নয়াদিল্লি: লাদাখের গালওয়ানের পর অরুণাচলের তাওয়াং। ভারতীয় সেনা বাহিনীর সঙ্গে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (PLA) বা লাল ফৌজের লড়াই। গালওয়ানে দুই দেশের বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছিল ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের। জখম হয়েছিলেন অনেকে। ভারতের বাহিনীর হাতে মার খেয়েছিল চীনের বাহিনীও। মারাও গিয়েছেন অনেক জওয়ান। তবে গালওয়ানের মতো তাওয়াংয়ে দুই বাহিনীর সংঘর্ষ বড় আকার নেয়নি। ভারত সরকার দাবি করেছে, জওয়ানরা কড়া হাতে মোকাবিলা করেছেন চীনের বাহিনীকে। দুই দলের মধ্যে সামান্য হাতাহাতি হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়লেও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিন্তু চীনের উপর ভারতের নির্ভরতা বাড়ছেই। একদিকে ভারত সরকার চীনের উদ্দেশে হুমকি ছাড়ছে, এক ইঞ্চি জমি ছাড়া হবে না। গালওয়ান পরবর্তী সময়ে চীনের একাধিক অ্যাপ ভারত সরকার নিষিদ্ধ করে দিল। কেন্দ্রে্র দাবি ছিল, ওইসব অ্যাপের মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য পাচার করা হচ্ছে। বলা হল, ভারত আত্মনির্ভর হবে। অথচ সংসদে দেওয়া সরকারি বিবৃতিতে স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় সরকার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের উপর কতটা নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar: ৩টে দল, ৩টে আলাদা ফর্মুলা, কোন ফর্মুলা কাজে দেবে? পর্ব— ৩
বাস্তব ঘটনা হল, প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরশীল ভারতের ডাক দিলেও ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে (Manufacturing Industries) কিন্তু ভারতের তুলনায় চীন (China) অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের ইলেকট্রনিকস বাজারের (India’s Electronics Market) ৭০ শতাংশই চীনের দখলে। চীনের তৈরি সস্তা খেলনা থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর আলো, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল, ল্যাপটপে ছেয়ে গিয়েছে ভারতের বাজার।
ব্যবসা বাণিজ্য প্রসঙ্গেই উঠে আসছে ট্রেড ডেফিসিটের কথা। বিষয়টা কী? সোজা কথায় আমদানি এবং রফতানির (Import and Export) মধ্যে ফারাকটাই হল ট্রেড ডেফিসিট (Trade Deficit)। ধরা যাক, আমরা ১০০ টাকার জিনিস রফতানি করলাম, আর ৭০ টাকার দ্রব্য আমদানি করলাম। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ট্রেড ডেফিসিট প্লাস ৩০ টাকা। আর ৭০ টাকা রফতানি, ১০০ টাকার আমদানি হলে সেটা হবে মাইনাস ডেফিসিট। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কখনও পজিটিভ, কখনও নেগেটিভ ডেফিসিট হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হল, মাইনাস ডেফিসিট সমানেই বাড়তে থাকা।
২০২০ সালে গালওয়ান পরবর্তী সময়ে চীনের টিকটক ব্যানের (Tiktok Ban) পর আশা করা গিয়েছিল, চীনের সঙ্গে ট্রেড ডেফিসিট কমবে। কিন্তু সরকারি তথ্য কী বলছে, দেখা যাক। ২০২১ সালে আমরা চীন থেকে আমদানি করেছি ৯৭.৫২ বিলিয়ন ডলারের সামগ্রী, রফতানি করেছি ২৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি অর্থের জিনিস। সে বছর আমাদের মাইনাস ডেফিসিট ৬৯.৩৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে আমাদের আমদানির পরিমাণ ছিল ৮৯ বিলিয়ন ডলার। রফতানি হয়েছে মাত্র ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি অর্থবর্ষে ট্রেড ডেফিসিট ১০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি থাকবে।
এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে আর মোদির মেক ইন ইন্ডিয়ার স্বপ্ন কতটা অগ্রসর হল, সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।