ইস্তানবুল: তুরস্কে (Turkey) ধ্বংসস্তূপের ভিতরেও কচি-তাজা প্রাণ। ৭ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে। ভেঙে পড়া কংক্রিটের ফাঁকে আটকে রয়েছে। দুচোখে তার অনন্ত বিস্ময়। ভূমিকম্প (Earthquake) ঘর ভেঙেছে, হাসিখুশি সংসার তছনছ করেছে। কিন্তু, ভালোবাসায় এতটুকু চিড় ধরাতে পারেনি। ধ্বংসের নীচেও সেই একরত্তি মেয়েটি তার ছোট্ট ভাইকে একটা হাত দিয়ে আড়াল করে রেখেছে। যাতে ভূমিকম্পের আঁচ ভাইকে স্পর্শ না করতে পারে। আর এই ছবিই গোটা বিশ্বময় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
উদ্ধারকারীরা দুই ভাইবোনকে সাক্ষাৎ ওই মৃত্যুকূপ থেকে উদ্ধারের আগে বেশ কয়েক ঘণ্টা ওখানেই শুয়ে ছিল তারা। কংক্রিটের স্ল্যাবটিতে কোনও কারণে একচিলতে ফাঁক থাকায় বাইরের পৃথিবীর বাতাস তাদের কাছে পৌঁছচ্ছিল। কিন্ত, না ছিল জল, না ছিল খাবার। অতটুকু ফাঁক দিয়ে হয়তো বাচ্চা মেয়েটি কোনওরকমে বেরিয়ে আসতেও পারত। অথচ ওই প্রবল ঠান্ডায় খিদে-তেষ্টা ভুলে ভাইকে আগলে রেখেছিল সে। তাকে ফেলে পালিয়ে বেরিয়ে আসেনি।
আরও পড়ুন: Weather Updates: রাজ্য থেকে তল্পি গোটাচ্ছে শীত, পারদ ওঠানামার খেলায় শরীর খারাপের সম্ভাবনা
রাষ্ট্রসঙ্ঘের (UNO) প্রতিনিধি মহম্মদ সাফা ছবিটি টুইট করে লিখেছেন, ৭ বছরের এই মেয়েটি ভাইয়ের মাথার উপর হাত রেখে তাকে রক্ষা করে গিয়েছে। প্রায় ১৭ ঘণ্টা ওভাবে পড়ে থাকার পর দুজনকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার করার এক মুহূর্ত আগে তোলা ভিডিয়ো নেটিজেন-বাজারে ছড়িয়ে পড়তেই প্রশংসা, বিস্ময়, বীরত্বের অকুণ্ঠ আশীর্বাদ ঝরে পড়েছে তার মাথায়। ধ্বংসের তথা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও মেয়েটি যে সাহস দেখিয়েছে তাকে মাথা ঝুঁকিয়ে সেলাম ঠুকেছেন সকলেই।
While under the rubble of her collapsed home this beautiful 7yr old Syrian girl has her hand over her little brothers head to protect him.
— Vlogging Northwestern Syria (@timtams83) February 7, 2023
Brave soul
They both made it out ok. pic.twitter.com/GrffWBGd1C
অন্য আরেকটি ঘটনায় সিরিয়ার শহরে এক সদ্যোজাত এবং একটি বাচ্চাকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নিয়তির পরিহাসের মতো ভূমিকম্পের সময়ই মেয়েটির জন্ম হয়। বিপর্যয়ে তার মা, বাবা এবং চার ভাইবোন ও এক পিসি সকলেই মারা গিয়েছেন। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার (Syria) জিন্দাইরিসে একটি ধ্বংসস্তূপের নীচে সদ্যোজাত মেয়েটি কাঁদছিল।
ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার এক কাকা তাকে টেনে বের করেন। তিনি বলেন, ওদের বাড়ি ভেঙে পড়ে গিয়েছে শুনে আমরা ছুটে আসি। সেখানে কংক্রিটের চাঁই ও অন্যান্য পাথর সরাতে গিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। খলিল নামে ওই ব্যক্তি বলেন, তখনই খোঁড়াখুঁড়ি করে, ধুলো-ময়লা সরিয়ে বাচ্চাকে বের করি। তখনও মায়ের সঙ্গে ওর নাড়ি লেগেছিল। আমার খুড়তুতো বোন নাড়ি কেটে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ডাক্তাররা জানিয়েছেন, মেয়েটি এখন বিপন্মুক্ত। আপাদমস্তক ধুলো মাখা, রক্তাক্ত অবস্থায় সদ্যোজাত মেয়েটিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছবিও ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে মনে হবে, কোনও এক যুদ্ধক্ষেত্রে সবকিছু বিনাশের পরেও প্রাণের হাতছানি নতুন জীবনের ডাক দিচ্ছে।
শেয়ার করুন