নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের (BJP Government) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ (Allegation)। অভিযোগকারী আর কেউ নন জম্মু-কাশ্মীরে শেষ রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক (Satya Pal Malik, Last Governor of J&K)। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি নিরাপদেই এটা বলতে পারি, দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর খুব একটা সমস্যা নেই।” সত্যপাল এটাও বলেছেন, কাশ্মীর উপত্যকার পুলওয়ামাতে (Pulwama, Kashmir Valley) যে সন্ত্রসাবাদী হানা হয়েছিল, সে সম্পর্কে তাঁকে কোন কথা বলতে দেননি মোদি। দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রাক্তন রাজ্যপালের অভিযোগ, তাঁর মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সারা দেশ যখন ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day) পালনে ব্যস্ত, তখন সকালের দিকে জন্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে (Jammu–Srinagar National Highway ) নিরাপত্তা কর্মীদের (Security Personnel) উপর সন্ত্রাসবাদী হানা হয়। আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ৪০ জন জওয়ান (Jawan) নিহত হন এবং ৩৫ জন আহত হয়েছিলেন। সে বছরই ধারা ৩৭০ বাতিল (Abrogation of Article 370) করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (Special Status) মুছে ফেলা হয় চিরতরে। তৎকালীন অবিভক্ত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন সত্যপাল। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদি কাশ্মীর সম্পর্কে অজ্ঞাত (Ill-informed) এবং অজ্ঞ (Ignorant) ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে নাকি তাঁকে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (Union Home Ministry) ত্রুটি কারণেই জওয়ানদের উপর হামলা হয়েছে, সেই কথা তিনি যেন কাউকে না বলেন।
আরও পড়ুন: Amritpal Singh | অমৃতপাল সিংয়ের ঘনিষ্ঠ জোগা সিং গ্রেফতার
ওই সাক্ষাৎকারে কোনও রকম রাখঢাক না করেই মালিক বলেছেন, চার বছর আগে পুলওয়ামাতে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের কনভয়ে (Central Reserve Police Force – CRPF Convoy) যে হামলা হয়েছিল, তা ভারতীয় ব্যবস্থা (Indian System), বিশেষ করে সিআরপিএফ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অযোগ্যতা (Incompetence) এবং গাফিলতির (Negligency) কারণেই ঘটেছে। সেই সময় রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সেদিনের সেই ঘটনার কথা মনে করে মালিক বলেছেন, আহত জওয়ানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সিআরপিএফ বিমান চেয়েছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিল। তিনিও এই অভিযোগও এনেছেন, সংশ্লিষ্ট রুটের স্যানিটাইজেশন (Sanitization) প্রক্রিয়াও কার্যকরভাবে করা হয়নি
পুলওয়ামা হামলার খবর পাওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী মোদি করবেট পার্ক (Corbett Park) থেকে তাঁকে ফোন করেছিলেন। সেসময় তিনি বিভিন্ন ত্রুটির কথা তুলেও ধরেছিলেন। প্রধামন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, কাউকে যেন এই সমস্ত ত্রুটির কথা তিনি যেন না বলেন। শুধু তাই নয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও (NSA Ajit Doval) তাঁকে চুপ থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন। মালিকের দাবি, তিনি নাকি তখনই উপলব্ধি করেছিলেন, এবিষয়ে যাবতীয় দোষ ও দায় পাকিস্তানের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি নির্বাচনী ফায়দা তুলবে। তাঁর বক্তব্য, পুলওয়ামার ঘটনা গোয়েন্দা ব্যর্থতার স্পষ্ট নিদর্শন। ৩০০ কিলোগ্রাম আরডিএক্স বিস্ফোরক (RDX Explosives) নিয়ে পাকিস্তান (Paksitan) থেকে একটি গাড়ি এসে জম্মু-কাশ্মীরের গ্রামে রাস্তায় ১০-১৫ দিন ধরে অবাধে ঘুরে বেড়াল, অথচ কেউ টেরই পেল না।
সত্যপাল মালিক বলেছেন, তিনি সেই সময় মেহবুবা মুফতিকে (Mehbooba Mufti, Former CM of J&K) নতুন সরকার গড়তে দেননি। মেহবুবা দাবি করেছিলেন, ৮৭ সদস্যের মধ্যে ৫৬ জন তাঁর পক্ষে আছেন। কিন্তু তাঁর মনে হয়েছিল, মিথ্যে কথা বলছিলেন রাজ্যের শেষ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণেই তিনি ২০১৮ সালের নভেম্বরে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন। মেহবুবা দাবি করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে ন্যাশনাল কনফারেন্সের (National Conference) মতো একাধিক দল রয়েছে। অথচ ওই সমস্ত দলের নেতারাই সত্যপালকে অনুরোধ করেছিলেন বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার জন্য।
সত্যপালের আরও অভিযোগ, জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় বিজেপি-আরএসএস নেতা রাম মাধব (BJP-RSS leader Ram Madhav) তাঁকে হাইড্রো-ইলেক্ট্রিক স্কিম (hydro-electric scheme) এবং রিলায়েন্স ইনসিওরেন্স স্কিম (Reliance insurance scheme) উতরে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এর জন্য তাঁকে ৩০০ কোটি টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি সরাসরি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “আমি কোনও ভুল কাজ করব না”।