মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বেই কি কংগ্রেসকে (Congress) বাইরে রেখে আঞ্চলিক দলগুলির (Regional Parties) বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে উঠবে লোকসভা ভোটের (Parliament Poll) আগে? সম্প্রতি তৃণমূলনেত্রীর (TMC Leader) ততপরতা সেদিকেই ইঙ্গিত (Indication) দিচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না। তৃণমূলনেত্রীর এই ততপরতা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। আদৌ সেই বিজেপি বিরোধী জোট হবে দানা বাঁধবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে সম্প্রতি কংগ্রেস এবং তৃণমূলের (Congress and TMC) সম্পর্ক যে তিক্ততায় গিয়ে পৌঁছেছে, তাতে এই দুই দলের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। দুই দলের অনেক প্রবীণ নেতাই মানছেন, এই ফাটল আর জোড়া লাগা সম্ভব নয়।
আঞ্চলিক দলগুলির সম্ভাবনা নিয়ে গত সপ্তাহেই তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে গিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। মমতার সুরেই অখিলেশও কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির ঐক্যের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সমাজবাদী পার্টি দিদির সঙ্গেই থাকবেন। তবে তাঁর এই আশ্বাস শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকর হবে, সেটাও প্রশ্নের মুখে। কারণ সমাজবাদী পার্টির অতীত সকলেরই জানা। শুক্রবার তৃণমূলনেত্রী ভুবনেশ্বরে বৈঠক করবেন বিজু জনতা দলের সু্প্রিমো তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে। সেখানেও স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় রাজনীতি এবং আঞ্চলিক দলগুলির শক্তি নিয়ে কথা হবে। তবে নবীনের দল এখনও জাতীয় স্তরে এনডিএ-র শরিক। মমতা যদি তাঁকে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রস্তাব দেন আঞ্চলিক দলগুলির নেতৃত্বে, নবীন সেই প্রস্তাব মানবেন কি না, সন্দেহ আছে। যদিও নবীনের সঙ্গে মমতার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক।
আরও পড়ুন:Upper Primary | চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ ঘিরে ধুন্ধুমার বিধাননগরে
ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় ফিরেই মমতা বৈঠক করবেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর সঙ্গে। শুক্রবার কুমারস্বামী কলকাতায় আসছেন। সেদিনই তাঁর সঙ্গে মমতার বৈঠক হবে। সেখানেও কংগ্রেসকে বাইরে রেখে আঞ্চলিক দলগুলিকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী জোটের কথা উঠবে। নিজের রাজ্যে জোট রাজনীতি নিয়ে কুমারস্বামীর তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে জেডিএস কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে সরকার গড়েছিল। কিন্তু সেই জোট বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দুই দলের মধ্যে নানা ইস্যুতে গোলমাল লেগে ছিল। তার সুযোগ নিয়ে জোটে ভাঙন ধরিয়ে এমএলএ কিনে বিজেপি সরকারটাই ভেঙে দেয়। পরে তারা সরকার গড়ে। জে়ডিএসের অনেক বিধায়ক বিজেপিতে চলে যান। তারপর থেকে কুমারস্বামী জানিয়ে দিয়েছেন, কর্নাটকে তাঁরা একাই লড়াই করবেন। কংগ্রেসও বলেছে, আমরা একা লড়ব। তবে কংগ্রেস এবার কর্ণাটকে জিতে দাক্ষিণাত্য বিজয়ে মরিয়া।
অখিলেশের সঙ্গে মমতার কথা হয়েছে। বিজু জনতা দলের নবীনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার কথা হবে তৃণমূলনেত্রীর। পরের দিন তাঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন জে়ডিএস নেতা কুমারস্বামী। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে দেশের তিন প্রান্তের তিন নেতার সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর আলোচনা জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই আলোচনার মাধ্যমেই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী জোট হয়ে যাবে, এটা ভাবা বোধহয় বাড়াবাড়ি।
লন্ডনে করা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর মন্তব্য এবং আদানি-কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি ঘিরে লোকসভায় এক অদ্ভুত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তা নিরসনের কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৬টি বিরোধী দল যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবিতে এককাট্টা। সেই দলে আবার তৃণমূল নেই। তারা তাদের মতো করে সংসদের ভিতরে বাইরে লড়াই চালাচ্ছে। বিজেপির দাবি, লন্ডনে দেশকে অপমান করার জন্য রাহুলকে ক্ষমা চাইতেই হবে। কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, সংসদে রাহুলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এককাট্টা বিরোধীদের দাবি, যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতেই হবে। এই পরিস্থিতিতে আগামিদিনে কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি বিরোধী কোনও জোট গড়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে অনেক কিন্তু রয়েছ। তার মধ্যেই তৃণমূলনেত্রী বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে সংহত করার চেষ্টা করছেন। তাই বা কম কী?