বীরের সংবর্ধনায় দেশে ফিরলেন ইরানি অ্যাথলেট ইলনাজ রেকাবি। বুধবার ইরানের সময়ে ভোররাত পৌনে চারটে নাগাদ তিনি তেহরানে নামেন। তার আগেই রাত থেকে সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার জনতা। বিমানবন্দর থেকে বাইরে পা রাখতেই জনতার হর্ষধ্বনিতে গোটা বিমান ওঠানামার শব্দও চাপা পড়ে যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে একটি গাড়িতে উঠে চলে যান তিনি। ইরানি নেটিজেনরা রেকাবিকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের দেওয়াল ভরিয়ে দিয়ে হিজাব-বিরোধী লড়াইকে আরও চাঙ্গা করে দিয়েছেন।
একজন টুইটে লিখেছেন, একদিন খোমেইনি ঘোষণা করেছিলেন, মেডেলের থেকেও ইরানি অ্যাথলেটদের হিজাব পরাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, ইলনাজ জবরদস্তি হিজাব পরার ফরমানকে অগ্রাহ্য করে খোমেইনিকে বিদ্রুপ করেছেন। প্রসঙ্গত, গত রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে হিজাব ছাড়াই খেলতে নামেন ইলনাজ।
আরও পড়ুন: Photojournalist Stopped From Travelling: গর্বের সম্মান পেয়েও আর পুলিৎজার পুরস্কার নিতে যাওয়া হল না
৩৩ বছরের রেকাবি ইরানি সরকারের ঘোরতর বিরোধী। এশিয়ান ক্লাইম্বিং চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি হিজাব ছাড়াই নামেন। তার পর থেকেই তিনি ‘নিখোঁজ’ ছিলেন বলে খবর রটে যায়। পরে জানা যায়, ইরানের ক্লাইম্বিং ফেডারেশনের প্রধান রেজা জারেই ওই প্রতিযোগীকে সিওলস্থিত ইরানি দূতাবাসের বাড়িতে বুঝিয়েবাঝিয়ে নিয়ে গিয়ে বন্দি করতে সাহায্য করেন। তার আগেই তাঁকে ওই নির্দেশ পাঠান দেশের অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান মহম্মদ খোস্রাভিভাফা। তাঁকে আবার এই নির্দেশ দেয় ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড কোর। তরুণী প্রতিযোগী রেকাবিকে নিরাপদে দেশের মাটিতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তাঁকে দূতাবাসে নিয়ে যান।
সংবাদমাধ্যমকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ইলনাজ যে হিজাব ছাড়াই ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন, তা একমাস আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। তিনি নিজেও জানতেন, দেশের আইন ভঙ্গ করেই প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছেন। তা সত্ত্বেও ইলনাজ খেলার শেষে অন্য দেশের কাছে আশ্রয়ের আর্জি জানাননি। কারণ, তাঁর স্বামী ইরানেই রয়েছেন। ইরানের যে দল সিওলে গিয়েছিল, তাদের ফেরার সূচি ছিল আলাদা। তাঁদের মধ্যে কেবলমাত্র এই তরুণীকেই তুলে নিয়ে আসা হয় দূতাবাসে।
সন্দেহ করা হচ্ছে, দেশে ফিরলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। যদিও এর আগেই এক ‘সন্দেহজনক’ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে রেকাবিকে তাঁর কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে দেখা গিয়েছে। তিনি লিখেছেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনা ঘটে গিয়েছে। যার জন্য তিনি ইরানের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। কিন্তু তাঁর ওই পোস্ট নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছে, ওটা তাঁর নিজের লেখা নাকি অন্য কারও তা জানা যায়নি।