাঁড়ি চড়ল না। ব্যাঙ্কে, এটিএমের লাইনে বেঘোরে প্রাণ হারাল আরও কত সাধারণ মানুষ।  সমালোচনার লাইনে দাঁড়ালেন রাজনীতির ব্যাপারিরাও, সংবাদ মাধ্যম, ঠান্ডাঘরে বড় হওয়া দিশি, প্রবাসী অর্থনীতিবিদরাও। ভাষণে পিছিয়ে থাকলেন না বণিক নেতারাও। কেউ প্রশংসা, কেউ নিন্দায় মুখর হলেন ঠিকই, কিন্তু আখেরে কী হল? কালাধন, জাল নোটের কারবার, সুইস ব্যাঙ্কে রাখা ভারতীয় ক্রোড়পতিদের বিপুল সম্পদ ফিরিয়ে আনা, জঙ্গিদের নগদ রসদ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতির বুদবুদ খানিকক্ষণ উড়ে ফেটে গেল। মাতৃবিয়োগের দিনে যেমন মনে হয়, জীবনটা শূন্য হয়ে গেল। বাৎসরিকের দিন আর সেই সন্তানকে কাঁদতে দেখে না কেউ।

বছর দু-এক পর পরলোকগত মাতৃদেবী ধরাধামে অবতীর্ণ হন ফেসবুকে। তাও ভক্ত সন্তান ক্ষণে ক্ষণে চোখ রাখেন কটা প্রণাম (আসলে হাইফাই), কটা এক চোখে জলের ফোঁটা দেওয়া সাড়া মিলল তার দিকে। সে রকমই নোটবন্দি আজ পাঁচ বছর বেঁচে আছে ট্যুইটার-প্রতিবাদে। কারণ, দেশ পোলিও মুক্ত হলেও দলগুলিকে সংক্রমিত করে গেছে। তাই দেশের অধিকাংশ দল আজ ন্যালাভোলা হয়ে দিল্লির পথেঘাটে থালা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তাদের নেতানেত্রীরা ঠাণ্ডাঘরে বসে ঠান্ডা মাথায় মেঘদূতের বিরহী দক্ষের ভাষায় বিলাপ করছেন। গ্রামের বিধবা বৃদ্ধাদের মতো মোদিকে শাপশাপান্ত করা কিংবা তাঁর সরকারের মৃত্যুকামনা করা ছাড়া অক্ষম এই নেতাদের অবশ্য কিছু করারও নেই।

আরও পড়ুন – কেন্দ্রের বিএসএফ নীতিতে সীমান্তের কাঁটাতারেই বিদ্ধ হল বঙ্গ বিজেপি

একথা আজ সবাই জেনে গিয়েছেন যে, নোটবন্দি করে কোনও কালো টাকা পুনরুদ্ধার হয়নি। শুধু উড়ে যাওয়া নোট নয়, গোটা গোটা পলাতক ‘ডাকাত’দেরও আজ পর্যন্ত হাতে পায়নি ভারত। তাহলে সরকারের কি সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করার কোনও দায় নেই? জবাবদিহি তলব করার মতো কোনও শক্তি নেই? এভাবেই কি ‘পাগলা সন্ন্যাসী’র ঝাড়ফুঁকে বক মরতেই থাকবে! আজই ‘নির্বাসিত’ বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদবানির জন্মদিন। মোদি-গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেশীয় রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত। তাঁর একটি কথা ছিল, দেশ প্রথম, দল দ্বিতীয় ও ব্যক্তি তৃতীয় স্থানে। একবার তিনি একটি গোঁসাপত্রে এও লিখেছিলেন যে, সেই দল আর অবশিষ্ট নেই। যেখানে নেতাদের প্রথম চিন্তা ছিল দেশ। আর এখন প্রথমেই ব্যক্তি। তাঁর ক্ষমতা, শৌর্যবীর্য, প্রতিভা বিচ্ছুরণেই আলোকিত বিজেপি। আলেকজান্ডারের মতো তিনি দিগ্বিজয়ে বেরিয়েছেন। বাধা শুধুমাত্র বঙ্গদেশ। সে কারণে প্রবল পরাক্রমী বিজেপির চিন্তন ও মননে কেবলমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা না হলে, দলের জাতীয় বৈঠকেও উঠে আসে রাজ্যের প্রসঙ্গ! যেখানে বিজেপি নেতারা খোলা গলায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে নতুন ইতিহাস লিখবেন তাঁরা। কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখনও তাঁদের পাশে রয়েছেন।

অটলবিহারী বাজপেয়ির পর আদবানিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল একসময়। লক্ষ্য ছিল, গোঁড়া হিন্দুত্ববাদের হাওয়া তোলা। সে গবেষণায় ব্যর্থতার পর বিজেপি অন্তত এটুকু বুঝে গিয়েছে, শুধু হিন্দু রামের পাদুকা বুকে জড়িয়ে রাজত্ব চালানো যাবে না। এদেশে মুসলমানদের বাদ দিয়ে গদি টেকানো দায়। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে— মুসলমানরা ভোটে যে প্রতীকে বোতাম টেপেন, তারাই গদিয়ান হয়। আর তাই ফি বছর মানুষকে নতুন করে একটা লজেনচুস দিয়ে চলেছে বিজেপি। পরমাণু বোমা পরীক্ষা দিয়ে যে চমকের সরকারি-রাজনীতির সূচনা, তা আজও বহমান। আর আমরাও খালি পেটে খানিকক্ষণ লজেন্স চুষে কাঠিটা হাতে নিয়ে আদ্যাখলা খোকার মতো অনাবশ্যক ছুটে ছুটে গা ঘামিয়ে চলেছি।

আরও পড়ুন – ইয়ে হাথ মুঝে দে…ঠাকুর!

সে কারণে আমার ব্যাঙ্ক, বিষয়-সম্পত্তি, ব্যক্তিগত নথি, পারিবারিক তথ্য বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে আচমকা নিঃস্ব হওয়ার পথে পা বাড়িয়ে রেখেছি। ঘরে বসে বাজার, বিল মেটানোর মতো অকর্মণ্যতায় আমরা বেজায় খুশি। আমার টাকা আমার পকেটে নেই, হাওয়ায় উড়ে চলেছে ক্রমশ এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে। কেবলমাত্র সংখ্যা রূপে। বিজ্ঞাপনের পুলিশকে তাই অনলাইন পেমেন্টে ঘুষ নিতে দেখে আমরা হাসি। গর্জে উঠি না। কারণ আমাদের জীবনে দুটোই সত্যি। ছেলেবেলায় কেউ গোমড়া মুখ করে থাকলে বলতাম, কী রে হাস! সে বলত, দুটো পয়সা দে, হাসব। সত্যি, সেদিনও হাতে পয়সা ছিল না। আজও নেই। আমার নোট তোমার ঘরেই বন্দি রয়ে গেল রাজা! তোমার অশ্বমেধের ঘোড়া দৌড়ে দিগ্বিজয় করেই গেল, বলি হলাম শুধু আমরাই!

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Ahmedebad Aircraft Incident | দেরিতে পৌঁছনোয় প্রাণ রক্ষা যাত্রীদের, দেখুন বিগ ব্রেকিং
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | Benjamin Netanyahu | বিগ ব্রেকিং, মোদিকে ফোন নেতানিয়াহুর, কার পাশে দিল্লি?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের মি/সাই/ল হা/না আজারবাইজানে, প্রবল উ/ত্তেজ/না মধ্যপ্রাচ্যে, দেখুন বড় খবর
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | Israel | ইজরায়েলকে সমর্থন আমেরিকার এবার কী হবে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের ব্যালেস্টিক মি/সা/ইল কনভয় হা/ম/লা ইজরায়েলের, বিপুল বি/স্ফো/রণ,দেখুন কী অবস্থা
00:00
Video thumbnail
Air India Incident | আমার চোখের সামনেই...কী হয়েছিল বিমানে? সব জানালেন একমাত্র জীবিত যাত্রী
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | মৃ/ত্যুকে হারিয়ে বাঁচলেন ১ যাত্রী কী বললেন? শুনুন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা
00:00
Video thumbnail
Beyond Politics | দু/র্ঘটনার কারণ কি কি? দু/র্নীতি, যন্ত্র না পাখি?
00:18
Video thumbnail
Beyond Politics | হাজার স্বপ্ন শেষ নিমেষেই, যাত্রা শেষ ঘুমের দেশেই
00:26
Video thumbnail
Colour Bar | কপিলের শোয়ের সাফল্য আমার জন্য
05:49