নয়াদিল্লি: ২০১৯ সালে অযোধ্যার মামলায় চূড়ান্ত রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এবিষয়ে যাবতীয় বিতর্কের অবাসন ঘটিয়ে হিন্দুদের হাতে বিতর্কিত জমির মালিকানা তুলে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। সেই রায় নিয়ে বড় মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টেরই প্রাক্তন বিচারপতি। অল ইন্ডিয়া লয়ার ইউনিয়ন (All India Lawyers Union) আয়োজিত এক জাতীয় সম্মেলনে (National Convention) প্রাক্তন বিচারপতি ভেঙ্কট গোপাল গৌড়া (Former Justice of SC, Venkate Gopala Gowda) মন্তব্য করেছেন, বিতর্কিত রাম জন্মভূমি প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষ আদালতের অযোধ্যা রায় দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলিকে (right-reactionary forces) জ্ঞানবাপী (Gyanvapi) এবং দেশের অন্যান্য মসজিদগুলির (Mosques) উপর তাদের দাবি জোরদার করে তোলার মতো হাত শক্ত করে দিয়েছে, যা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের (Republic of India) জন্য বিপজ্জনক।
আরও পড়ুন: NASA Satellite: মহাকাশ থেকে মাটিতে ভেঙে পড়ছে নাসার পুরনো স্যাটেলাইট!
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর পাঁচ-বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অযোধ্যার মামলার চূড়ান্ত রায় দিয়েছিল। বিচারপতিদের ওই বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ (Chief Justice of India, Ranjan Gogoi)। দেশের শীর্ষ আদালত রাম জন্মভূমি বিতর্কের অবসান ঘটাতে এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছিল। সেই রায়ের ভিত্তিতে বিতর্কিক ভূমিতে হিন্দুদের রাম মন্দির তৈরির (Construction of the Ram Temple) অনুমতি দেওয়া হয় এবং দেশের মুসলিমদের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে মসজিদ নির্মাণের জন্য বিকল্প জমি বরাদ্দ করা হয় অযোধ্যাতেই। তবে সেইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এটাও মনে করে দিয়েছিল, যে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যেভাবে বাবরি মসজিদ (Babri Masjid) ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তা পুরোপুরি বেআইনি কাজ (Illegal Act) ছিল।
এখানে উল্লেখ্য, দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গগৈ নরেন্দ্র মোদি সরকারের (Narendra Modi Government) পক্ষে রায় দিয়েছিলেন রাফালে কেলেঙ্কারি মামলায় (Rafale Scam Case)। বিচারপতি গগৈ অবসর নেওয়ার পর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাঁকে রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) আসনও দেয়। সমালোচক মহলের বক্তব্য, সরকারের পক্ষে রায় দিয়ে ক্লিনচিট দেওয়ার কারণেই তাঁকে রাজ্যসভায় সদস্যপদ দিয়েছে কেন্দ্র।
এদিকে, ২০১৬ সালে দেশে নোটবন্দি ঘোষণা করেছিল মোদি সরকার। সেই ঘটনার ছয় বছর কেটে গেলেও, আজও সমালোচিত হয় মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি বিচারপতি বি ভি নাগারত্না (BV Nagarathna) নরেন্দ্র মোদি সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে বেআইনি কাজ বলে অভিহিত করেছেন। কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে এই সাহস দেখানোর জন্য প্রাক্তন বিচারপতি গৌড়া প্রশংসা করেছেন মহিলা বিচারপতি নাগারত্নার। এছাড়া ধারা ৩৭০ বাতিল, নির্বাচনী বন্ড বাতিল সহ অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট যে পথে হাঁটছে, তা নিয়েই জোর সওয়াল করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি।
বিচারপতি গৌড়া বলেছেন, “বিগত আট বছরে সুপ্রিম কোর্টের ট্র্যাক রেকর্ড খুবই হতাশজনক। এটা খুবই খারাপ যে সুপ্রিম কোর্ট ধারা ৩৭০, নির্বাচনী বন্ড বাতিলের সাথে জড়িত মামলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনও দ্বিধাবোধ করেনি সুপ্রিম কোর্ট।”