ওয়াশিংটন: ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী যুগে মুক্ত বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতা (Post-Cold War Free Trade and Economic Inter-Dependence) কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে (Authoritarian Regimes) মজবুত করে তুলেছে এবং সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সমমনোভাবাপন্ন গণতান্ত্রিক দেশের উচিত এর মোকাবিলায় নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা অর্থাৎ নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার (New World Order) তৈরি করা। ওয়াশিংটনে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাজিড (Center for Strategic and International Studies)-এ ভাষণ দেওয়ার সময় জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ইয়াসুতোশি নিশিমুরা (Japan’s Minister of Economy, Trade and Industry Yasutoshi Nishimura) এই কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “কর্তৃত্ববাদী দেশগুলি অর্থনৈতিক এবং সামরিক উভয় দিক থেকেই প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করেছে।” এরপর তিনি বলেছেন, “আমাদের অবশ্যই এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের মৌলিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে তৈরি হবে।”
আরও পড়ুন: Unemployment Rate: মোদি সরকারের ‘আচ্ছে দিন’, জনসংখ্যার বিচারে বেকারত্বের হিসাবটা জেনে নিন
আগামী সপ্তাহে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা (Japanese Prime Minister Fumio Kishida) ওয়াশিংটনে আসছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি। এমনটাই কথা রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব (Russia-Ukraine Conflict), উত্তর কোরিয়া (North Korea), তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের ঝামেলা (China’s Problem with Taiwan), এই সমস্ত বিষয় আলোচনার অঙ্গ হতে চলেছে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সফরের। এই সফরের আগে দুই দেশের প্রতিরক্ষা এবং বিদেশমন্ত্রীরাও (Defence and Foreign Ministers) আলোচনায় বসবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দুই দেশ জাপানের ও চীনের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক (Political Relation) কোনও সময়ই ভালো নয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) যে সম্পর্ক ছিল, আধুনিককালে দুই দেশ তার থেকে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। জাপানের একসময়কার বিরোধী পক্ষ এখন অন্যতম মিত্রপক্ষ। চীনের সঙ্গে টক্কর দিতে হলে আমেরিকাকে পাশে চাই জাপানের। খবরে প্রকাশ, জাপানি প্রধানমন্ত্রী কিশিদা তাঁর দেশের নতুন নিরাপত্তা নীতি নিয়ে আলোচনা করবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের (USA and Japan) সাম্প্রতিক সুসম্পর্কের আরও একটা কারণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও শক্তি প্রদর্শনের দিক থেকে রাশিয়া ও আমেরিকা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী, ক্ষমতার দুই মেরু। এখন জাপানের ভয় হল, রাশিয়া যেভাবে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে হাতিয়ার উঁচিয়ে ইউক্রেনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাতে ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) দেশ যদি সফল হয় এবং শক্তি সম্পদ ও উৎপাদন সরবরাহ শৃঙ্খল (Energy Resources and Manufacturing Supply Chains) নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়, তাহলে আগামী দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, গোটা ইউরোপ মহাদেশ এবং যেসব দেশ তাদের কূটনীতি ও সামরিক নীতির বিরোধী, তাদের টুঁপি টিপে ধরবে রাশিয়া। আর এই কাজে তাদেরকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে চীন।
ভারতের জন্য কী সমস্যা হতে পারে?
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞমহলের আশঙ্কা ও যুক্তি, রাশিয়া এবং চীনের সম্ভাব্য আঁতাতের (Russia-China Nexus) মাঝে ভারতও চাপে পড়বে। কারণ, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রের সঙ্গে ভারত কূটনৈতিক স্তরে বৈদেশিক সম্পর্ক (Foreign Policy in Diplomatic Level) ভালো রেখে রাখলেও, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনও কালেই আশাব্যঞ্জক নয়। সম্প্রতি এই সম্পর্ক আরও তলানিতে নেমেছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের অতীত দিনের মতো ঘনিষ্ঠতা আর নেই। তার কারণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অতিরিক্তি ঘনিষ্ঠতা। এই অবস্থায় রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন সফল হলে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে, ভারতের জন্যও সেটা খুব একটা সুখকর হবে না।