পশ্চিম মেদিনীপুর: নির্দল প্রার্থীকে পুলিশ দিয়ে হারানোর চক্রান্ত হয়েছিল, তৃণমূলের পুরপ্রধানের বেফাস মন্তব্যে ধিক্কার মিছিল দলেরই নেতা কর্মীদের। মেদিনীপুর পুর এলাকার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি প্রকাশ্য সভাতে স্থানীয় নির্দলের কাউন্সিলরের পক্ষে বলতে গিয়ে বেফাস মন্তব্য করেন মেদিনীপুর পুরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান সৌমেন খান। আর তার জেরেই ধিক্কার মিছিল তৃণমূলেরই নেতাকর্মীদের। পুরপ্রধানকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতির বলেন, তাঁর কোনও শারীরিক বা মানসিক সমস্যা আছে কি না, খোঁজ নিতে হবে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা।
সম্প্রতি মেদিনীপুর শহরের তালপুকুর এলাকার একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান। সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই এলাকার নির্দল কাউন্সিলর অর্পিতা নায়েককে হারানোর জন্য পুলিশ দিয়ে বিভিন্ন চক্রান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আপনাদের আশীর্বাদে সে জয়লাভ করেছে। সৌমেনের এই বক্তব্যের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ঘটনার পরই মঙ্গলবার বিকেলে মেদিনীপুর শহর তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব সহ তৃণমূলেরই একদল কাউন্সিলর ধিক্কার মিছিল বের করেন। বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, নির্বাচনে কোনওরকম প্রহসন হয়নি। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে যাঁকে পুরপ্রধান করা হয়েছে, তিনি বোধহয় এখনও কংগ্রেস থেকে এসে তৃণমূল হতে পারেননি। আগে কংগ্রেস দলটাকে শেষ করে দিয়ে এসেছেন। এখন আমাদের তৃণমূলটাকেও শেষ করছেন। এরই প্রতিবাদে আমাদের এই ধিক্কার মিছিল।
এই বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন সৌমেন খান। পুরসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তারপরেই নিজের গড়ে জিতে মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান হন। তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্যের মাঝে তিনি বলেন, এটা সঠিক ভিডিয়ো নয়। এই ধরনের কোনও মন্তব্য করার মানসিকতা আমার নেই। আমাদের দল যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে নির্বাচনে।
এই প্রসঙ্গে খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। তিনি বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। কোথাও কোনও প্রহসন হয়নি। সৌমেন খান আমাদের দলে যোগদান করার পর এখনও সেভাবে দলের শৃঙ্খলাতে আবদ্ধ হতে পারেননি। তাঁর শারীরিক বা মানসিক কোনও সমস্যা আছে কি না, একবার খোঁজ নিতে হবে।এই ঘটনায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি শংকর গুছাইত বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম পুরসভা নির্বাচনে পুলিশ ও গুন্ডা দিয়ে ভোট লুট হয়েছে। আজকের তৃণমূলের চেয়ারম্যান নিজেই মুখে সেটা স্বীকার করলেন। মানুষ সেটা বিচার করবেন।
এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল ফের একবার প্রকাশ্যে এল। কয়েক মাস ধরেই সৌমেন খানের বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই একদল কাউন্সিলর প্রতিবাদ করছিলেন। পুরসভার সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। সৌমেনের এই বেফাঁস মন্তব্যে সেটা ফের একবার প্রমাণিত।